খুলনায় টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে সড়ক-নিম্নাঞ্চল, ৮২৪ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন
Published: 8th, July 2025 GMT
টানা ভারী বৃষ্টিতে খুলনা শহরের বেশির ভাগ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। এমন পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের নেওয়া প্রায় ৮২৪ কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গতকাল সোমবার বিকেল চারটা থেকে খুলনায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। মাত্র দুই ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৮২ মিলিমিটার। আগামীকাল বুধবার থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমতে পারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের নতুন রাস্তা মোড়, আবু নাসের হাসপাতাল এলাকা, মুজগুন্নি সড়কের বয়রা পুলিশ লাইন, আহসান আহমেদ রোড, খানজাহান আলী সড়কের রয়েল মোড়, কেএমপি সদর দপ্তর, দোলখোলা মোড়, নতুন বাজার, লবণচরা, টুটপাড়া এলাকার সড়কে হাঁটুপানি। যেসব সড়কে উন্নয়নকাজ চলছে, সেখানে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
টানা বৃষ্টিতে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। আজ সকালে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি।
সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুপানি। রিকশা ভাড়া বেশি দিয়ে আসতে হয়েছে। তারপরও অনেকটা ভিজে গেছি।’ রিকশাচালক জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে লোকজন তেমন বের হতে পারছে না। সকাল থেকে মাত্র দুই-তিনটা ভাড়া হয়েছে। এত কম আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন।’
বয়রা পুলিশ লাইনের সামনের চায়ের দোকানদার নূর ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে পানিতে ডুবে যায়। গতকাল বিকেল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের সব এলাকার রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে আছে। বেচাকেনা একদমই হচ্ছে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের মূল মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ২২টি খাল এখনো দখলমুক্ত বা সংস্কার হয়নি। নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অনেক জায়গায় রাস্তার চেয়ে নালা উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। জলাধার ভরাট হওয়ায় দ্রুত জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নদীতে নামতে পারছে না। উল্টো জোয়ারের সময় পানি শহরের দিকে ঠেলে আসছে। বিল পাবলা ও রায়ের মহলের মতো বড় জলাধার ভরাট হওয়ায় পানি জমার কোনো জায়গা নেই।
খুলনায় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দুদিন ধরে ঝরছে বৃষ্টি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। কেডি ঘোষ সড়ক, ৮ জুলাই.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় টানা বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা, জনদুর্ভোগ
খুলনা শহরে দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রয়েল মোড়, পিটিআই মোড়, ময়লাপোতা, সাত রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সোমবার (৭ জুলাই) সকাল থেকেই মেঘে ঢেকে ছিল খুলনা মহানগরীর আকাশ। চলছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। দুপুর গড়ানোর পরে আরো ঘনীভূত হয় মেঘ। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে শুরু হয় মাঝারি বর্ষণ। রাত ৯টা পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার রাতভর বৃষ্টিপাতের পর আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত চলছিল।
শিক্ষার্থী, পথচারী, নগরবাসী ও ব্যবসায়ীদের বলছেন, সামান্য বৃষ্টিতেও খুলনার রয়েল মোড়সহ নানা জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জনভোগান্তি অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষক বাহারুল ইসলাম বলেছেন, “বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা সময়মতো ক্লাসে আসতে পারে না। বিশেষ করে, মেয়েরা বেশি সমস্যায় পড়ে।”
রিকশাচালক জালাল মোল্লা বলেন, “রিকশা চালিয়ে আমার সংসার চালাতে হয়। বৃষ্টির দিনে ভাড়া কম হয়, ফলে সংসার চালাতে আমার কষ্ট হয়ে যায়।”
মডার্ন ফার্নিচার মোড়ের বাসিন্দা রিয়াজ হোসেন বলেন, “অপরিকল্পিত নগরায়ন, ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করা, বৃষ্টির মৌসুমের আগে রাস্তা মেরামত ও ড্রেনগুলোর সংস্কার না করাসহ নানা কারণে জলাবদ্ধতায় ভুগতে হয় আমাদের।”
খুচরা সবজি বিক্রেতা নাসির ফরাজি বলেন, “বৃষ্টিতে কাস্টমার আসে না, সারা দিনে ৫০০ টাকার সবজি বিক্রি করতে পেরেছি।”
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, “বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত খুলনায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি আজ মঙ্গলবারও অব্যাহত থাকবে। বুধবার থেকে কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/রফিক