Samakal:
2025-07-09@10:30:31 GMT

কার জন্য ৩৪ কোটি টাকার সেতু

Published: 24th, May 2025 GMT

কার জন্য ৩৪ কোটি টাকার সেতু

ফেনীর তিন উপজেলায় ৩৪ কোটি ব্যয়ে চারটি সেতু নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তিন বছর আগে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। এ কারণে সেতুর সুফল পাচ্ছেন না মানুষ। এখন এলজিইডি বলছে, তিনটি সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা তৈরি হয়েছে, আগামী বছরের জুনের আগে এই জটিলতা কাটার সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়দের প্রশ্ন, আগে সংযোগ সড়ক তৈরি না করে কেন সেতু করা হলো? এখন যদি অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা না যায় তাহলে সরকারের ৩৪ কোটি টাকাই জলে যাবে।  
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘চারটি সেতুর মধ্যে তিনটির সংযোগ সড়ক নির্মাণে জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। একটি অধিগ্রহণ ছাড়া করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর জমি অধিগ্রহণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সেতুগুলোর সংযোগ সড়কের জায়গা নিয়ে জটিলতা আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নিরসন হবে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফেনীর দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা থেকে বেকের বাজার সড়ক ও ছোট ফেনী নদীর ওপর ৬০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স ছালেহ আহমদ। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনও সেতুর সংযোগ সড়কসহ ৩০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। অন্যদিকে, একই উপজেলার উত্তর জয়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়াতের জন্য সিলোনিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স হক ট্রেডার্স। ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি। সেতুর কাজ বাকি ৭ শতাংশ।
ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নে মুহুরী নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দীর্ঘ মাওলানা ওবায়দুল হক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর থেকে ভোরবাজারে যাতায়াতের জন্য কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো সেতুরই সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভুঞা ও বেকের বাজার সড়কের মোমারিজপুর ছোট ফেনী নদীর ওপর ১০টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু। যার উচ্চতা মাটি থেকে ১০-১২ ফুট। অথচ সেতুর দুই পাশে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। একই চিত্র দেখা যায় উপজেলায় উত্তর জয়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়াতের জন্য সিলোনিয়া নদীর ওপর নির্মাণ সেতুতেও। নির্মাণের তিন বছর পার হলেও তৈরি হয়নি সংযোগ সড়ক। সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ার সেতু দুটিও সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না। 
মোমারিজপুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট ফেনী নদীর সেতুটি আমাদের উপকারের জন্য করা হয়েছে। উপকারের পরিবর্তে এটি এখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুতে ওঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। সেতু নির্মাণের জন্য আমার দোকান ভেঙে দিয়েছে ঠিকাদার। বলেছিল সেতু নির্মাণ শেষে দোকান আবার ঠিক করে দেবে।  সেতুর কাজ বাকি রেখে ঠিকাদার পালিয়ে গেছে। আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে।’
উত্তর জয়লস্করের জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণ হয়েছে তিন-চার বছর আগে। কিন্তু এখনও সংযোগ সড়টি হয়নি। এটা একটা অপরিকল্পিত সেতু, সরকারি টাকা লোপাটের জন্য করা হয়েছে।’
সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের আবদুর রহিম বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সেতুর সুফল এলাকাবাসী পাচ্ছেন না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
মোমারিজপুর গ্রামের ফাতেমা খাতুন ও রহিমা বেগম বলেন, ‘সেতুর কাজের সময় নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। বন্যার সময় সেই বাঁধ দিয়ে পানি যেতে পারেনি। এখন বর্ষায় খালের পানি আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে যায়। আমাদের বাড়ি, নলকূপ, বাথরুমের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশও যাওয়ার পথে। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল ব্লক দিয়ে নদীভাঙন রোধ করবে। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু অবকাঠামো নির্মাণ হয়ে গেছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা যদি আমাদের কাছে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়, সেই সাথে নিয়ম অনুযায়ী যদি ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করে তাহলে অধিগ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না। সেতুগুলো চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স য গ সড়ক ন র ম ণ র স য গ সড়ক ন র ম ণ কর উপজ ল র ম বল ন ৩৪ ক ট র জন য আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম নগরে নালায় পড়ে তিন বছরের শিশুর মৃত্যু

চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকায় নালায় পড়ে তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরের দিকে নগরের হালিশহর এ ব্লক এলাকায় নালায় পড়ে শিশুটি নিখোঁজ হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানায়।

হালিশহর থানার উপপরিদর্শক ইমন দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। আমাদের একটি দল ও ফায়ার সার্ভিস সেখানে আছে। বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।’

নালায় পড়ে মৃত্যু চট্টগ্রাম নগরে এবারই প্রথম নয়। গত ছয় বছরে নগরে খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ২ জন, ২০২১ সালে ৫, ২০২৩ সালে ৩, ২০২৪ সালে ৩ ও চলতি বছর ১ জন।

সবশেষ নিখোঁজ হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে নগরের চাক্তাই খাল থেকে উদ্ধার করা হয় নিখোঁজ থাকা শিশু সেহরিশের নিথর দেহ। আগের দিন রাত আটটার দিকে কাপাসগোলার হিজড়া খালে তলিয়ে যায় সে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ