গত দশকে সৌদি আরব মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ‘ভয়াবহ’ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যার বেশিরভাগই বিদেশী নাগরিক। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, গত দশকে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যার তিন-চতুর্থাংশই পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া এবং মিশরসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মাদক সংক্রান্ত মৃত্যুদণ্ডের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশের পর, মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা চিল ১২২টি এবং গত মাসের শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১১৮টি।

অ্যামনেস্টি এই মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাগুলোকে ‘চরম অন্যায্য বিচার’ এবং ‘মানব জীবনের প্রতি ভয়ঙ্কর অবজ্ঞা’ বলে বর্ণনা করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য গবেষক ডানা আহমেদ বলেন, “আমরা সত্যিই এক ভয়াবহ প্রবণতা প্রত্যক্ষ করছি, যেখানে বিদেশী নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, এমন অপরাধের জন্য যার মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা উচিত নয়। সৌদি অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিবাদ জানাতে এবং নিন্দা জানাতে রাজি করানো কখনই সহজ ছিল না। কারণ এর গভীর আর্থিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের সাথে সাথে .

.. তদন্ত আরো কমে গেছে।”

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তারা এমন বিদেশী নাগরিকদের খুঁজে পেয়েছে যারা কাজের জন্য অভিবাসনের সময় মাদক পাচারে প্রলুব্ধ হয়ে ‘প্রতারিত ও শোষিত’ হয়েছিল। 

অ্যামনেস্টির মতে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিছু বিদেশী নাগরিকের স্বল্প শিক্ষা ও সুবিধাবঞ্চিত আর্থ-সামাজিক পটভূমি তাদের শোষণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং সৌদি আরবে আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তাদের জন্য আরো কঠিন করে তোলে। তাদের প্রতিবেদনে আইনি প্রতিনিধিদ না পাওয়া, অপর্যাপ্ত কনস্যুলার সহায়তা এবং কার্যকর ব্যাখ্যার অভাব পাওয়া গেছে।

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ য মন স ট ক র যকর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চবি উপাচার্যকে ছাত্রের ধমক ও সরকারের অবস্থান

সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। অকুস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ‍্যালয়ের উপাচার্যের অফিস। সেখানে হট্টগোল হচ্ছিল বিশ্ববিদ‍্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের একজন শিক্ষককে নিয়ে, যাঁর সেই কক্ষে সেই সময়ে পদোন্নতির ভাইভা হওয়ার কথা। ভিডিওতে দেখা যায়, উপাচার্যের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র সেই শিক্ষকের সঙ্গে তর্ক করছে এবং তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না বলে চিৎকার করছে। এক পর্যায়ে একজন ছাত্র উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলে, ‘আপনি নিজ যোগ‍্যতায় বসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ‍্য।’ 

অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ‍্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিত। এ কারণে বিশ্ববিদ‍্যালয়ের মতো জায়গায় উপাচার্যরা সরকারের এক প্রকার গোলাম হয়ে থাকতেন। কোনো বিষয়েই সরকারের বাইরে গিয়ে তাদের কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে দেখা যেত না। প্রায় সর্বক্ষেত্রে সরকার-সমর্থিত ছাত্র সংগঠন তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাত। কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল। দুঃখজনক যে, তা দেখা যাচ্ছে না। অন্তত আলোচ্য ভিডিওটি সেটাই প্রমাণ করে। স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিও সামাজিক মাধ‍্যমে নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
গত ২২ জুন রাজধানীর এক আলোচনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ‍্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষার দায়িত্বে থাকাকালে তিনি উপাচার্যের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছিলেন– ‘আওয়ামী লীগ তো হওয়া যাবে না। কাজেই মৃদু বিএনপি হওয়া যাবে অথবা নিষ্ক্রিয় বিএনপি হওয়া যাবে।’ বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, বর্তমানের প্রায় সব উপাচার্য বিএনপি কিংবা জামায়াত ঘরানার। তবে কি ছাত্ররা ঠিকই বলেছে? তারাই উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে? লক্ষণীয়, ওই উপাচার্য কিন্তু ছাত্রদের এমন ঔদ্ধত্যের জবাবে তেমন কিছুই বলতে পারেননি। 

তবে কি গোড়াতেই গলদ ছিল? গত বছরের আগস্টে বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ছাত্ররা তাদের (উপদেষ্টা পরিষদ) প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। তারা যখন বলবে, তখন তারা চলে যাবেন।’ এ কারণেই কি তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মব সৃষ্টির মাধ্যমে বহু শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেননি? 
ছাত্ররা নিশ্চিতভাবেই তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে; গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করবে। বাংলাদেশের ইতিহাস তো একভাবে ছাত্র আন্দোলনেরই ইতিহাস। পৃথিবীতে বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দেশ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি দেশের জন্ম দিয়েছে। তবে কোনো আন্দোলনের পর ছাত্রদের এ ধরনের মব সহিংসতা আগে খুব একটা দেখা যায়নি। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত সময়ে শিক্ষকদের ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছিল। কিন্তু তা কোনোভাবেই শিক্ষাঙ্গনে মবতন্ত্রের অনুমোদন দেয় না। ছাত্রদের এজেন্সি থাকাটা জরুরি। তার মানে এই নয়– এখন ছাত্র পরিচয়টি ভয়ের হতে হবে। শিক্ষকদের এখন ছাত্রদের ভয় পেতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ‍্যালয়ে পুরোপুরি একাডেমিক পরিবেশ ফিরে এসেছে; বলা যায় না। শিক্ষক বয়কট, এমনকি মব সৃষ্টি করে শিক্ষকদের বাসায় গিয়ে হাজির হওয়া– সবই এখানে ঘটেছে। অনেক শিক্ষকই ছেড়েছেন ক‍্যাম্পাসের বাসা। এখনও পাঠদানসহ একাডেমিক অন‍্যান‍্য কাজে ফিরতে পারেননি অনেক শিক্ষক। সব ছাত্রই এ ধরনের মব করছে, তা নয়। কিন্তু এই ছাত্র সবারই কোনো না কোনো রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। আগে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা যা করেছে, এখন এরাও সেই মনস্তত্ত্বেই আছে; হয়তো পদ্ধতি ভিন্ন। 

তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এখন অনেকটাই ভয়ের সম্পর্ক। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে অনেক ছাত্রই যা করছে, তা বাস্তবে খবরদারি। সব তাদের দখল ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে– এমন একটা ভাবসাব। দুর্ভাগ্যবশত, এখন পর্যন্ত কেউই বিশেষ করে সরকারের ওপর মহল ছাত্রদের লেখাপড়ায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়নি। কেন যেন সবাই চায়, ছাত্ররা রাস্তায় থাকুক। সরকারের পক্ষে ‘প্রেশার গ্রুপ’ হয়ে কাজ করুক। তা না হলে কেন শিক্ষা উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এক দল ছাত্রের ধমকানো নিয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান গ্রহণ করেননি? যদি ছাত্ররাই উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকে, তাহলে উপদেষ্টারা কী করছেন? 

স্পষ্ট জানান দিতে চাই– এভাবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো যায় না; যাবে না। এসব ছাত্রনামীয় পদমালিককে রোখা দরকার ছিল আগেই। কিন্তু তা করা যায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীদার এ দেশের সব শ্রেণির মানুষ। কিন্তু ক্ষমতা চর্চার মালিকানা কেন ছাত্র পরিচয়ধারী কয়েকজন মব সংগঠকের কাছে? তাদের এই কর্তৃত্ব করার অধিকার দিল কে? নিশ্চিতভাবেই এ দেশের জনগণ দেয়নি। কারণ কর্তৃত্ববাদিতার বিরুদ্ধেই তো জুলাই অভ্যুত্থান।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এখন যে পর্যায়ে আছে, তা কোনোভাবেই শিক্ষার প্রত্যাশিত পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস‍্যপূর্ণ নয়। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যাদের দ্বিধাহীন ও ব্যাপক অংশগ্রহণ গণঅভ্যুত্থানকে সম্ভব করে তুলেছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পথ এভাবেই রচিত হয়। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাই এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে– ভয়ের সংস্কৃতির জন‍্য যে কৌশলই ব‍্যবহৃত হোক না কেন, তা আদৌ ভালো ফল বয়ে আনে না। বেশি দূর যেতে হবে না; বিগত সরকারের পতনই তার প্রমাণ। তবে দুঃখজনক হলো, প্রতিকারের পদক্ষেপ না নিয়ে ঘটনা ঘটার পর সরকার এখনও বিবৃতিদানেই আটকে আছে– সেটি বুঝতে খুব বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। 

জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, 
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়
zobaidanasreen@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ