নিশোর পরবর্তী সিনেমা ‘দম’, নির্মাতা রেদওয়ান রনি
Published: 8th, July 2025 GMT
প্রথমবার একসঙ্গে বড় পর্দায় হাজির হচ্ছেন অভিনেতা আফরান নিশো এবং নির্মাতা রেদওয়ান রনি। ‘দম’ সিনেমায় ক্যামেরার সামনে–পেছনে কাজ করবেন এই দুজন। আগামী ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনেমাটির সংশ্লিষ্টরা।
সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় গড়ে উঠেছে ‘দম’ সিনেমার গল্প। ’চোরাবালি’ খ্যাত নির্মাতা রেদওয়ান রনি বলেন, “দম’ একজন সাধারণ মানুষের জ্বলে ওঠার গল্প, ‘পাওয়ার অফ আ কমন ম্যান’ নিয়ে কাজ করব। অনেক বছর ধরে এমন গল্পই খুঁজছিলাম, বিশেষত চরিত্রটির মধ্যে এমন এক শক্তি আছে যা শুধু আমাকে না, দর্শকদের জীবনেও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।’
আফরান নিশো বলেন, ‘এমন গল্পের সিনেমা দেশে হয়েছে বলে জানা নেই। ‘দম’ একটি সার্ভাইবাল ইনস্পিরেশনাল গল্পের সিনেমা হতে যাচ্ছে। এমন স্টোরি নিয়ে অভিনেতার রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। নিশোর মতে, এ ধরনের গল্পে একটা উত্তেজনা থাকে। তবে অভিনেতার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়, “দম’–সিনেমায় পারফরমেন্সে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আমার জীবনে দেশে এ ধরনের সিনেমা দেখিনি।’
ভিনেতা বলেন, ‘আমার অভিনীত ’সুড়ঙ্গ’, ’দাগি’ গল্প নির্ভর সিনেমা এবং পারফরমেন্স বেইজ, যেটা আমি মেইনটেইন করার চেষ্টা করি। ‘দম’টাও তার ব্যতিক্রম কিছু না। অনেক বড় ক্যানভাসের গল্প এটি। আমি তো বলব, গত দুই সিনেমার চেয়েও অনেক বড় স্কেলের গল্প ‘দম’।
‘দম’ সিনেমার ঘোষণা আসে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। জানানো হয়েছিল সিনেমায় অভিনয় করবেন চঞ্চল চৌধুরী। এখন জানানো হচ্ছে সিনেমাটিতে যুক্ত হয়েছেন আফরান নিশো। তাহলে কী চঞ্চল চৌধুরী সিনেমায় থাকছেন না?
নির্মাতা রেদওয়ান রনি জানান, সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরী থাকছেন। অর্থাৎ আফরান নিশো ও চঞ্চল চৌধুরী– দুজনেই থাকছেন ’দম’ সিনেমায়।
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ’রেদওয়ান রনি পরিচালনায় ফিরছে, এটা একটা আনন্দের ব্যাপার। তার ’দম’ সিনেমার গল্পটা অসাধারণ, এ ধরনের গল্প নিয়ে আগে কাজ হয়নি, খুবই চ্যালেঞ্জিং, আমার মনে হয় দর্শকরাও চমকে যাবেন। এ সিনেমার সঙ্গে যারা আছেন,সবাই আমার খুব ভালোবাসার। পছন্দের গল্প–চরিত্র আর মানুষদের সঙ্গে কাজ করব, এটাই তো সবচেয়ে আনন্দের।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আফর ন ন শ আফর ন ন শ র গল প
এছাড়াও পড়ুন:
শরীর , শিল্প ও স্থিতি: ফ্রিদা কাহলো
কিছু শিল্পী আছেন, যাদেরকে আমরা নিছক শিল্পের ইতিহাসের ভেতরে রেখে পাঠ করতে পারি না। আবার চিন্তার ইতিহাসেও তারা একাট্টা কোনো অবস্থান নিয়ে হাজির নেই। এসবের ঊর্ধ্বে, একভাবে এই সকল চিন্তা বা শিল্প-সংক্রান্ত কাঠামোগত বোধ-বুদ্ধি অতিক্রম করে তবেই আমরা এই শিল্পীদের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ করি। এই সম্পর্ক নিশ্চিতভাবেই চলতি শিল্পচিন্তার বাইরের ভিন্ন কোনো উপায়, এবং আমাদের শিল্পচর্চার অভিনব কোনো অবস্থা। আমাদের মানবিক সংকট ও একান্ততাগুলো এখানে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি উচ্চকিত। ফলে, শিল্পের কাছে আমাদের প্রত্যাশার জায়গাগুলোও এখানে অন্যরকম অনুভূতিপ্রবণ।
শিল্পের মানবিকীকরণ হয়তো নয়, কিন্তু শিল্পের প্রয়োজন এখানে নিজের মনের কাছে নিজের আবেদন ধরে রাখার মতো। ফলে এই সম্পর্ক, নিজের মতো, নিছক শিল্প নয়—কিন্তু ব্যক্তিগত ও একান্ত। ফ্রিদা কাহলোর সঙ্গে আমার এই সম্পর্ক অনিবার্যভাবেই আমার নিজস্ব নারীসত্তার সংবেদনশীলতা দিয়ে গড়া। ফ্রিদা সেই বিরল শিল্পীদের একজন যার শিল্পের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে ব্যক্তিগত পর্যায়ে, গভীর এবং একান্ত অনুভবের জায়গা থেকে। তার ক্যানভাসে নারীর যন্ত্রণা, সংকট, শক্তি ও আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান—সবকিছুই অনিবার্য এক মানবিক গাঢ়তায় আবদ্ধ।
ফ্রিদার ছবিতে নারীদেহ ও নারীর মনোজগতের জটিলতা, নারীর ভিতরকার দ্বন্দ্ব—সংস্কৃতি ও সমাজের সঙ্গে, নারীর ব্যক্তিগত বেদনা ও মনস্তাপের ভার—একসঙ্গে মিশে আছে। ব্যক্তিগত জীবনের অভিঘাত একদিকে, অন্যদিকে নারীর অভিজ্ঞতার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তার ক্যানভাসে উচ্চকিত। ফলে ফ্রিদা কাহলো আজও সমকালীন নারীবাদী শিল্প-আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসাবে উপস্থিত আছেন। এখনো তার ছবির ভিতর দিয়ে নারীর আত্মপরিচয় ও অস্তিত্বের নতুন পাঠ আমরা তৈরি করি।
তার ছবি দেখলে মনে হয়, ‘শিল্প’ দুনিয়ার কাছে আরাধ্য হয়ে উঠেছে। আর সেই ‘শিল্পে’র মধ্যস্থতাতেই তিনি সমাজের ‘প্রচলিত সৌন্দর্যে’র ধারণাকে অস্বীকার করে গেছেন। সমাজ যাদের ‘অক্ষম’ বা ‘অসুন্দর’ নারী হিসেবে বিবেচনা করে, সেই শরীরকেও তিনি স্বাধীন, আত্মমগ্ন ও ‘বিশেষ’রূপে হাজির করেছেন। তার চিত্রকর্মে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা এবং বঞ্চনার প্রকাশ আছে, তেমনি আছে নারীর দ্রোহ এবং আত্মপরিচয় খুঁজবার সংগ্রাম। বারবার উঠে এসেছে তার সন্তানধারণে অক্ষমতার কথা, শারীরিক ব্যথা, প্রেম ও বিচ্ছিন্নতার কষ্ট।
ফ্রিদা কাহলো প্রায় ৫৫টির বেশি আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছেন, যেখানে প্রতিটি চিত্র তার জীবনের কোনো না কোনো সংকট, টানাপোড়েন বা অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি। ফ্রিদার ভাষ্যে—‘আমি আত্মপ্রতিকৃতি আঁকি কারণ প্রায়শই আমি একা থাকি, আর আমি সবচেয়ে ভালো জানি আমাকে।’ অন্য এক ভাষ্যে—‘আর যা ব্যক্তিগত, তারই প্রকাশ রাজনৈতিক।’ ফলে নিজের শরীরের অভিজ্ঞতা শুধু নিজের একার নয়, ফ্রিদার ছবি দেখে মনে হয় সেটি সমাজের ক্ষমতা, বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক কাঠামো ইত্যাদির প্রতিও একধরনের প্রতিরোধের আয়োজন। শুধু নারী নয়, শ্রেণি, বর্ণ, জাতি, ধর্ম, যৌনতা, বয়স, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি এই সকল প্রচলিত ধারণারই নানারকম নিন্দামন্দ ও বিশ্লেষণ।
নারীর শরীর, সম্পর্ক, মাতৃত্ব, যৌনতা—এই বিষয়গুলো ফ্রিদার আগে আর কোনো নারীশিল্পী এতটা স্পষ্টতা আর নির্মোহ সাহসিকতার সঙ্গে উপস্থাপন করেননি। তার ছবিতে বেশ কিছু উপাদান নিয়মিতভাবে এসেছে, যেমন মানব-হৃদয়, শেকড়, হ্যামিংবার্ড, শেকল, বানর, কুকুর, বিড়াল, হরিণ, কাঁটা, রক্তপাত ইত্যাদি। এইসবের ভিতর দিয়েই ফ্রিদা নারীর অভিজ্ঞতা আর যন্ত্রণা প্রকাশের এক অন্যরকম ভাষা তৈরি করেছিলেন। সামাজিক অবস্থানের ভিতরে নানারকম প্রতীকী অর্থ নিয়ে এই উপাদানগুলোই তার ছবির ভিতরকার এক বেদনা-ভারাক্রান্ত শক্তিশালী জগৎ। তার সমস্ত জীবনের বেদনা, হতাশা, ক্লান্তি, গ্লানি, আর সংকটের যাত্রাকে তিনি নথিবদ্ধ করেছিলেন এইসব ছোট ছোট প্রতীকের ভিতরে।
ফ্রিদা কাহলোর চিত্রকর্মে নারীর শরীর ও নারীর মানসিক অভিজ্ঞতার এক নতুন সংজ্ঞায়ন তাকে বিপ্লব-পরবর্তী মেক্সিকোতে একজন ‘নারী শিল্পী’ হিসেবে অনন্য মর্যাদা দিয়েছিল। তার শিল্পে ছিল আদিবাসী ও ঔপনিবেশিক প্রভাব। এইসবও তার নারীবাদী চেতনায় নতুন রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করে। মেক্সিকান লোকশিল্প, সংস্কৃতি ও রাজনীতির স্পষ্ট প্রভাবও লক্ষণীয় তার ছবিতে। একজন দৃঢ় রাজনৈতিক বিশ্বাসের নারী ছিলেন ফ্রিদা, একজন আজীবন সমাজতান্ত্রিক এবং মার্কস-লেনিনবাদী, যিনি ১৬ বছর বয়সে মেক্সিকান কমিউনিস্ট পার্টির (পিসিএম) যুব গোষ্ঠীতে যোগ দেন।
১৯৩২ সালে আঁকা তার ‘হেনরি ফোর্ড হাসপাতাল’ চিত্রকর্মটি নারীবাদী শিল্প-বিচারের ক্ষেত্রে এক বড় উদাহরণ। চিত্রকর্মটি তার ব্যক্তিগত জীবনের এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, যা হেনরি ফোর্ড হাসপাতালে তার অনিচ্ছা-গর্ভপাতের ঘটনাকে স্মরণ করে তিনি এঁকেছেন। এই চিত্রকর্মে, ফ্রিদা—হেনরি ফোর্ড হাসপাতালের বিছানায় নগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছেন। শরীরটি মোচড়ানো আর বিছানাটি কাত হওয়া, যা অসহায়তা এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি নিয়ে আসে। ফ্রিদা যেভাবে তার শরীর এঁকেছেন, তাতে তার অস্বস্তি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, কোমরের উপরের দিক দর্শকের মুখোমুখি, কিন্তু নিচের অংশটি বিপরীত দিকে ফেরানো।
চিত্রটিতে ফ্রিদার চারপাশে ছয়টি বস্তু নানাভাবে উড়ছে। এর মধ্যে পুরুষ ভ্রূণ একটি, একটি অর্কিডকে জরায়ুর মতো আঁকা, ফ্রিদা তার পেটকে লাল ফিতার সঙ্গে ধরে আছেন, যা নাভির দড়ির মতো, আর একটি শামুক, যা তার ওপর দিয়ে যাওয়া অস্ত্রোপচারের ধীর গতিকে ইঙ্গিত করছে। মৃত ভ্রূণ, শামুক, অর্কিড, পেলভিক হাড়, চিকিৎসা-যন্ত্র ও নারীর শরীরের অসহায়তা। শামুকটি গর্ভপাতের দীর্ঘ যন্ত্রণাময় প্রক্রিয়ারও অনুভূতি, পেলভিক হাড় তার সন্তানধারণে অক্ষমতার কারণ, আর অর্কিড ফুলটি যৌনতা ও সম্পর্কের জটিলতা।
ফ্রিদা প্রায়ই নিজের শরীর ও অভিজ্ঞতাকে শিল্পের কেন্দ্রে এনে ‘পুরুষতান্ত্রিক শিল্প-ধারণায়’ এবং পরবর্তীকালে শিল্পের ইতিহাসে এক বিপ্লবী নারীবাদী অবস্থান তৈরি করেছেন। নারীর গর্ভপাত, রক্তক্ষরণ, যন্ত্রণা ও দেহের এইসব বাস্তবতা কখনোই গোপন করেননি, যা ‘নারীবাদী শিল্পের’ ভাষা তৈরির পেছনে ফ্রিদা কাহলোর বড় অবদান। স্বামী ডিয়েগো রিভেরার সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং বিচ্ছেদ-পরবর্তী মানসিক টানাপোড়েন তার চিত্রকর্মে বারবার ফুটে উঠেছে। ১৯৩৯ সালে আঁকা ‘দ্য টু ফ্রিদাস’ ক্যানভাসে তিনি নারীর আত্মপরিচয়, দ্বৈততা ও মানসিক দ্বন্দ্বকে এমন অনন্য এক নারী-দৃষ্টিতে হাজির করেছিলেন, যা নারীবাদী শিল্পচিন্তার গুরুত্বপূর্ণ রসদ হয়ে থেকেছে সবসময়।
১৯৩৯ সালে আঁকা ‘দ্য টু ফ্রিদাস’