মেরুদণ্ড বা স্পাইনাল কলাম স্বাভাবিক অবস্থান থেকে একটু ডানে বা বাঁয়ে কাত হয়ে যাওয়াকে স্কোলিউসিস বলে। স্পাইনাল কলামে মোট ৩৩টি হাড় থাকে। এ হাড়গুলোকে আমরা চিনি ভার্টিব্রা নামে।

স্পাইনাল কলামকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়—ঘাড় বা সার্ভাইক্যাল, পিঠ বা থোরাক্স, লাম্বার বা কোমর, স্যান্ড্রাল বা নিতম্ব, ককসিস বা লেজ। স্কোলিওসিস সাধারণত ঘাড়, পিঠ ও কোমরে হয়ে থাকে।

কাদের হয়, কেন হয়

মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার সমস্যা সাধারণত বেশি হয় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের। তবে যেকোনো বয়সে এটা হতে পারে। বয়সের কারণে হাড় ক্ষয় হতে থাকে, তখন সফট টিস্যু দুর্বল হয়ে যায়।

এক পাশে কাত হয়ে টিভি দেখা, এক পাশে বাঁকা হয়ে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করা, দীর্ঘ সময় উঁচু–নিচু জায়গায় বসে কাজ করা, ফোমের বিছানায় কাত হয়ে শোয়া, বাঁকা হয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। মেরুদণ্ডের দুই পাশের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে এমন হয়।

লক্ষণ

সোজা হয়ে বসতে না পারা।

সোজা হয়ে হাঁটতে না পারা।

দেহের ওজন বা ভর সমানভাবে দুই পায়ে দিতে না পারা।

এক পাশে কাত হয়ে হাঁটা।

হাতে ভারী কিছু বহন করতে না পারা।

সামনে ঝুঁকে কোনো কাজ করতে না পারা।

কোমরে ব্যথা বোধ করা।

বেশিক্ষণ হাঁটতে না পারা।

চিকিৎসা

শুধু ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ ভালো করা সম্ভব নয়। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। এনএসএআইডি, মাসল রিলাক্সেন্টের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, সাধারণ ব্যায়াম, স্ট্রেচিং ব্যায়াম, স্ট্রেনদেনিং ও আইসোমেট্রিক ব্যায়াম, হোল্ড রিলাক্স বা স্টেবিলাইজেশন ব্যায়াম করতে হবে। সঠিকভাবে হাঁটাচলার চেষ্টা করতে হবে। সামনে ঝুঁকে কাজ করা যাবে না। ভারী বস্তু বহন করবেন না। বেশি সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।

তাসমিন আরা: ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত হয় ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে: ট্রাম্প

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক স্থগিতাদেশের মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে। তার আগেই যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। 

সোমবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ৯ জুলাইয়ের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করা হবে।”

আরো পড়ুন:

ব্রিকস দেশগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

টেক্সাসে বন্যায় মৃত বেড়ে ৮১, নিখোঁজ ৪১

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী কার্যত বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে আর্থিক বাজার। এতে দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে বাধ্য হচ্ছে।

গত ২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক হার এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। 

পরে ১০ শতাংশ বাদে সকলের জন্য কার্যকর শুল্কনীতি ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তখন ট্রাম্প জানান, এই ৯০ দিনে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করতে চান। ওই সময় পর্যন্ত দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্কারোপ থেকে ছাড় দেন ট্রাম্প। এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। 

রবিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। সময়সীমার মধ্যে চুক্তি করতে পারেনি-এমন প্রায় ১০০ দেশকে সতর্ক করে দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

ট্রাম্প এবং অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা এর আগে ১ আগস্টের তারিখটি ঘোষণা করেছিলেন। তবে তখন সমস্ত শুল্ক বৃদ্ধি পাবে কি না তা স্পষ্ট ছিল না। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকও সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প শুল্কহার এবং চুক্তিগুলো নির্ধারণ করছেন।

এদিকে রবিবার ট্রাম্প নতুন করে এবার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর জোট ‘ব্রিকস’-এর বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন। 

ট্রাম্প লেখেন, “কোনো দেশ ব্রিকসের আমেরিকাবিরোধী নীতিকে সমর্থন করলে তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই কথার কোনো হেরফের হবে না।”

২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন ব্রিকস প্রতিষ্ঠা করে। জোটটি পরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে এবং গত বছর মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কিছু দেশের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছেন।

রবিবার  বিকেলে ব্রিকস নেতারা একটি যৌথ বিবৃতিতে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিকস নেতারা সতর্ক করে আরো বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।

তবে ট্রাম্পের এই অতিরক্তি শুল্ক আরোপের হুমকি ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যাহত করবে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

রবিবার, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সিএনএন-এর ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’-কে বলেন, আগামী দিনে বাণিজ্য চুক্তির বেশ কয়েকটি বড় ঘোষণা আসতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের আলোচনায় ভালো অগ্রগতি করেছে।

তিনি আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব বেশি বাণিজ্য নেই- এমন ১০০টি দেশকে ট্রাম্প চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করবেন। তাই আমি মনে করি আমরা খুব দ্রুত অনেক চুক্তি দেখতে পাব।”

হোয়াইট হাউজের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান কেভিন হ্যাসেট সিবিএস-এর ‘ফেস দ্য নেশন’-কে বলেন, “আন্তরিকভাবে আলোচনায় জড়িত দেশগুলোর জন্য সময়সীমা বাড়তে পারে। কিছু আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার দিকে রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রিম করে পিছিয়ে যাবে। এ বিষয়ে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন।”  

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ