মায়ের সঙ্গে সিলেট থেকে ট্রেনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিজ বাড়িতে ফিরছিল এক কিশোরী (১৭)। সিলেট থেকে ভানুগাছ স্টেশন পর্যন্ত আসনবিহীন টিকিট কাটে তারা। ট্রেনের বগিতে ভিড় থাকায় ভুল করে কুলাউড়া জংশন স্টেশনে নেমে পড়ে কিশোরী। কিন্তু মাকে খুঁজে না পেয়ে তার সন্দেহ হয়। তবে তার মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দেয়।

বাড়িতে ফিরতে পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল সেই কিশোরী। তখন আক্তার আলী (২৮) নামের এক গাড়িচালকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তি তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। এমনকি কিশোরীকে জিম্মি করে তার স্বজনের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনায় কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার কুলাউড়া রেলওয়ে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। পরে আক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আক্তারের বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কায়স্থ গ্রামে। তিনি পেশায় প্রাইভেট কারের চালক। কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সিলেটে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করতেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার ও কিশোরীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরীর পরিবার হতদরিদ্র। সিলেটের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক স্বজনকে দেখে গত ৩০ জুন মায়ের সঙ্গে সে বাড়িতে ফিরছিল। ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে মাকে হারিয়ে ফেলে। ভুলে কুলাউড়া রেলস্টেশনে নামার পর গাড়িচালক আক্তার আলী তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। এতে কিশোরী রাজি হয়ে গাড়িতে ওঠেন। আক্তার তাঁকে সিলেটের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখান এবং একপর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।

এজাহারে বলা হয়, নিখোঁজের সময় কিশোরীর কাছে একটি মুঠোফোন ছিল। সিলেটে যাওয়ার পর আক্তার তার মুঠোফোনটি কেড়ে নেন। ওই মুঠোফোনে থাকা কিশোরীর এক আত্মীয়ের সঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে কথা বলেন। তখন তিনি নিজেকে সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে জানান, কিশোরী তাঁর হেফাজতে আছে। তাকে ফেরত পেতে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় গতকাল সোমবার রাতে নগরের কদমতলী এলাকা থেকে কিশোরীকে উদ্ধারের পাশাপাশি আক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কুলাউড়া রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দিপক দেওয়ান মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আক্তার আলী অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাঁকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কিশোরীকে মৌলভীবাজারের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুই শীর্ষ তালেবান নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আফগানিস্তানের তালেবানের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশটির নারী ও কিশোরীদের নানাভাবে দমন–পীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আইসিসি গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসে। এর পর থেকে দেশটিতে নারী ও কিশোরীদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং দেশটির প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগের ‘যুক্তিসংগত ভিত্তি’ রয়েছে।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারী ও কিশোরীদের ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অনেক চাকরি থেকে নারীদের বিরত রাখা।

আফগানিস্তানে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীরা কত দূর ভ্রমণ করতে পারবে, সে বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে তালেবান। এমনকি জনসমক্ষে নারীদের কথা বলার বিষয়েও নির্দেশনা জারি করেছে তারা।

এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের জনগণের ওপর কিছু নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালেবান। তবে তারা নারী ও কিশোরীদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে। জাতিসংঘ এসব বিধিনিষেধকে ‘লিঙ্গবৈষম্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তালেবান। তারা বলেছে, তালেবান এই আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। আদালতের এমন পরোয়ানাকে ‘সুস্পষ্ট শত্রুতামূলক পদক্ষেপ’ এবং ‘বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি অপমান’।

তালেবান সরকারের দাবি, তারা আফগানিস্তানের সংস্কৃতি ও ইসলামি আইন অনুযায়ী নিজস্ব ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।

গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করে আইসিসি। কোনো দেশ এই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে বা বিচার করতে না চাইলে আইসিসি এ উদ্যোগ নেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ