অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ৯ থেকে ১৩ জুন যুক্তরাজ্য সফর করবেন। এই সফরে তিনি দেশটির রাজা চার্লস ও প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন।

প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়ায় তা ফেরত আনা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্প্রতি এসব অর্থ উদ্ধার করে জনহিতকর কাজে ব্যবহার করার জন্য একটি বিশেষ ফান্ড গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্য-কানাডা-ফ্রান্সের

রাশিয়া-ইউক্রেন ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করবে: ট্রাম্প

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের অন্যতম প্রধান গন্তব্য যুক্তরাজ্য। তাই পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, উন্নয়ন অংশীদারত্ব,  রোহিঙ্গা সংকট, বিনিয়োগ প্রভৃতি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এই সফরের বিস্তারিত সময়সূচি ও কর্মসূচি তৈরি করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি হবে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি সফর।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন অংশীদারত্ব, রোহিঙ্গা সংকট এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হবেন বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, ড.

ইউনূস বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে চান।

এদিকে, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়েও যুক্তরাজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বর্তমানে রোহিঙ্গা সহায়তায় অর্থায়ন কমে যাওয়ায়, বিশেষ করে ইউএসএইড বৈশ্বিকভাবে অর্থায়ন কমানোর পর ঢাকা যুক্তরাজ্যকে নতুন অর্থায়নের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করবে বলেও কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/হাসান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর জ য প চ র হওয

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে: ট্রাম্প

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক স্থগিতাদেশের মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে। তার আগেই যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। 

সোমবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ৯ জুলাইয়ের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করা হবে।”

আরো পড়ুন:

ব্রিকস দেশগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

টেক্সাসে বন্যায় মৃত বেড়ে ৮১, নিখোঁজ ৪১

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী কার্যত বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে আর্থিক বাজার। এতে দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে বাধ্য হচ্ছে।

গত ২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক হার এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। 

পরে ১০ শতাংশ বাদে সকলের জন্য কার্যকর শুল্কনীতি ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তখন ট্রাম্প জানান, এই ৯০ দিনে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করতে চান। ওই সময় পর্যন্ত দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্কারোপ থেকে ছাড় দেন ট্রাম্প। এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। 

রবিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। সময়সীমার মধ্যে চুক্তি করতে পারেনি-এমন প্রায় ১০০ দেশকে সতর্ক করে দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

ট্রাম্প এবং অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা এর আগে ১ আগস্টের তারিখটি ঘোষণা করেছিলেন। তবে তখন সমস্ত শুল্ক বৃদ্ধি পাবে কি না তা স্পষ্ট ছিল না। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকও সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প শুল্কহার এবং চুক্তিগুলো নির্ধারণ করছেন।

এদিকে রবিবার ট্রাম্প নতুন করে এবার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর জোট ‘ব্রিকস’-এর বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন। 

ট্রাম্প লেখেন, “কোনো দেশ ব্রিকসের আমেরিকাবিরোধী নীতিকে সমর্থন করলে তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই কথার কোনো হেরফের হবে না।”

২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন ব্রিকস প্রতিষ্ঠা করে। জোটটি পরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে এবং গত বছর মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কিছু দেশের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছেন।

রবিবার  বিকেলে ব্রিকস নেতারা একটি যৌথ বিবৃতিতে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিকস নেতারা সতর্ক করে আরো বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।

তবে ট্রাম্পের এই অতিরক্তি শুল্ক আরোপের হুমকি ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যাহত করবে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

রবিবার, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সিএনএন-এর ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’-কে বলেন, আগামী দিনে বাণিজ্য চুক্তির বেশ কয়েকটি বড় ঘোষণা আসতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের আলোচনায় ভালো অগ্রগতি করেছে।

তিনি আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব বেশি বাণিজ্য নেই- এমন ১০০টি দেশকে ট্রাম্প চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করবেন। তাই আমি মনে করি আমরা খুব দ্রুত অনেক চুক্তি দেখতে পাব।”

হোয়াইট হাউজের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান কেভিন হ্যাসেট সিবিএস-এর ‘ফেস দ্য নেশন’-কে বলেন, “আন্তরিকভাবে আলোচনায় জড়িত দেশগুলোর জন্য সময়সীমা বাড়তে পারে। কিছু আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার দিকে রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রিম করে পিছিয়ে যাবে। এ বিষয়ে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন।”  

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ