আইপিও ৬ মাসে শেষ করা হবে : ডিএসই চেয়ারম্যান
Published: 8th, July 2025 GMT
আগামীতে ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়া শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নিয়ে সমালোচনা আছে। আমরা আইপিও প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছি। আশা করছি, আগামীতে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ হতে কম সময় লাগবে।’’
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেটের সম্প্রসারণ : টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এমন কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী, অর্থ) ড.
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যৌথ কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: বিএসইসি
শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল সদস্য মনোনয়নে বিএসইসির কমিটি
তবে জরুরি কাজে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে চলে যান বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বিএসইসি লিস্টিংয়ের কাজ স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে আইপিও প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার সমস্যার সমাধান করা হবে। গত এক বছরে কোনো আইপিও আসেনি। নতুন নতুন আইপিও আনা বিএসইসির কাজ না। এ দায়িত্ব মার্চেন্ট ব্যাংকারদের। আমাদের অবশ্যই আনেক সমস্যা রয়েছে। ওই সব সমস্যা থাকার মধ্যেও আমাদের পুঁজিবাজারে স্কয়ার, এসিআই, অ্যাপেক্স, গ্রমীণফোন, রবি, ওয়ালটন এসেছে। তাহলে এখন কেন আইপিও আসছে না?’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক ১৩৮ কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে এনেছে। অর্থাৎ ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক গড়ে ২টি করে কোম্পানির আইপিও এনেছে। আর সাড়ে ৭ বছরে ১টি করে আইপিও এসেছে। আমাদের ৪৮০ বিলিয়ন ডলারের ইকোনমি। তাহলে আমাদের পারফরমেন্সটা কোথায়? গত কয়েক বছরে আইপিওতে আসা কিছু কোম্পানির গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে এটা অবশ্যই কখনোই হতে পারে না যে, যত কোম্পানির আইপিও আসবে সবগুলোর শেয়ার দর পজিটিভ থাকবে।’’
মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘পুঁজিবাদের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার শেয়ারবাজার। তবে আমাদের দেশে গত ১৫ বছরের অনিয়ম, অবস্থাপনা ও দুর্নীতি পুঁজিবাজারকে ভীষণভাবে সংকুচিত করে রেখেছে, পঙ্গু করে রেখেছে। আমরা এখন এমন একটা অবস্থানে এসে পৌঁছেছি, যেখান থেকে উত্তোরণের জন্য আমরা যে চেষ্টাগুলো করছি; তা দৃশ্যমান হতে সময় লাগছে। পরিস্থিতিটা এতাই খারাপ ছিল। তবে পরিবর্তনের একটি ধরা তৈরি হয়েছে। যেখানে সরকার পুঁজিবাজারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। রেগুলেটরও মার্কেটের সঙ্গে অনেক বেশি ইন্টারোগেশন করছে। সুতরাং আমি আশাবাদী। আমরা শেয়ার বাই-ব্যাকের বিষয়ে রেগুলেটরের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা আশা করছি, শিগগিরই আপনাদের ভালো খরব দিতে পারব।’’
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এবারের বাজেটে সরকার পুঁজিবাজারে যেসব ইনসেন্টিভ দিয়েছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এ সরকার পুঁজিবাজারকে যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে, তা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। তবে সরকার চাইলে মার্কেট মেকারের ভূমিকায় কাজ করতে পারে। যেমন- রাষ্ট্রীয় মালিকানা রয়েছে এমন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার ছেড়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, সাধারণ বীমা, জীবন বীমা এসব কোম্পানিকে কীভাবে পুঁজিবাজারে আনা যায়], সেটা নিয়ে কাজ করতে পারে। এছাড়া সড়ক, ফ্লাইওভার, ব্রিজ ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল কালেকশন ডিজিটালাইজড ও সিকিউরিটাইজ করে কীভাবে ফান্ড সংগ্রহ করা যায়, সেই বিষয়ে সরকার ভাবতে পারে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘অডিটার ও ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি তারা তাদের রেসপন্সিবিলিটিটা ঠিকমতো পালন করতে না পারার ফলে খারাপ আইপিও মার্কেটে চলে এসেছে। এখন আর ভালো কোম্পানি আসতে চাচ্ছে না। সাড়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স গ্যাপ থাকার পরও কেন ভালো কোম্পানি মার্কেটে আসতে চাচ্ছে না? কারণ হচ্ছে, অনেক কোম্পানি স্বচ্ছতার সঙ্গে অডিটেড ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করছে না। স্বচ্ছতার সঙ্গে আয়কর দিচ্ছে না অথবা দিতে পারছে না। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে স্বচ্ছতার সঙ্গে আসতে হবে।’’
ঢাকা/এনটি/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রক র য় ব এসইস আম দ র সরক র আইপ ও ড এসই
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)