গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ওপর থেকে ফেলছে বোমা আর নিচ থেকে ছুঁড়ছে গুলি। এমনকি যেসব ফিলিস্তিনি ত্রাণ নিতে ত্রাণকেন্দ্রে যাচ্ছে সেখানেও গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এরপরেও গাজাবাসীকে জোরপূর্বক স্থানান্তরের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনিরা। মঙ্গলবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজার বাসিন্দা আল-খাইর বলেন, “এটা আমাদের ভূমি। আমরা এটা কার কাছে রেখে যাব, কোথায় যাব?”
সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আতিথ্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প উপকূলীয় ছিটমহল থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের বিতর্কিত উদ্যোগের অগ্রগতির ইঙ্গিত দেন।
মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক নৈশভোজের শুরুতে সাংবাদিকদের নেতানিয়াহু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করছে যারা ফিলিস্তিনিদের ‘উন্নত ভবিষ্যৎ’ দেবে, যা ইঙ্গিত দেয় যে গাজার বাসিন্দারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেতে পারবে।
ট্রাম্পের সাথে এক মতবিনিময় সভায় নেতানিয়াহু বলেন, “আপনি জানেন যদি মানুষ থাকতে চায়, তাহলে তারা থাকতে পারে। কিন্তু যদি তারা চলে যেতে চায় তবে তাদের চলে যেতে হবে। এটি কারাগার হওয়া উচিত নয়। এটি একটি উন্মুক্ত জায়গা হওয়া উচিত এবং মানুষকে স্বাধীনভাবে পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া উচিত।”
ট্রাম্প চলতি বছরের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরিত করার এবং উপত্যকাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরিয়া’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে সাময়িকভাবে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
২৭ বছর বয়সী গাজার বাসিন্দা সাঈদ ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ এবং বারবার অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির পরেও গাজার সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত রয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের নিজস্ব ইচ্ছায় অন্য দেশ ভ্রমণের সুযোগ ও অধিকার আছে, কিন্তু ফিলিস্তিনি হিসেবে আমরা বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করি।”
গাজার ফিলিস্তিনি আবু সামির এল-ফাকাওয়ি বলেন, “আমি গাজা ছেড়ে যাব না। এটি আমার দেশ।”
তিনি আরো বলেন, “যুদ্ধে শহীদ হওয়া আমাদের সন্তানদের এখানে সমাহিত করা হয়েছে। আমাদের পরিবার, আমাদের বন্ধু, আমাদের চাচাতো ভাইবোন- সবাই এখানে সমাহিত। ট্রাম্প, নেতানিয়াহু বা অন্য কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, আমরা এই ভূমিতেই থাকছি।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দুই শীর্ষ তালেবান নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আফগানিস্তানের তালেবানের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশটির নারী ও কিশোরীদের নানাভাবে দমন–পীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আইসিসি গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসে। এর পর থেকে দেশটিতে নারী ও কিশোরীদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং দেশটির প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগের ‘যুক্তিসংগত ভিত্তি’ রয়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারী ও কিশোরীদের ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অনেক চাকরি থেকে নারীদের বিরত রাখা।
আফগানিস্তানে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীরা কত দূর ভ্রমণ করতে পারবে, সে বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে তালেবান। এমনকি জনসমক্ষে নারীদের কথা বলার বিষয়েও নির্দেশনা জারি করেছে তারা।
এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের জনগণের ওপর কিছু নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালেবান। তবে তারা নারী ও কিশোরীদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে। জাতিসংঘ এসব বিধিনিষেধকে ‘লিঙ্গবৈষম্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তালেবান। তারা বলেছে, তালেবান এই আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। আদালতের এমন পরোয়ানাকে ‘সুস্পষ্ট শত্রুতামূলক পদক্ষেপ’ এবং ‘বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি অপমান’।
তালেবান সরকারের দাবি, তারা আফগানিস্তানের সংস্কৃতি ও ইসলামি আইন অনুযায়ী নিজস্ব ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করে আইসিসি। কোনো দেশ এই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে বা বিচার করতে না চাইলে আইসিসি এ উদ্যোগ নেয়।