কক্সবাজারের হিমছড়িতে সাগরে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সন্ধান সাত ঘণ্টায়ও মেলেনি। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধারে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাগরের তলদেশে সৃষ্ট গুপ্তখালে তাঁরা আটকে পড়েছেন বলে ধারণা উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের।

আজ সকাল সাতটার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের হিমছড়ি সৈকত এলাকায় সাগরে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন ওই দুই শিক্ষার্থী। তাঁদের সঙ্গে কে এম সাদমান রহমান নামের আরও এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছিলেন। তবে পরে তাঁর লাশ ভেসে আসে।

নিহত সাদমান ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা কে এম আনিছুর রহমানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মো.

ফরহাদ হোসেন হলে থাকতেন তিনি। নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থী হলেন বগুড়ার দক্ষিণ সনসনিয়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে অরিত্র হাসান (২২) ও বগুড়া সদরের নারুলি দক্ষিণের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে আসিফ আহমেদ (২২)। তাঁরা দুজনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ ও আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা সাগরে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর সকাল ১০টা থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফ গার্ড, জেলা প্রশাসনের সৈকতকর্মী, ফায়ার সার্ভিস ও পর্যটন পুলিশের সদস্যরা। উদ্ধারকর্মীরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদমান ও তাঁর সহপাঠীদের প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষা গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। পরীক্ষা শেষে গতকাল বিকেলে সাদমানসহ পাঁচজন কক্সবাজারে বেড়াতে যান। এর মধ্যে তিনজন আজ সকাল সাতটার দিকে হিমছড়ি সৈকত এলাকায় সাগরে গোসল করতে নেমে পানিতে ভেসে যান। কিছুক্ষণ পর সাদমানের লাশ সৈকতে ভেসে এলেও অপর দুজনের খোঁজ মেলেনি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে এখন লঘুচাপ চলছে, এ কারণে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। উত্তাল সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হচ্ছে। এরপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকে গোসলে নেমে বিপদে পড়ছেন। নিহত সাদমানের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজ দুজনকে উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বেলা দুইটা পর্যন্ত তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৈয়বুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ এলাকার ক্যাম্প-ইন-কক্স রিসোর্টে পাঁচ বন্ধু উঠেছিলেন। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাদমানের লাশ সৈকতে আসে। অপর দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফ গার্ডের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সমস্যা হচ্ছে। হিমছড়ি সৈকতে গোসল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তারও কেউ নেই। নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থী গুপ্তখালে আটকা পড়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’

পর্যটন পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক আপেল মাহমুদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ যেন গোসলে নামতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সাগরে গোসলে নেমে মৃত্যুর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত মাসেও ছয়জনের মৃত্যু হয়। জানতে চাইলে সি সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য ২৬ জন লাইফ গার্ড রয়েছেন। তবে হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানীসহ বাকি ১১৫ কিলোমিটার সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো সেখানে কেউ নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স দম ন র হ মছড় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ