দালাই লামাকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার তোড়জোড়
Published: 8th, July 2025 GMT
তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামাকে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন ভারতের শাসক দল বিজেপির নেতারা। তবে দলগতভাবে বিজেপি এই উদ্যোগ নিচ্ছে না। দালাই লামাকে এভাবে সম্মানিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ‘দ্য অল পার্টি ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টারি ফোরাম অন টিবেট’ নামে এক সংগঠন।
এই সংগঠনের আহ্বায়ক বিজেপির সংসদ সদস্য সুজিত কুমার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিব্বতি ধর্মগুরুকে ভারতরত্ন সম্মান দিতে সব দলের সদস্যদের সম্মতি আদায়ের চেষ্টা হচ্ছে। তাঁরা এ জন্য এক সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছেন। ১০০ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর সংগ্রহ হলে তাঁরা আবেদনপত্রটি ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন।
এই সঙ্গে ফোরাম আরও এক উদ্যোগ নিচ্ছে। ফোরামের ১০ সদস্যের কমিটি লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করবে, লোকসভা ও রাজ্যসভার এক বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক। সেখানে দালাই লামাকে ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে।
এই উদ্যোগের সঙ্গে ভারত সরকার কিংবা শাসক দল সরাসরি যুক্ত না হলেও এটা স্পষ্ট, এর পেছনে সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে। চতুর্দশ দালাই লামা ও ভারতে তাঁর অবস্থান চীন কোনো দিন মেনে নেয়নি। এ নিয়ে চীনের স্পর্শকাতরতাও স্পষ্ট। ভারতও কূটনৈতিকভাবে তার মোকাবিলা করতে চায়। চীনের কাছে দালাই লামা রাজনৈতিক চরিত্র হলেও ভারতের চোখে তিনি নিতান্তই বৌদ্ধ ধর্মগুরু।
গত রোববার দালাই লামার ৯০তম জন্মদিন উদ্যাপন হয়। জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই উপলক্ষে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় গিয়েছিলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও রাজীব রঞ্জন সিং। তা ছাড়া অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে পেমা খানডু ও প্রেম সিং তামাংও ধর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা জানানো ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের উপস্থিতি চীন মোটেই পছন্দ করেনি। তারা এ বিষয়ে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানিয়েছে। কিন্তু দালাই লামার বিষয়ে চীনের কোনো ওজর আপত্তি মানতে ভারত প্রস্তুত নয়। বরং এ বিষয়ে ভারতের কৌশলী রাজনীতি যে অব্যাহত থাকছে সংসদ সদস্যদের ওই উদ্যোগই তার প্রমাণ। চীনের আপত্তিকে আমল দিলে বিজেপি নেতাদের এই উদ্যোগে ভারত সরকার বাধা দিত।
তিব্বত প্রসঙ্গে গঠিত সংসদ সদস্যদের এই ফোরাম দালাই লামাকে সংবর্ধিত করার উদ্যোগ নিতে প্রথম বৈঠক করেছিল গত ডিসেম্বরে। তখনই চীন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিল। এবার দ্বিতীয় বৈঠকে সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার অনুরোধও করা হবে, যেখানে বিশ্ব শান্তির জন্য দালাই লামাকে ভাষণ দিতে অনুরোধ করা হবে।
পঞ্চদশ দালাই লামা বাছা নিয়ে এ মুহূর্তে চীনের সঙ্গে চতুর্দশ দালাই লামার বিরোধ তীব্র। চতুর্দশ দালাই লামা ৯০তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে জানিয়েছেন, প্রথা মেনে তিনিই পরবর্তী দালাই লামাকে চিহ্নিত করে যাবেন। চীন চায় তাদের পছন্দের দালাই লামা। সে জন্য তারা তাদের মতো করে এগোতে চাইছে। দালাই লামার উত্তরসূরি কে হবেন, আপাতত তা নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত। চতুর্দশ দালাই লামার পাশে থাকার জন্য ভারতের সমালোচনায় চীন মুখর। নানাভাবে তারা হুমকিও দিচ্ছে। বলছে, দালাই লামাকে সমর্থন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন র ধ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী