পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেছেন, ‘আমাদের দিয়ে কাজ আদায় করে নেন। কিন্তু দূরে সরিয়ে দেবেন না। আমি সরে গেলে আরেকজন তো আসবে। তাঁকে দিয়ে তো কাজ করাতে হবে। এখানে ৩ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য আছেন। তাঁদের মনোবল যদি ভেঙে যায়, সেটা খুলনাবাসী বা দেশের কারও জন্য ভালো হবে না।’

মঙ্গলবার দুপুরে কেএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি উঠে আসে।

জবাবে কেএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমাকে আনফ্রেন্ড করবেন না। আমাকে অবন্ধু মনে করবেন না। আমি আপনাদের শত্রু নই। আমি এখানে কাজ করতে চাই। সত্যি সত্যি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘আমি কোনো তদবির করে এখানে আসিনি। আবার থাকার জন্যও তদবির করছি না। পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে না চাইতে পারেন। আবার খুলনাবাসীর মধ্যেও অনেকে মনে করতে পারেন, আমি চলে গেলে ভালো হয়। তবে কেন ভালো হয়, সেটা তাঁরা ভালো বলতে পারবেন। আমার ইচ্ছা, আমার হৃদয়টা যদি খুলে দেখাতে পারতাম, তাহলে বুঝতে পারতেন, আমি যতটুকু সময় পাই, খুলনাবাসীর জন্যই কাজ করতে চাই।’

গত ২৫ জুন থেকে কেএমপি কমিশনার মো.

জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে কেএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ কিন্তু পদত্যাগ করতে পারে না। কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রত্যাহার করতে পারে বা অন্য কোথাও পদায়ন করতে পারে। আমার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। আমার আন্তরিকতার ঘাটতি আছে কি না, সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন। তবে পুলিশকে যদি দূরে ঠেলে দেন, তাহলে তাদের দিয়ে ভালো কাজ করানো কঠিন হয়ে যাবে।’

গত ১০ মাসে কেএমপি এলাকায় ২৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। এর মধ্যে দুটি লাশ নদীতে ভেসে আসায় তদন্ত করছে নৌ পুলিশ। বাকি ২৪টির মধ্যে ২২টির রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি মামলা তদন্তাধীন। তবে অগ্রগতি রয়েছে।

পুলিশ কমিশনারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ইজিবাইক চুরি বা ছিনতাইকে কেন্দ্র করে পাঁচটি, মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাতটি, চুরি নিয়ে একটি, পরকীয়া সম্পর্কের কারণে পাঁচটি, পারিবারিক কলহে তিনটি এবং অন্যান্য কারণে পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে।

মাদকের বিষয়ে জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, মাদকের কারণে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হচ্ছে। মাদক বিক্রেতা, বাহক ও যারা বাইরে থেকে মাদক এনে খুলনায় সরবরাহ করেন, তাঁদের ওপর পুলিশের নজরদারি অব্যাহত আছে। গত সপ্তাহে হরিণটানা থানা এলাকা থেকে ১৯ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযানেও মাদক উদ্ধার হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজপড়ুয়া সন্তানদের সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে। সন্ধ্যার পর তারা যেন অযথা বাইরে ঘোরাফেরা না করে, সেদিকে অভিভাবকদের নজর দিতে হবে।

ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, খুলনায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ হাজার ইজিবাইক চলাচল করে। এর প্রায় ৬০ শতাংশ বাইরের এলাকা থেকে আসে। চালকদের ট্রাফিক আইনের জ্ঞান না থাকায় যানজট বাড়ছে। কেএমপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাকি চালকদের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। রাজশাহীর আদলে খুলনায়ও ইজিবাইককে দুই রঙে ভাগ করে এক দিন পরপর চালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে রূপসা সেতু অবরোধ০১ জুলাই ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান, উপকমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবু তারেক, উপকমিশনার (সিটিএসবি) আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও উপকমিশনার (ট্রাফিক) সুদর্শন কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনকেএমপি সদর দপ্তরের সামনে আজও বিক্ষোভ, বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে বিভক্তি৩০ জুন ২০২৫আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারকে না সরালে খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি২৮ জুন ২০২৫আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আবার বিক্ষোভ২৮ জুন ২০২৫আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারকে সরাতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা, খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি২৬ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর র বল ন করব ন ক এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা ও প্রতিবাদ

সমকালের বিনোদন পাতায় রোববার প্রকাশিত ‘চলচ্চিত্রের অনুদান নিয়ে তামাশা!’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। 

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘‘সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যারা অনুদান দেবেন, তারাই এবার নিয়েছেন অনুদান।’ অনুদান কমিটির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উল্লিখিত বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা হলো, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’ মেনেই অনুদানের জন্য চলচ্চিত্র নির্বাচন করা হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে গঠিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি’ এবং ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি’ সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণের আবেদন যাচাই-বাছাইপূর্বক সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করে।’’ 

এতে আরও বলা হয়, ‘‘এই দুই কমিটি ছিল ১১ সদস্যবিশিষ্ট, যেখানে চলচ্চিত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞ পাঁচজন ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটি কর্তৃক বাছাইকৃত গল্প/চিত্রনাট্য এবং আবেদন অনুদান কমিটি মূল্যায়ন করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী, অনুদান প্রদানের জন্য পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচনের লক্ষ্যে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কমিটি ছিল ৯ সদস্যবিশিষ্ট, যেখানে চলচ্চিত্র বিষয়ে অভিজ্ঞ চারজন ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কমিটির প্রত্যেক সদস্য অনুদানের জন্য আবেদনকৃত চলচ্চিত্রের গল্প/চিত্রনাট্য মূল্যায়ন করে আলাদাভাবে নম্বর প্রদান করেছেন। কমিটির সব সদস্যের মূল্যায়নকৃত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে অনুদানের জন্য চলচ্চিত্র বাছাই করা হয়। অনুদান কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সঙ্গে অনুদানের জন্য চলচ্চিত্র বাছাই করেছে।’’

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘‘সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদানপ্রাপ্ত মো. আবিদ মল্লিক চলচ্চিত্র অনুদান উপকমিটির সদস্য।’ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, পূর্ণদৈর্ঘ্য/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫-এ ‘চলচ্চিত্র অনুদান উপকমিটি’ নামে কোনো কমিটি নেই। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তথ্য মন্ত্রণালয় সংস্কারে সার্চ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাইদুল আলম খান (অনুদানের জন্য মনোনীত চলচ্চিত্রের প্রযোজক)।’ বিষয়টিতে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের গঠিত সার্চ কমিটির মেয়াদ কয়েক মাস আগেই শেষ হয়েছে।’’ 

‘‘চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং চলচ্চিত্র অনুদান স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাদিয়া খালিদ রীতি (অনুদানের জন্য মনোনীত চলচ্চিত্রের প্রযোজক)।’ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, সাদিয়া খালিদ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটিতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই ও তত্ত্বাবধান কমিটির সদস্য। তার ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাতের বিষয়টি প্রযোজ্য হবে না। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো কমিটির সদস্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন না—এমন কোনো বিষয় ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা, ২০২৫’-এর কোথাও উল্লেখ নেই।’ সংবাদে অন্য যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলোও ভিত্তিহীন।’’

প্রতিবেদকের বক্তব্য

‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগকারী অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রতিবেদকের নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই। তবে প্রতিবেদনে সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদানপ্রাপ্ত মো. আবিদ মল্লিককে চলচ্চিত্র ‘অনুদান উপকমিটির সদস্য’ বলা হয়েছে, যা সঠিক ছিল না।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাটগ্রামে থানায় হামলার ঘটনায় বিএনপির আরও ২ নেতা গ্রেপ্তার
  • প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা ও প্রতিবাদ