ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী আমলা ও বিচারককে। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা ভেঙে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজ মঙ্গলবার অবসরপ্রাপ্ত ১২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওই সব ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাঁদের মধ্যে সাবেক সচিব, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। গৃহায়ণ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ৬৩ নম্বর বাড়িটি মূলত সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সেখানে ১৪ তলা একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ওই ভবনের ১২টি ফ্ল্যাট নীতিমালা ভেঙে তৎকালীন আমলা ও বিচারকদের বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের ওই সব ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়ে। তাতে বলা হয়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত’ সচিব পদমর্যাদার ১২ কর্মকর্তাকে ‘পুরস্কৃত করতে’ শেখ হাসিনার আমলে পরিকল্পিতভাবে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়। এরপর এই অভিযোগ তদন্ত করে দুদক বলেছে, তারা ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করে।

দুদকের তদন্ত ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ২৭৪তম বোর্ড সভায় ওই সব ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

যাঁদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল হয়েছে, তাঁরা হলেন সাবেক অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো.

জহুরুল হক (ফ্ল্যাটের আয়তন ৪ হাজার ১০৫ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান (ফ্ল্যাটের আয়তন ৪ হাজার ৩০৮ বর্গফুট), সাবেক সচিব এম এ কাদের সরকার (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব আসলাম আলম (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সচিব আকতারী মমতাজ (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সচিব মো. সিরাজুল হক খান (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট), সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সাবেক সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট), সাবেক সিনিয়র সচিব ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩১৫ বর্গফুট) এবং সাবেক সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক (ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৪৯ বর্গফুট)।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ল য ট বর দ দ বর দ দ ব ত ল কর মকর ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পুঠিয়া রাজবাড়ি

বাংলার প্রত্নতত্ত্ব ঐতিহ্যের মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অন্যতম। বাড়িটি হয়ে উঠেছে রাজশাহীর অনন্য পর্যটনকেন্দ্র। কেবল রাজশাহী নয়, দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও প্রতিদিন ছুটে আসছেন বাড়িটির চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের টানে। শুধু সৌন্দর্য নয়, এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় অনেকেই স্থানটিকে বেছে নেন ভ্রমণ ও  গবেষণার ক্যানভাস হিসেবে। এক সময় স্থানটি মহারানী হেমন্ত কুমারীর বাসভবন বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত ছিল। ঢাকা থেকে দূরত্ব প্রায় ২২০ কিলোমিটার। রাজবাড়ির চত্বরটি বিস্তৃত ৪ দশমিক ৩১ একর আয়তনের জমির ওপর। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর সরকারিভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ রাজবাড়িটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তাই পুঠিয়া রাজবাড়িটি এখন জনপ্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি একটি অনন্য জাদুঘরও। এর আশপাশে ছয় একর আয়তনের ছয়টি ঐতিহাসিক দিঘি রয়েছে। রাজাদের স্মৃতিবিজড়িত বড় গোবিন্দ মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, বড় শিবমন্দির, ছোট শিবমন্দির, ছোট আহ্নিকমন্দির, জগদ্ধাত্রীমন্দির, দোলমন্দির, রথমন্দির, গোপালমন্দির, সালামের মঠ, খিতিশচন্দ্রের মঠ, কেষ্ট খেপার মঠ, হাওয়া খানাসহ ১৫টি প্রাচীন স্থাপনার দেখা মিলবে এই রাজবাড়ির চারপাশে। কথিত আছে, সতেরো শতকের শুরুর দিকে জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভের পর পুঠিয়া রাজবাড়ি রূপে পরিচিতি লাভ করে। 
রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা স্থানীয় তরুণ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এখানে আমাদের পদচারণা। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুঠিয়ার এই রাজবাড়ি। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই মানুষ এখানে আসেন। এটি আমাদের গর্বের, যা পুঠিয়াকে সমৃদ্ধ করেছে।’
সময়ের আবর্তে জমিদারি বিলুপ্ত হলেও প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা এখনও টিকে রয়েছে। অপরূপ এ প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে নির্মাণ করেছিলেন। অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ, রানীর স্নানঘাট, অন্দর মহলসহ রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ অলংকরণ, চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণশৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ির সমতল ছাদে লোহার বিম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। 
নিরাপত্তার জন্য বাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল। বর্তমানে পর্যটকরা ২০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করছে। রাজবাড়িটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। v
সুহৃদ, পুঠিয়া (রাজশাহী)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তা‌লিকায় আছেন সাবেক সচিব, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তা
  • ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পুঠিয়া রাজবাড়ি
  • অবসরপ্রাপ্ত মুয়াজ্জিনের জন্য পেনশন চালু করল কমিটি