সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবারও আদালতে জমা পড়েনি। এ নিয়ে এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১১৯ বার পেছানো হলো।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিন ছিল। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পক্ষ থেকে আজ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।

আগামী ১১ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন দিন ঠিক করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান।

এক যুগ পর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হয়। গত বছরের ৪ নভেম্বর মামলার আগের তদন্ত সংস্থা র‍্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র বুঝে নিয়েছে পিবিআই। সংস্থাটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।

মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.

আজিজুল হক। তিনি প্রথম আলোকে সে সময় বলেছিলেন, ‘র‍্যাবের কাছ থেকে মামলাসংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র বুঝে পেয়েছি। তদন্তকাজ নতুন করে শুরু করেছি।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় এই সাংবাদিক দম্পতি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।

আরও পড়ুনসাগর–রুনির বাসার নিরাপত্তারক্ষী এনামুল ও পলাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে টাস্কফোর্স১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র‍্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।

২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে র‍্যাব আদালতকে জানিয়েছিল, সাগর-রুনির বাসা থেকে জব্দ করা আলামতের ডিএনএ পর্যালোচনায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষের উপস্থিতি মিলেছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুই পুরুষকে শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইনডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসেস (আইএফএস) ল্যাবে ডিএনএ পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ছবি প্রস্তুতির চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুনসাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর: ৬ বছর মামলার কার্যত কোনো তদন্ত হয়নি ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ ল্যাবের ফলাফল জেনেছে র‍্যাব। তবে অজ্ঞাতপরিচয় দুজনের ডিএনএ থেকে ছবি তৈরির সন্তোষজনক ফল আসেনি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে দুজন জামিনে, বাকি ছয়জন কারাগারে।

৩০ সেপ্টেম্বর সাগর ও রুনি হত্যা মামলার তদন্তে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত শেষে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুনএক যুগেও সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত শেষ না হওয়ায় সাংবাদিকদের ক্ষোভ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪আরও পড়ুনসাগর–রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ১১৮ বার পেছাল২১ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত র ড এনএ

এছাড়াও পড়ুন:

র‍্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লুটের মামলা ১৩ বছরেও শেষ হয়নি

চট্টগ্রামের আনোয়ারার তালসরা দরবার শরিফ থেকে কোটি টাকা লুটের অভিযোগে র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে করা ডাকাতি মামলার বিচার ১৩ বছরেও শেষ হয়নি। আসামি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেওয়ায় এখনো শুরু হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ। মামলার দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের সাবেক অধিনায়ক (বরখাস্ত) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে করা ডাকাতির মামলাটি পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আসামি জুলফিকারের আবেদনে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাড়ে সাত বছরের বেশি সময় ধরে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা যাচ্ছে না। এর আগেও উচ্চ আদালতের আদেশে মামলার কার্যক্রম চার বছর স্থগিত ছিল।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, জুলফিকারের নেতৃত্বে দরবারের টাকাগুলো লুট করা হয়। ওই টাকায় ঢাকায় ফ্ল্যাট ও জমি নেন তিনি। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন র‌্যাবের সোর্স (তথ্যদাতা) দিদারুল আলম ও তরুণ বসু; উপসহকারী পরিচালক আবুল বাসার; জুলফিকারের গাড়িচালক হাসানুজ্জামান; দেহরক্ষী ইব্রাহিম। তরুণ কুমার বসু তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, জুলফিকার আলী কোনো প্রকার জব্দ তালিকা প্রস্তুত না করেই দরবার থেকে অর্থ নিয়ে যান। মো. হাসানুজ্জামান তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, লুট করা অর্থ জুলফিকার তাঁর বাসায় নিয়ে গেছেন।

২০১১ সালের ৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের আনোয়ারার তালসরা দরবার শরিফ থেকে ২ কোটি ৭ হাজার টাকা লুট করার অভিযোগ ওঠে র‍্যাবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ২০১২ সালের ১৩ মার্চ র‍্যাব-৭ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাবেক অধিনায়ক (বরখাস্ত) জুলফিকার আলী মজুমদারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় ডাকাতির মামলা করেন দরবার শরিফের গাড়িচালক মোহাম্মদ ইদ্রিস।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল জুলফিকার আলীকে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে তাঁকে র‍্যাব চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আত্মগোপন করেন তিনি। একই বছরের ৩ মে ঢাকার রমনা থানা এলাকায় এক বন্ধুর বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আনোয়ারা থানার পুলিশ। তিনি এখন এই মামলায় জামিনে আছেন।

আদালত সূত্র জানায়, জুলফিকার আলীসহ সাতজনকে আসামি করে ২০১২ সালের ২৮ জুলাই আনোয়ারা থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুস সালাম চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন র‍্যাব-৭-এর তৎকালীন সদস্য ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (বাধ্যতামূলক ছুটিতে) শেখ মাহমুদুল হাসান, উপসহকারী পরিচালক আবুল বাসার, উপপরিদর্শক (এসআই) তরুণ কুমার বসু, সোর্স দিদারুল আলম, মানব বড়ুয়া ও আনোয়ার মিয়া। তাঁরা সবাই জামিনে রয়েছেন।

আসামিরা ডাকাতিকে ধামাচাপা দিতে এত বছর পর ঘটনাটি রাজনৈতিক দাবি করছেন। এটি রাজনৈতিক কোনো ঘটনা নয়। ডাকাতি হয়েছে সবাই জানেন। আশপাশের লোকজন দেখেছেন। ওই সময়ে পাঁচ আসামির জবানবন্দি এবং আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে ডাকাতির ঘটনা।মো. ইদ্রিস, মামলার বাদী

অভিযোগপত্রে বলা হয়, জুলফিকারের নেতৃত্বে দরবারের টাকাগুলো লুট করা হয়। ওই টাকায় ঢাকায় ফ্ল্যাট ও জমি নেন তিনি। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন র‌্যাবের সোর্স (তথ্যদাতা) দিদারুল আলম, তরুণ বসু; উপসহকারী পরিচালক আবুল বাসার; জুলফিকারের গাড়িচালক হাসানুজ্জামান; দেহরক্ষী ইব্রাহিম। তরুণ কুমার বসু তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, জুলফিকার আলী কোনো প্রকার জব্দ তালিকা প্রস্তুত না করেই দরবার থেকে অর্থ নিয়ে যান। মো. হাসানুজ্জামান তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, লুট করা অর্থ জুলফিকার তাঁর বাসায় নিয়ে গেছেন।

এদিকে ২০১২ সালের নভেম্বরে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে এ মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ নেন। ২০১৬ সালের আগস্টে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর মামলাটি আবার সচল হয়। ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জুলফিকারসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। ২৩ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ। তবে অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে আসামি জুলফিকার আলী উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রমের স্থগিতাদেশের আবেদন করেন। আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। শেষ গত বৃহস্পতিবার শুনানি হয়, তবে আদেশ হয়নি।

জানতে চাইলে আসামি জুলফিকার আলীর আইনজীবী মোহাম্মদ আশেক-ই-রসুল প্রথম আলোকে বলেন, তালসরা দরবারে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছিলেন তৎকালীন র‌্যাব কর্মকর্তা জুলফিকার আলী। চার মাস পর র‌্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নির্দেশমতো গুম-খুনে রাজি না হওয়ায় জুলফিকারের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা সাজানো হয়। তিনি কোনো টাকা লুট করেননি। এক প্রশ্নের উত্তরে আইনজীবী বলেন, তৎকালীন সময়ে চাপে পড়ে আদালতে জবানবন্দি ও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

মামলার বাদী ও তালসরা দরবারের গাড়িচালক মো. ইদ্রিস এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, আসামিরা ডাকাতিকে ধামাচাপা দিতে এত বছর পর ঘটনাটি রাজনৈতিক দাবি করছেন। এটি রাজনৈতিক কোনো ঘটনা নয়। ডাকাতি হয়েছে সবাই জানেন। আশপাশের লোকজন দেখেছেন। ওই সময়ে পাঁচ আসামির জবানবন্দি এবং আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে ডাকাতির ঘটনা। সরকারি বিভিন্ন সংস্থাও বিষয়টি জানে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করা হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • র‍্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লুটের মামলা ১৩ বছরেও শেষ হয়নি