পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন আগামী দু–এক দিনের মধ্যে ছুটিতে যাচ্ছেন। ছুটি শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হতে পারেন। আর দেশের ২৮তম পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামকে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সরকার এরই মধ্যে আসাদ আলমকে পরবর্তী পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝির দিকে তাঁকে ঢাকায় ফেরানো হচ্ছে।

জানতে চাইলে ওয়াশিংটন থেকে আসাদ আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুনের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় ফেরার জন্য আমাকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ঢাকায় ফেরার বিষয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো দাপ্তরিক আদেশ হাতে পাইনি।’

বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা আসাদ আলম যুক্তরাষ্ট্রের আগে অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি রাষ্ট্রাচারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তখনকার পররাষ্ট্রসচিব মো.

তৌহিদ হোসেনের দপ্তরে পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন আসাদ আলম।

# দু–এক দিনের মধ্যে দায়িত্ব ছাড়ছেন জসীম উদ্দিন # ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্বে রুহুল আলম সিদ্দিক

তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুনে ঢাকায় ফিরেই সরাসরি পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পালন শুরু করতে পারবেন না আসাদ আলম। কারণ, তিনি এখনো অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে কাজ করতে তাঁর কিছুটা সময় লাগবে।

আবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, আগামী দু–এক দিনের মধ্যে জসীম উদ্দিন দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। সে ক্ষেত্রে নতুন পররাষ্ট্রসচিব দায়িত্ব নেওয়ার আগে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন রুহুল আলম সিদ্দিকী। তিনি আগামী ২০ জুন অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে যাবেন।

অবশ্য এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলামের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল; কিন্তু তিনি আজ বৃহস্পতিবার ছুটিতে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

জসীম উদ্দিন দায়িত্ব ছাড়ছেন দু–এক দিনের মধ্যে

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেস্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে পররাষ্ট্রসচিব অপসারণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অপসারণের কোনো বিষয় নেই। পররাষ্ট্রসচিব বিভিন্ন কারণে নিজে থেকে হয়তো সরে যেতে চান এবং আমরা তাঁকে সরে যেতে দিচ্ছি। সরে যেতে চান মানে এই দায়িত্ব থেকে চলে যেতে চান। উনি আগামী দু–এক দিনের মধ্যে দায়িত্বটি ছেড়ে দেবেন।’

জসীম উদ্দিন ছুটিতে যাচ্ছেন কিংবা চাকরি ছাড়ছেন কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘উনি চাকরি ছেড়ে দেবেন কেন? উনি তো চাকরিতে আছেন। উনি যখন চাকরিতে আছেন, দায়িত্ব পরিবর্তন হবে।’

নতুন পররাষ্ট্রসচিব কে হবেন জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, দু–এক দিনের মধ্যে আপনারা জানতে পারবেন।

বাইরের চাপে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বিষয় হলো, যেকোনো সিদ্ধান্তের পেছনে অনেকের স্বার্থ, তাদের বিভিন্ন মতামত, এগুলো থাকেই।

সরকার কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত একজনকে নিয়ে নেয় না, এই রকম বিবেচনায় অনেক সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হয়।’

প্রসঙ্গ সুফিউর রহমান

গত ২০ এপ্রিল প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমানকে। এক মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি। ফলে সাবেক এই কূটনীতিক শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করবেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

সুফিউর রহমানের যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘উনি এখন পর্যন্ত যোগ দেননি। সরকারের সিদ্ধান্ত যখন হবে, তখন যোগ দেবেন, অথবা দেবেন না।’

সুফিউর রহমানের যোগ দেওয়ার বিষয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, জয়েন করতে সমস্যার প্রশ্ন না। এ ব্যাপারে কিছু চিন্তাভাবনা আরও চলছে, তাঁর দায়িত্ব পরিবর্তন বা কোনো কিছু। সেটা যথাসময়ে আপনারা জানতে পারবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রসচ ব হ স ব ত পরর ষ ট রসচ ব পরর ষ ট র উপদ কর মকর ত উপদ ষ ট আলম স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে: ট্রাম্প

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক স্থগিতাদেশের মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে। তার আগেই যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। 

সোমবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ৯ জুলাইয়ের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করা হবে।”

আরো পড়ুন:

ব্রিকস দেশগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

টেক্সাসে বন্যায় মৃত বেড়ে ৮১, নিখোঁজ ৪১

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী কার্যত বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে আর্থিক বাজার। এতে দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে বাধ্য হচ্ছে।

গত ২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক হার এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। 

পরে ১০ শতাংশ বাদে সকলের জন্য কার্যকর শুল্কনীতি ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তখন ট্রাম্প জানান, এই ৯০ দিনে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করতে চান। ওই সময় পর্যন্ত দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্কারোপ থেকে ছাড় দেন ট্রাম্প। এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। 

রবিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। সময়সীমার মধ্যে চুক্তি করতে পারেনি-এমন প্রায় ১০০ দেশকে সতর্ক করে দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

ট্রাম্প এবং অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা এর আগে ১ আগস্টের তারিখটি ঘোষণা করেছিলেন। তবে তখন সমস্ত শুল্ক বৃদ্ধি পাবে কি না তা স্পষ্ট ছিল না। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকও সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প শুল্কহার এবং চুক্তিগুলো নির্ধারণ করছেন।

এদিকে রবিবার ট্রাম্প নতুন করে এবার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর জোট ‘ব্রিকস’-এর বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন। 

ট্রাম্প লেখেন, “কোনো দেশ ব্রিকসের আমেরিকাবিরোধী নীতিকে সমর্থন করলে তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই কথার কোনো হেরফের হবে না।”

২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন ব্রিকস প্রতিষ্ঠা করে। জোটটি পরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে এবং গত বছর মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কিছু দেশের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছেন।

রবিবার  বিকেলে ব্রিকস নেতারা একটি যৌথ বিবৃতিতে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিকস নেতারা সতর্ক করে আরো বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।

তবে ট্রাম্পের এই অতিরক্তি শুল্ক আরোপের হুমকি ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যাহত করবে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

রবিবার, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সিএনএন-এর ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’-কে বলেন, আগামী দিনে বাণিজ্য চুক্তির বেশ কয়েকটি বড় ঘোষণা আসতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের আলোচনায় ভালো অগ্রগতি করেছে।

তিনি আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব বেশি বাণিজ্য নেই- এমন ১০০টি দেশকে ট্রাম্প চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করবেন। তাই আমি মনে করি আমরা খুব দ্রুত অনেক চুক্তি দেখতে পাব।”

হোয়াইট হাউজের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান কেভিন হ্যাসেট সিবিএস-এর ‘ফেস দ্য নেশন’-কে বলেন, “আন্তরিকভাবে আলোচনায় জড়িত দেশগুলোর জন্য সময়সীমা বাড়তে পারে। কিছু আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার দিকে রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রিম করে পিছিয়ে যাবে। এ বিষয়ে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন।”  

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ