২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধ এখন আর শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়, এটি এখন ছবি বা দৃশ্যের যুদ্ধও। গাজার ধ্বংস হওয়া হাসপাতাল, অনাহারে কাতরাতে থাকা শিশু, গণকবর ও ধ্বংসস্তূপে সন্তানকে খুঁজতে থাকা বাবার ছবির মতো করুণ চিত্র—সবকিছু এখন মুঠোফোনে ধরা পড়ছে। প্রতিটি ছবিই ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক শক্তিতে মানুষের মনে আঘাত হানছে। এসব তাজা ও জলজ্যান্ত অডিও-ভিডিও ও স্থির ছবির প্রভাব প্রেস কনফারেন্স বা সরকারি ভাষণের চেয়ে অনেক বেশি। এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল এ দৃশ্যগুলো মুছে ফেলতে পারছে না। আগের মতো তারা প্রোপাগান্ডার স্রোতে সেগুলোকে ঢেকে ফেলতেও পারছে না।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যখন গাজায় ত্রাণ বিতরণের জায়গায় মানুষ হত্যা করছিল, সেই দৃশ্য দেখে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ-এর লেখক গিডিয়ন লেভি ২৯ জুন লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েল কি গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে? …গাজা থেকে যেসব সাক্ষ্য আর ছবি উঠে আসছে, তা দেখে খুব বেশি প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না।’ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস–এর দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলপন্থী হিসেবে পরিচিত কলাম লেখক টমাস ফ্রিডম্যানও এখন ইসরায়েলের কথাবার্তায় আর আস্থা রাখছেন না। গত ৯ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে তিনি একটি নিবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার আমাদের মিত্র নয়।’ তিনি যোগ করেন, তারা এমন আচরণ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের জন্য হুমকি।

আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যে হুমকির মুখে পড়ল ইসরায়েল০৪ জুলাই ২০২৫

একসময় ইসরায়েলের গল্প বা ভাষ্যগুলোকে পশ্চিমা মিডিয়ার সম্পাদকীয় নীতিমালা আর ইতিহাসগত অপরাধবোধ রক্ষা করত। কিন্তু স্মার্টফোনের কারণে এখন সেই রক্ষাকবচ ভেঙে গেছে। এখন আমরা আর ইসরায়েলের ব্যাখ্যা শুনে বাস্তবতা বুঝতে চেষ্টা করি না। কারণ, গাজার মানুষই তাদের বাস্তব অবস্থা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে।

যেসব অ্যাপে (যেমন টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, এক্স) গাজার ধ্বংস, কাঁদতে থাকা শিশু বা ত্রাণের লাইনে মানুষকে গুলি করার ভিডিও ছড়াচ্ছে—সেসব অ্যাপ কিন্তু কোনো ঘটনার পেছনের ইতিহাস বা ব্যাখ্যা দেয় না। অ্যাপগুলো শুধু দেখে কোন ছবি বা ভিডিও সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখছে আর সেটাকেই বেশি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আগের প্রজন্মের লোকেরা হয়তো এসব ছবি দেখে চোখ ফিরিয়ে নেন, কিন্তু নতুন প্রজন্ম চোখ আটকে রাখে। প্রতিটি ছবি, প্রতিটি সাইরেনের শব্দ, প্রতিটি ধ্বংসের দৃশ্য তাদের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে।

বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ বিচলিত, ক্ষুব্ধ। এ ক্ষোভ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এখন আর ইসরায়েল শুধু তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে না, তাকে ক্যামেরার লেন্সের সঙ্গেও যুদ্ধ চালাতে হচ্ছে।

এ ছবির যুদ্ধ বা ‘ভিজ্যুয়াল ওয়ার’-এর মানসিক ধাক্কা ইসরায়েলি সমাজের ভেতরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে। বহু বছর ধরে ইসরায়েলিরা নিজেদের বিশ্ববাসীর সামনে ‘নির্যাতিত’ বা ‘আঘাতপ্রাপ্ত’ জাতি হিসেবে দেখিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে তারা বিশ্ববাসীর সহানুভূতি কুড়িয়েছে। কিন্তু এখন প্রতিদিনের ভিডিওতে যখন ইসরায়েলিদের নির্বিচার বোমাবর্ষণ, গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত পাড়া-মহল্লা আর হাড্ডিসার শিশুদের আর্তনাদ দেখা যাচ্ছে, তখন অনেক ইসরায়েলিই গভীর নৈতিক সংকটে পড়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, বিশ্ব আর আগের মতো তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। এখন ইসরায়েলের মধ্যপন্থী বা নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা অনেক মানুষও অস্বস্তি বোধ করছেন। কারণ, গাজার বাস্তব অবস্থাসংবলিত (যেমন ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ি, ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখ, রক্তমাখা রাস্তা) ছবি ইসরায়েলের ‘নৈতিক উচ্চতা’কে ভেঙে দিচ্ছে। প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি সমাজে কথাবার্তার মধ্যে ঢুকে পড়েছে এক নতুন ভয়, ‘বিশ্ব এখন আমাদের কীভাবে দেখছে?’

আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫

আন্তর্জাতিকভাবেও এসব ছবি ইসরায়েলের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে ফেলেছে। যে পুরোনো মিত্ররাষ্ট্রগুলো একসময় চোখ বন্ধ করে ইসরায়েলকে সমর্থন দিত, তারাও এখন চাপের মুখে পড়ছে।

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পার্লামেন্ট সদস্যরা এখন প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলছেন, ইসরায়েলকে অস্ত্র পাঠানো কি উচিত? এ যুদ্ধের সময় তাদের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি কি রাখা উচিত? এখন যুদ্ধক্ষেত্র শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়েছে পার্লামেন্টে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, শহরের কাউন্সিল দপ্তরে, এমনকি গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় কক্ষে। এটা এমন এক যুদ্ধ, যেখানে শুধু শক্তি দিয়ে জেতা যাবে না।

জসিম আল আজ্জায়ি ইরাকি সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক

আল–জাজিরা ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া

ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।

অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।

এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।

দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।

২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩ দাবিই পূরণ চান অনশনরত জবি শিক্ষার্থীরা
  • জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • সানসিল্কের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো ঢাকায় পাকিস্তানি তারকা হানিয়া আমির
  • গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল: প্রথমবারের মতো বলল জাতিসংঘ
  • ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া