খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নারী উন্নয়নকর্মী শেফালিকা ত্রিপুরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম–বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯-এর ১৪ ধারায় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

দায়িত্ব পাওয়ার পর শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি সবার সহযোগিতা চাই। জেলা পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’

এর আগের দিন, সোমবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাকে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের জারি করা আলাদা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে পরিষদের ১৪ জন সদস্যকে অবমূল্যায়ন, খারাপ আচরণ, হস্তান্তরিত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষক বদলিতে অনিয়ম, ঠিকাদারদের বিল আটকে রেখে ঘুষ গ্রহণ এবং নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় একটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জিরুনা ত্রিপুরাকে পরিষদের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার রাজনৈতিক আমলনামা

নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন মহল হইতে বারংবার দাবি জানাইবার পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণে আসিতেছে না, তাহার উত্তর মিলিতে পারে চট্টগ্রামের রাউজানে। বিশেষত সাম্প্রতিককালে সেইখানে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে পুলিশের প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকার নেপথ্যে যেই কারণগুলি উঠিয়া আসিয়াছে, সেইগুলি প্রণিধানযোগ্য। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, চট্টগ্রামের উত্তরের এই জনপদে গত ১১ মাসে খুন হইয়াছেন ১৪ জন। কিন্তু সকল খুনের এজাহার ও আসামি তালিকা বিশ্লেষণ করিয়া দেখা গিয়াছে, ১৩টি খুনের এজাহারভুক্ত কোনো আসামিই গ্রেপ্তার হয় নাই। এমতাবস্থায় গত রবিবার পুনরায় লাশ পড়িয়াছে ঐ জনপদে। চাচির জানাজা শেষে ঔষধ ক্রয় করিতে গিয়া স্ত্রী-শিশুসন্তানের সম্মুখেই খুন হইয়াছেন যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিম। ঘাতকেরা বোরকা পরিয়া আসিয়া গুলি করিয়া নিরাপদেই ফিরিয়া গিয়াছে।

পরিস্থিতি লইয়া রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিয়াছেন, ১১ মাসে ১৫ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৬-৭টি সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড। বাকিগুলির কারণ জায়গাজমি ও আধিপত্য বিস্তার-সংক্রান্ত বিরোধ। তাঁহার মতে, সন্ত্রাসীরা অঘটন ঘটাইয়া এলাকায় অবস্থান করে না; পাহাড়ে গা-ঢাকা দেয়। কারণ যাহাই হউক, হত্যাকাণ্ড মাত্রই যে আইনশৃঙ্খলার অবনতির চরমতম উদাহরণ– অস্বীকার করা যাইবে না। আসামি আটক না হইবার নেপথ্যে পাহাড়-সমতলের ন্যায় ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, তৎসহিত যে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক– উহা উপলব্ধি করিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। খোদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বীকার করিয়াছেন, রাউজানে রাজনৈতিক চাপের কারণেই আসামি ধরিতে বেগ পাইতে হয়। ইহাকে আমরা বলিতে পারি আইনশৃঙ্খলার রাজনৈতিক আমলনামা।
রাউজানের অভিজ্ঞতায় ইহা স্পষ্ট, একদিকে স্থানীয় পুলিশের বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডগুলির একটা অংশকে স্বাভাবিক বলিয়া ধরিয়া লইবার প্রবণতা, অন্যদিকে অতীতের ন্যায় এখনও রাজনৈতিক চাপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে ভূমিকা রাখিয়া চলিয়াছে। অথচ গণঅভ্যুত্থান-উত্তর পরিস্থিতিতে এই সকল কারণের একটাও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পথে প্রতিবন্ধক হইবার কথা নহে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, বালুমহাল ও ইটভাটা দখলের ন্যায় ফৌজদারি অপরাধমূলক ঘটনা বিগত সরকারের সময়ে সংবাদমাধ্যমে কী সংখ্যক শিরোনাম হইয়াছিল, তাহা আমরা জানি। প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সংঘটিত হইত এই সকল ঘটনা। কিন্তু বর্তমানের তো দেশে দলীয় সরকার নাই। এই আমলেও দলীয় সরকারের আমলের ন্যায় রাজনৈতিক অপরাধপ্রবণতা এতটা দৃশ্যমান কেন? বলা হইতে পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বাহিনী পুলিশ এখনও তাহার স্বাভাবিক ধারায় প্রত্যাবর্তন করিতে পারে নাই। তবে এই পুলিশই তো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্দোলন দেখিলে বেশ তৎপর হইয়া উঠে। এমনকি আন্দোলন দমনে ক্ষেত্রবিশেষে বিগত আমলের অনেক অপকৌশল প্রয়োগেও তাহাদের উৎসাহে কমতি দেখা যায় না। শুধু জানমালের নিরাপত্তা বিধানের প্রশ্ন আসিলেই যদি তাহারা হীনবল হইয়া পড়ে, তাহা হইলে বুঝিতে হইবে সমস্যাটি অন্যত্র। 

কারণ যাহাই হউক, সরকারকে উপলব্ধি করিতে হইবে– তাহাদের দ্বিধা বা নিষ্ক্রিয়তার ফলস্বরূপ শুধু রাউজান নহে, সমগ্র দেশেরই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমাবনতিশীল। এই অবস্থা এমন সময়ে ঘটিতেছে যখন যেই কোনো উপায়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরাইতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তাহাকে যেই কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান লইতে হইবে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করিতে হইবে যেন পুলিশ একটা হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের ফল বলিয়া উপেক্ষা করিতে; কিংবা রাজনৈতিক চাপের অজুহাত দিয়া অপরাধকর্মে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা হইতে বিরত থাকিতে না পারে। রাজনৈতিক দলগুলিরও এই ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করিতে হইবে বলিয়া আমরা মনে করি। সমাজের সচেতন মহলকেও সোচ্চার হইতে হইবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ