মহামূল্যবান বিরল খনিজে ভরপুর চীনের উত্তরাঞ্চল, তারপরও কেন বিপদে মানুষ
Published: 8th, July 2025 GMT
চীনের উত্তরে ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের বায়ান ওবো শহরে উন্মুক্ত খনির কিনারায় দাঁড়িয়ে সামনে তাকালে শুধুই ধূসর, ক্ষতবিক্ষত এক বিস্তীর্ণ ভূমি চোখে পড়ে। আর সেখানকার গভীর খনিগুলোর ওপরে উড়তে থাকে কালো ধুলা। অথচ পুরো এলাকাটি একসময় সবুজ তৃণভূমি ছিল। যুগের পর যুগ ধরে মাটি কেটে তন্ন তন্ন করে অমূল্য সম্পদ খোঁজার কাজ চালাতে গিয়ে এলাকাটির এমন দশা হয়েছে।
যাঁরা এই শহরের নাম কখনো শোনেননি, তাঁরা জেনে রাখবেন, বায়ান ওবো না থাকলে আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রা হয়তো থমকে যাবে। শহরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে রয়েছে পৃথিবীর মোট বিরল খনিজ ধাতুর প্রায় অর্ধেক ভান্ডার। মুঠোফোন, ব্লুটুথ স্পিকার, কম্পিউটার, টিভির স্ক্রিন, বৈদ্যুতিক গাড়িসহ আমাদের জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত প্রায় সব জিনিসের জন্যই এসব বিরল খনিজ ধাতু বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি বিরল খনিজ ধাতু খুঁজে বের করছে এবং তা শোধন করছে। আর এ কারণে চীন এখন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। যেমন সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষি করার সময় তারা এ কারণে শক্ত অবস্থানে থাকতে পেরেছে। তবে এসব খনি চালাতে গিয়ে চীনকে অনেক মূল্য চোকাতে হয়েছে।
এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য বিবিসির প্রতিনিধিরা চীনের দুটি বড় দুর্লভ ধাতুর খনি এলাকায় গিয়েছিলেন। এ দুটি এলাকা হলো—উত্তরের বায়ান ওবো, আর দক্ষিণের জিয়াংসি প্রদেশের গানঝৌ। তাঁরা সেখানে গিয়ে মানুষের তৈরি কিছু কৃত্রিম হ্রদ দেখতে পান। এসব হ্রদ তেজস্ক্রিয় বর্জ্যে ভরা। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, অতীতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া এবং শিশুর জন্মগত ত্রুটির মতো সমস্যাগুলোর সঙ্গে সেখানকার পানিদূষণ ও মাটিদূষণের সম্পৃক্ততা ছিল।
১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এসব উন্মুক্ত খনিতে এত বেশি উত্তোলনের কাজ হয়েছে যে সেখানে বর্জ্য পদার্থের বিশাল স্তূপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ২০১৩ সালের মধ্যে মূল খনির পশ্চিম দিকে আরও নতুন নতুন উন্মুক্ত খনি চালু হয়। গত ২৫ বছরে খনির এলাকা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যত বেশি মাটি কাটা হয়েছে, ততই বর্জ্যের হ্রদ বা দূষিত পানি জমার জায়গাও বেড়েছে।
আরও দক্ষিণে গানঝৌ শহরের খনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের চূড়ায় বিষাক্ত বর্জ্যে ভরা গোল গোল কংক্রিটের পুকুর। এসব পুকুরের বেশির ভাগই খোলা অবস্থায় আছে—যেখান থেকে বৃষ্টির পানি বা বাতাসে দূষণ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
এসব পুকুরকে বলা হয় ‘লিচিং পন্ড’। খনির শ্রমিকেরা এখানকার মাটির নিচে বিপুল পরিমাণে অ্যামোনিয়াম সালফেট, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড এবং আরও নানা ধরনের রাসায়নিক ঢুকিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে তারা বিরল বা দুর্লভ ধাতুগুলোকে চারপাশের মাটি থেকে আলাদা করে। আর এ পদ্ধতিকেই বলা হয় লিচিং।
একসময় এই এক কাউন্টিতেই হাজারের বেশি খনি ছিল। এর মধ্যে কিছু খনি অবৈধ ছিল। এক খনি থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ উত্তোলনের কাজ শেষ হওয়ার পর কোম্পানিগুলো আরেক খনিতে চলে যেত। ২০১২ সালে চীনা সরকার এতে হস্তক্ষেপ করে। তারা নিয়ম কড়া করে দেয় এবং খনির লাইসেন্স দেওয়া অনেক কমিয়ে দেয়। তবে তত দিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।
গত কয়েক দশকের গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্লভ ধাতুর খনির সঙ্গে বন উজাড়, মাটির ক্ষয় এবং নদী ও কৃষিজমিতে রাসায়নিক পদার্থ মিশে যাওয়ার ঘটনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।গত কয়েক দশকের গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্লভ ধাতুর খনির সঙ্গে বন উজাড়, মাটির ক্ষয় এবং নদী ও কৃষিজমিতে রাসায়নিক পদার্থ মিশে যাওয়ার ঘটনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক হুয়াং শিয়াওচংয়ের জমির চারপাশে চারটি বিরল খনিজের খনি রয়েছে। তাঁর ধারণা, যথাযথ প্রক্রিয়ায় খননকাজ না চালানোর কারণে এখনো ভূমিধস হচ্ছে।
হুয়াং আরও অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি কোম্পানি অবৈধভাবে তার জমি দখল করেছে। তবে ওই কোম্পানি বিবিসির প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে রাজি হয়নি।
কৃষক হুয়াং শিয়াওচং বলেন, ‘এত বড় সমস্যাটা আমার একার পক্ষে সামলানো সম্ভব না। এটা এমন বিষয় যা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদেরই সামলানো উচিত।’
চীনের এই কৃষক আরও বলেন, ‘আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর নেই… আমাদের মতো কৃষকেরা অসহায়। সহজভাবে বললে, ‘আমরা জন্মগতভাবেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। এটা সত্যি খুব দুঃখজনক।’
চীনের সাধারণ গ্রামবাসীর জন্য বড় বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ঘটনা খুবই বিরল। অনেক সময় তা বিপজ্জনকও। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাধারণ গ্রামবাসীর কথা বলার ঘটনা তো আরও বিরল।
তবুও হুয়াং শিয়াওচং চুপ থাকেননি। তিনি স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন।
স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, হুয়াংয়ের গ্রাম ও তার জমির চারপাশে খননের কাজে ব্যবহৃত পুকুর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। মাত্র ছয় কিলোমিটার চওড়া একটি এলাকার মধ্যেই অন্তত চারটি খনির অবস্থান দেখা যাচ্ছে।
বায়ান ওবো খনি থেকে বিরল খনিজ ধাতু উত্তোলন করা হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর জ য আম দ র র ঘটন অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষি বিবর্তনের গল্প বলে যে জাদুঘর
বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির মূলে রয়েছে কৃষি। এই কৃষির বিবর্তনের গল্প, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের জীবন, প্রযুক্তির বিকাশ এবং গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্য যেন এক অমূল্য উত্তরাধিকার।
সময়ের প্রবাহে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে, ভুলে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। সেই হারানো ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও তুলে ধরার প্রয়াসেই গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি জাদুঘর।
আরো পড়ুন:
জাপানের এনইএফ বৃত্তি পেলেন বাকৃবির ২০ শিক্ষার্থী
গোপনে বাকৃবি ছাত্রীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে সাবেক ছাত্রকে দিতেন আরেক ছাত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) ঠিক সামনেই সবুজ দেবদারু গাছে ঘেরা এক মনোরম পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে এই কৃষি জাদুঘর। প্রকৃতির কোলে যেন কৃষির ইতিহাস কথা বলে এখানে।
২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মু. মুস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, যার মূল স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম এর উদ্বোধন করেন।
নানা প্রতিবন্ধকতা ও জনবল সংকটের কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও, ২০০৭ সালের ৩০ জুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসাইন মিঞাঁ এটি পুনরায় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এটি দেশের কৃষি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির এক জীবন্ত সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত।
৫ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত এই অষ্টভুজ আকৃতির ভবনটি স্থাপত্যগত দিক থেকেও দারুণ দৃষ্টিনন্দন। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে রঙিন মাছের অ্যাকুয়ারিয়াম, পাশে প্রাচীন সাতটি খনার বচন। প্রবেশমুখের ঠিক পরেই দুটি অফিস কক্ষ, আর একটু ভেতরে এগোলেই দেখা যায় একটি ছাদহীন বৃত্তাকার বাগান, যা প্রাকৃতিক আলোর ছোঁয়ায় উজ্জ্বল। সেই বাগানের চারপাশেই রয়েছে সংরক্ষণশালার বিভিন্ন কক্ষ। প্রতিটি কক্ষই যেন কৃষির একেকটি অধ্যায়।
জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো বীজ সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে ধান, গম, ভুট্টা, তিসি, চিনাবাদাম, কাউনধান, ফ্রেঞ্চ বিন, ফাবা বিনসহ নানা ফল ও সবজির বীজ। দেখা মেলে বিরল প্রজাতির তৈকর ফলের বীজ, যা একসময় আচার ও জেলি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। রয়েছে বহুল পরিচিত ভ্যান্না বীজ, যার তৈল দিয়ে কসমেটিক ও ঔষধি পণ্য তৈরি হয়।
মাটির নানা প্রকার নমুনা, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সার, এমনকি পাহাড়ি চাষাবাদের মডেলও স্থান পেয়েছে এখানে।
শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও দর্শনার্থীদের শিক্ষার জন্য প্রদর্শিত হয়েছে বিভিন্ন ফসল রোগের চিত্র, আক্রান্ত বীজ, ও ব্যাকটেরিয়ার নমুনা। এ অংশের এক বিশেষ আকর্ষণ আড়াই কেজি ওজনের এক বিশাল মিষ্টি আলু, যা দর্শনার্থীদের বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
জাদুঘরের আরেক অংশ যেন এক ক্ষুদ্র প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘর। এখানে প্রদর্শিত আছে বুনো মহিষ, হরিণের শিং, গরু, অজগর ও গোখরা সাপের কংকাল। রয়েছে সংরক্ষিত কালো মেটো ইঁদুর, ধারাই সাপ, এবং কচ্ছপের খোল ও কঙ্কাল।
উপরে তাকালে দেখা যায় এক বিশাল প্রিজার্ভড শকুন, সে যেন আকাশে ডানা মেলে উড়ছে। রয়েছে প্লাটিপাসের কংকালও, যা এক বিরল প্রাণীর বাস্তব নিদর্শন। প্রতিটি নমুনাই যেন দর্শনার্থীকে স্মরণ করিয়ে দেয়, কৃষি কেবল ফসল বা জমির নয়, এটি প্রকৃতি ও প্রাণের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
গ্রামীণ জীবনের বৈচিত্র্যও এখানে তুলে ধরা হয়েছে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে। এক কক্ষে সাজানো আছে ঢেকি, কুলা, পানের ডাবর, হুকা, হারিকেন, কুপি বাতি, গরুর গাড়ির মডেল, এমনকি মাছ ধরার পুরোনো যন্ত্রও। রয়েছে তবলা, বেহালা, আদুরী, ক্রাম ও নাতকসহ বিভিন্ন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র।
এক পাশে দেখা যায় ‘গিলা’, যা একসময় বর-কনের গোসল অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো। এখনকার তরুণ প্রজন্ম হয়তো নামটিও জানে না, অথচ এটি ছিল গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ।
আরো রয়েছে কৃষকের বসতবাড়ির পূর্ণাঙ্গ মডেল, যা দেখতে যেন একেবারে বাস্তব কৃষকের ঘর। এখানে দেখা যায় কৃষকের হালচাষের দৃশ্য, রান্নাঘর, ধান রাখার গোলা, গরুর খোঁয়াড় এবং গৃহিণীর সাজানো রান্নার জায়গা। যেন একবারে গ্রামের জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে দেয়াল আর মডেলের মধ্যে।
প্রযুক্তির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য জাদুঘরে স্থান পেয়েছে পুরনো মাইক্রো কম্পিউটার, ডট প্রিন্টার, পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের আধুনিক যন্ত্র, ঘাণি, ডিঙি নৌকা, কাঁঠের তৈরি গরুর গাড়ি, তালগাছের কুন্দা ও উপজাতিদের পোশাক। এক পাশে ঝুলছে হরিণের চামড়া, অন্য পাশে সাজানো উপজাতীয় কৃষি উপকরণ, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই উপকরণগুলো কেবল প্রযুক্তির বিবর্তনের ইতিহাস নয়, বরং কৃষির সঙ্গে মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনধারার মেলবন্ধনের প্রতীক।
জাদুঘরের আরেক বিশেষ প্রদর্শনী হলো প্রাচীন থেকে আধুনিক সময়ের মুদ্রার সংগ্রহ। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রা এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। এগুলো দেখে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বিকাশ ও সামাজিক পরিবর্তনের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জাদুঘরের প্রতিটি কোণ যেন বলে, কৃষিই বাংলাদেশের প্রাণ। এখানকার প্রতিটি উপকরণ, প্রতিটি মডেল, প্রতিটি নমুনা কৃষির বিকাশ ও মানুষের সংগ্রামের গল্প বহন করে। দর্শনার্থীরা এখানে এসে কৃষির অতীত ঐতিহ্য থেকে বর্তমান প্রযুক্তির রূপান্তর পর্যন্ত এক নজরে দেখতে পান।
বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “এটি দেশের প্রথম এবং সবচেয়ে উপকরণসমৃদ্ধ কৃষি জাদুঘর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এটিকে দোতলা ভবনে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে, যেখানে কৃষি ভিত্তিক ১৪টি জেলার ঐতিহ্যবাহী কৃষি উপকরণ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য ভবিষ্যতে টিকিট ব্যবস্থা চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং জাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।”
এই কৃষি জাদুঘর শুধু কৃষি উপকরণের প্রদর্শনী নয়, বরং এটি বাংলাদেশের কৃষি সভ্যতার ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও মানুষের সম্পর্কের এক সজীব দলিল। শহরের কোলাহল আর কংক্রিটের ভিড় থেকে বেরিয়ে কেউ যদি এখানে আসে, তবে মুহূর্তেই যেন হারিয়ে যায় মাটির গন্ধে, কৃষকের ঘামে, বাংলার গ্রামীণ জীবনের সহজ সরল সৌন্দর্যে।
জাদুঘরটি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এবং প্রতি শনিবার বন্ধ থাকে। সময় সুযোগে একবার ঘুরে গেলে দেখা মিলবে বাংলাদেশের কৃষির হাজার বছরের গল্প, যা মাটি, ঘাম, বীজ আর ঐতিহ্যের বন্ধনে গাঁথা এক অনবদ্য ইতিহাস।
ঢাকা/মেহেদী