জুলাই শহীদদের মর্যাদা দিতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে
Published: 8th, July 2025 GMT
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের যথাযথ মর্যাদা দিতে হলে দেশে নির্বাচিত, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যারা অন্ধকারের শক্তি, ষড়যন্ত্রের শক্তি, তারা নির্বাচনকে ঠেকাতে চায়। আর আমাদের উচিত হচ্ছে, যে যেখানে আছি নির্বাচনের স্বপক্ষে নেমে পড়তে হবে। এর মধ্যে দিয়েই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যারা নির্বাচন ভয় পায়, যারা অন্ধকারের শক্তিকে পুনর্বাসন করতে চায়, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায়, এখন তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। পিআর পদ্ধতি এখন যথেষ্ট নয়। যদি কেউ করতেও চায় তাহলে জাতির সামনে তাদের কর্মসূচি তুলে ধরে ভোট করা উচিত। তারা জয়লাভ করলে তাহলে পিআর করবে। কিন্তু, বিএনপির ঘাড়ের উপর চেপে বা অন্য কোনো সরকারের ঘাড়ে চেপে এই দুষ্কর্ম করা ঠিক হবে না। এটির প্রতি জাতির কোনো সমর্থন নেই।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন যেটা হয়েছে এটা জুলাই-আগস্টের মধ্যে পরিসমাপ্তি হয়েছে। কিন্তু, আন্দোলনটা ১৫-১৬ বছরের। শেখ হাসিনা তাড়ানোর আন্দোলন, স্বৈরাচার তাড়ানোর আন্দোলন, দেশ রক্ষার আন্দোলন। এটা তো দীর্ঘ আন্দোলন। শুধু জুলাই-আগস্টকে আমরা যারা স্মরণ করছি, আমাদের অতীতকে (১৫-১৬ বছরের) অস্বীকার করছি।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টকে স্মরণ করবো আমাদের মর্যাদার জন্য, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের জন্য। এটা এমন একটা জিনিস, এটাকে কখনো বিতর্কে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। এই আন্দোলনে যারা ছিলেন সবাই জাতীয় বীর। সবাই রক্ত দিয়েছেন জাতিকে মুক্ত করার জন্য। এই আন্দোলনে কিশোর, শ্রমিক, বয়স্ক থেকে শুরু করে সবাই জাতীয় মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। সেই জাতীয় মুক্তির কাজটি আমরা এখনো করতে পারিনি। জাতীয় মুক্তির কাজটি করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন দরকার।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ গঠন করতে হলে নির্বাচন দরকার, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।সেই ভোটাধিকার আমরা এখনও মানুষকে বুঝিয়ে দিতে পারিনি। শেখ হাসিনার কেড়ে নেওয়া ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ভোটের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দের মার্কাকে ভোট দেবে। এরপর আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করবো। সে সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা করতে না পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত শহীদদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা আমরা দিতে পারছি না। তাদের যদি মর্যাদা-সম্মান দিতে হয়, তাহলে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে যেহেতু তারিখ ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে নির্বাচনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। বসে থাকলে হবে না। যারা অন্ধকারের শক্তি, ষড়যন্ত্রের শক্তি, তারা নির্বাচনকে ঠেকাতে চায়। আর আমাদের উচিত হচ্ছে, যে যেখানে আছি নির্বাচনের স্বপক্ষে নেমে পড়বো। এর মধ্যে দিয়েই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে।
দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণঅভ য ত থ ন জ ল ই আগস ট গণত ন ত র ক ব এনপ র আম দ র র জন য স মরণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।