গোপালগঞ্জে ছয় মাসে ৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫১
Published: 8th, July 2025 GMT
গোপালগঞ্জের সড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন অন্তত ২ শতাধিক।
অসাবধানতা এবং দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রাতদিন কাজ করেও কোনোভাবেই দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
গাড়ি চালকদের দাবি, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, অদক্ষ চালক ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো এবং মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে দুর্ঘটনায় পড়েন তারা।
আরো পড়ুন:
মঙ্গলবার থেকে সিলেটে শ্রমিকদের ধর্মঘটে গণপরিবহন বন্ধ
ময়মনসিংহে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো.
তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পযর্ন্ত এই ছয় মাসে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশের ৭০ কিলোমিটারে ২৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯ জন এবং আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। মামলা হয়েছে ২৩টি।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশে চারটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২জন। মামলা হয়েছে তিনটি। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ২৫টি দুর্ঘটনায় ১৯জন নিহত ও আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাতটি।
স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল শেখ বলেন, “গোপালগঞ্জে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ছোট-বড় কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে এই মহাসড়কে। অদক্ষ বাস চালক আর গাড়ির দ্রুত গতি দুর্ঘটনার পেছনের মূল কারণ। যদি দক্ষ চালক দিয়ে এবং গতি কমিয়ে গাড়ি চালানো যায়, তাহলে আশা করছি, সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।”
কাশিয়ানী উপজেলার পোনা গ্রামের ররিউল শেখ বলেন, “ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে শুধু বাস নয়, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যান চলাচল করে। এগুলোর চালকরা নিয়ম মানে না মহাসড়কে। তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে মানুষ। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গাড়ির চালক বলেন, শুধু পথচারীদের নয়, চালকদেরও নানা সমস্যা আর দোষ রয়েছে। ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন চালকরা। অনেক চালকের সঠিক লাইসেন্স নেই। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসন যদি সঠিকভাবে তাদের কাজ করে তাহলে লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক গাড়ি চালাতে পারতো না।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনা কমাতে আমরা মহাসড়কে নিয়মিত টহল দিচ্ছি। মহাসড়কে চলাচলকারী দ্রুতগতির যানবাহনকে জরিমানা করা হচ্ছে, যাতে চালকরা মহাসড়কে সঠিক নিয়মে যানবাহন চালান। চালকদের দক্ষতা বাড়াতে তাদের নিয়ে সভাও করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “এসব করার পরেও চালকদের উদাসীনতার কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত আহত সড়ক দ র ঘটন আহত হয় ছ ন দ র ঘটন য় গ প লগঞ জ চ লকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
সড়ক নষ্টের কারণ অনুন্নত ড্রেনেজ ও নিম্নমানের কাজ
সমকাল: নির্মাণ বা সংস্কারের এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের সড়কগুলো কেন ভেঙে যায়?
ড. আসিফুল হক: এর পেছনে বড় কারণগুলো হলো, অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক নির্মাণে ডিজাইন ফল্ট, নির্ধারিত গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার না করা, নিম্নমানের নির্মাণকাজ ও যথাযথভাবে তদারকি না করা। এক কথায় যেসব পরিবেশের কারণে সড়ক নষ্ট হয় তার সবকিছু চট্টগ্রামে বিদ্যমান। বিটুমিনের সবচেয়ে বড় শত্রু পানি। অধিকাংশ সড়ক বিটুমিনের। বর্ষায় চট্টগ্রামের সড়কগুলো পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও নেই। অল্প বৃষ্টিতেই সড়কের ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে কয়েকদিন পানি জমে থাকে। ফলে দ্রুত সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ে। এছাড়া সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের কাজ করা হয়। যার কারণে সড়ক দ্রুত ভেঙে যায়। যথাযথ মান বজায় রেখে সড়ক নির্মাণ করা হলে ৫-১০ বছরেও সড়ক ভাঙার কথা নয়। সড়কে যখন কোনো গর্ত হয় তখন তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হয় না। ফলে এটি বড়
হয়ে ক্রমান্বয়ে যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অথচ নিয়মিত সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান রয়েছে। সড়ক ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার করা হলে খরচও কম হয়। সড়কও ভালো থাকে।
সমকাল: টেকসই সড়ক নির্মাণে কি উদ্যোগ নিতে পারে সিটি করপোরেশন?
ড. আসিফুল হক: সড়ককে টেকসই করতে চট্টগ্রামের পরিবেশ অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে সড়ক ডিজাইন করতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সড়ক নির্মাণে যথাযথ মান বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। তীব্র গরমে সড়কের বিটুমিন গলে যায়। এ জন্য সঠিক মানের বিটুমিন ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। এখন সেটা ৬০-৮০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করতে হবে। যেটি অধিক তাপ সহনশীল।
সমকাল: টেকসই সড়ক নির্মাণে বিকল্প আধুনিক কোন পদ্ধতি রয়েছে কি না?
ড. আসিফুল হক: বিকল্প পদ্ধতিও সড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। রিজিড পেভমেন্ট (কংক্রিটের ঢালাই) পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে। সড়কের ইন্টার সেকশনগুলোতে সবসময় সংস্কার করা যায় না। ইন্টার সেকশনগুলোতে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। সড়কের এক লেইন রিজিড পেভমেন্ট করা হলে বর্ষায় ওই এক লেইন দিয়ে যানচলাচল করা নিশ্চিত করা গেলে সড়ক কম ভাঙ্গবে। রিজিড পেভমেন্ট পানিতে ডুবলেও ভাঙ্গে না। এছাড়া সড়ক নির্মাণে পলিমারাইজড বিটুমিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা ব্যয়বহুল। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কোন একটি সড়কে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি সফল হলে নগরের সবগুলো সড়কে এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে পারে সিটি করপোরেশন।
সমকাল: সড়ক টেকসই করতে কাজের মান কতটা গুরুত্বপূর্ণ
ড. আসিফুল হক: কাজের মান বজায় না রাখলে যেকোন পদ্ধতিতে তৈরি সড়ক ভেঙ্গে যাবে। তথাকথিত মেরামত করে সড়ক ঠিক রাখা যাবে না। কাজের মানে আপোষ না করে তদারকি নিশ্চিত করা হলে সড়ক হবে দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত।