Samakal:
2025-09-18@04:58:19 GMT

কার জন্য ৩৪ কোটি টাকার সেতু

Published: 24th, May 2025 GMT

কার জন্য ৩৪ কোটি টাকার সেতু

ফেনীর তিন উপজেলায় ৩৪ কোটি ব্যয়ে চারটি সেতু নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তিন বছর আগে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। এ কারণে সেতুর সুফল পাচ্ছেন না মানুষ। এখন এলজিইডি বলছে, তিনটি সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা তৈরি হয়েছে, আগামী বছরের জুনের আগে এই জটিলতা কাটার সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়দের প্রশ্ন, আগে সংযোগ সড়ক তৈরি না করে কেন সেতু করা হলো? এখন যদি অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা না যায় তাহলে সরকারের ৩৪ কোটি টাকাই জলে যাবে।  
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘চারটি সেতুর মধ্যে তিনটির সংযোগ সড়ক নির্মাণে জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। একটি অধিগ্রহণ ছাড়া করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর জমি অধিগ্রহণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সেতুগুলোর সংযোগ সড়কের জায়গা নিয়ে জটিলতা আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নিরসন হবে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফেনীর দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা থেকে বেকের বাজার সড়ক ও ছোট ফেনী নদীর ওপর ৬০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স ছালেহ আহমদ। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনও সেতুর সংযোগ সড়কসহ ৩০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। অন্যদিকে, একই উপজেলার উত্তর জয়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়াতের জন্য সিলোনিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স হক ট্রেডার্স। ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও অধিগ্রহণ জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি। সেতুর কাজ বাকি ৭ শতাংশ।
ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নে মুহুরী নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দীর্ঘ মাওলানা ওবায়দুল হক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর থেকে ভোরবাজারে যাতায়াতের জন্য কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো সেতুরই সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভুঞা ও বেকের বাজার সড়কের মোমারিজপুর ছোট ফেনী নদীর ওপর ১০টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু। যার উচ্চতা মাটি থেকে ১০-১২ ফুট। অথচ সেতুর দুই পাশে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। একই চিত্র দেখা যায় উপজেলায় উত্তর জয়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়াতের জন্য সিলোনিয়া নদীর ওপর নির্মাণ সেতুতেও। নির্মাণের তিন বছর পার হলেও তৈরি হয়নি সংযোগ সড়ক। সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ার সেতু দুটিও সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না। 
মোমারিজপুর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট ফেনী নদীর সেতুটি আমাদের উপকারের জন্য করা হয়েছে। উপকারের পরিবর্তে এটি এখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুতে ওঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। সেতু নির্মাণের জন্য আমার দোকান ভেঙে দিয়েছে ঠিকাদার। বলেছিল সেতু নির্মাণ শেষে দোকান আবার ঠিক করে দেবে।  সেতুর কাজ বাকি রেখে ঠিকাদার পালিয়ে গেছে। আমাদের কষ্ট করতে হচ্ছে।’
উত্তর জয়লস্করের জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণ হয়েছে তিন-চার বছর আগে। কিন্তু এখনও সংযোগ সড়টি হয়নি। এটা একটা অপরিকল্পিত সেতু, সরকারি টাকা লোপাটের জন্য করা হয়েছে।’
সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের আবদুর রহিম বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সেতুর সুফল এলাকাবাসী পাচ্ছেন না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
মোমারিজপুর গ্রামের ফাতেমা খাতুন ও রহিমা বেগম বলেন, ‘সেতুর কাজের সময় নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। বন্যার সময় সেই বাঁধ দিয়ে পানি যেতে পারেনি। এখন বর্ষায় খালের পানি আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে যায়। আমাদের বাড়ি, নলকূপ, বাথরুমের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশও যাওয়ার পথে। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল ব্লক দিয়ে নদীভাঙন রোধ করবে। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু অবকাঠামো নির্মাণ হয়ে গেছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা যদি আমাদের কাছে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠায়, সেই সাথে নিয়ম অনুযায়ী যদি ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করে তাহলে অধিগ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না। সেতুগুলো চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স য গ সড়ক ন র ম ণ র স য গ সড়ক ন র ম ণ কর উপজ ল র ম বল ন ৩৪ ক ট র জন য আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ