এটি এখন পর্যন্ত আমাদের জন্য মোটেও কোনো ভালো সংবাদ নয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত মনে হচ্ছে না। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর চিঠিতে ১ আগস্ট পর্যন্ত চূড়ান্ত দর-কষাকষির জন্য সময় দিয়েছেন। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের চাহিদা অনুসারে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে চূড়ান্তভাবে আরেক দফা চাপ প্রয়োগ করল। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত তুমি (বাংলাদেশ) আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) দাবিগুলো মেনে নাও।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের এ চাপকে বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবিলা করতে পারবে, সে বিষয়ে আমরা (ব্যবসায়ীরা) বলতে পারছি না। কারণ, শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষির পুরো প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষির জন্য দেশটিতে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল রয়েছে। অথচ ওই দলে বেসরকারি খাতের কোনো প্রতিনিধি নেই। শুল্কছাড়ের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, এটি ঠিক। তবে বাড়তি শুল্কে দেশের ব্যবসায়ীরাই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করবেন। ফলে দর-কষাকষির প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতের একজন প্রতিনিধি অবশ্যই থাকা উচিত ছিল।

ওই প্রতিনিধিদলে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ লোকও সেভাবে নেই। এ দর-কষাকষির প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে লবিস্ট নিয়োগ করা যেত, এমনকি আমাদের দেশেরও অনেক বিশেষজ্ঞ ছিলেন, যাঁদের প্রতিনিধিদলে রাখা যেত।

অন্তর্বর্তী সরকার ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি খাতকে উপেক্ষা করে আসছে। এ সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ খুবই কম। ফলে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বেসরকারি খাতকে উপেক্ষা করা নতুন কিছু নয়। আগের ধারাবাহিকতা এটা। বাংলাদেশ থেকে আমরা কোনো মতামত দিতে পারছি না। কারণ, আমরা আসলে জানি না শুল্কের দর-কষাকষি নিয়ে ওখানে ঠিক কী হচ্ছে।

ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক ৩৭ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করেছেন। এটি আসলে কিছুই নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপকে আপাতত আমি দর-কষাকষির ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছি। কারণ, যে শুল্ককর (২ শতাংশ) কমানো হয়েছে, তা আমাদের প্রত্যাশার ধারেকাছে যায়নি। তিন মাস ধরে আলোচনার পর আমরা মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক কমাতে পেরেছি। এখন বাকি তিন সপ্তাহে আর কতটুকু কমাতে পারব, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে, আমাদের বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী—চীন ও ভিয়েতনাম ইতিমধ্যে আমাদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় চলে গেছে। ভিয়েতনাম তাদের শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। অর্থাৎ ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে শুল্ক–সুবিধায় ১৫ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে। আর অন্য দুই প্রতিযোগী ভারত ও পাকিস্তানের বিষয়ে এখনো জানি না। তবে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তা মোটেও সুখকর নয়। এ অবস্থায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে (শুল্ক আলোচনায়) আমাদের একটি বড় ধরনের উন্নতি ঘটাতে হবে।

যেহেতু শুল্ক আলোচনার বিষয়গুলো আমরা বেসরকারি খাতের লোকেরা জানি না, ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিক কী সিদ্ধান্তে যাওয়া উচিত হবে, তা বলা কঠিন। তবে আমি মনে করি, সরকারের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করা উচিত। তবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বা রাষ্ট্রের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে তো আমরা কিছু করতে পারব না। কিন্তু সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি থাকলে, সেটিও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জানানো উচিত।

যা হোক, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের বিষয়ে আমরা আসলে খুব বেশি এগোতে পারিনি। অর্থাৎ যে তিমিরে ছিলাম, সেই তিমিরেই আছি। সামনের কয়েক দিনে শেষ পর্যন্ত যদি আমরা খুব বেশি ভালো দর-কষাকষি করতে না পারি, সে ক্ষেত্রে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এ শুল্ক এটাই যদি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে সেটি দেশের জন্য একটা বড় ধরনের দুঃসংবাদ হিসেবে বিবেচিত হবে। পুরো অর্থনীতির ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ব সরক র র জন য আম দ র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান ও সচিবকে না পেয়ে কক্ষে তালা দিলেন সেবাপ্রার্থীরা

ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ