কৃষিতে নারীর শ্রম সস্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেই অধিকার
Published: 9th, July 2025 GMT
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়নটি যমুনা নদীর তীরবর্তী। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো। বালুগ্রাম দক্ষিণের মর্জিনা বেগম (৪৫) ডান হাতের চার আঙুল দেখিয়ে বললেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কমপক্ষে চারবার বন্যায় ডোবে তাঁদের গ্রাম। বন্যার হিসাব করেই ফসল ও সবজির আবাদ করা হয়। তবে এ বছর ঈদুল আজহার আগে চার-পাঁচ দিনের বন্যা সেই হিসাবেও ‘গন্ডগোল’ বাধায়।
আকস্মিক সেই বন্যায় ফসল নষ্ট হয়। রোজগারহীন হয়ে পড়েন কৃষি শ্রমজীবী মর্জিনার মতো অন্য নারীরা। তাঁদের মধ্যে মোসাম্মৎ সীমা বেগমের মতো কেউ কেউ সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন। কীভাবে ক্ষতি সামলাবেন, সেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে তাঁদের কপালে।
কৃষিতে ছোট-বড় যেকোনো ক্ষতিরই ভাগ নিতে হয় মর্জিনা বেগম, সীমা বেগম, বিজলি আক্তারদের। তবে আয়ের ভাগ বা মজুরি তাঁরা পুরুষের সমান পান না।
১৭ ও ১৮ জুন চুকাইবাড়ীর বালুগ্রাম দক্ষিণ ও যমুনার চর এলাকায় গিয়ে কথা হয় অন্তত ১৫ জন কৃষিজীবী নারীর সঙ্গে। তাঁরা সবাই পুরুষের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মজুরি পান। কেউ কেউ পারিবারিক জমিতে নিয়মিত খাটেন, অথচ লাভের অর্থ পান না। কারও কিছু জমির মালিকানা থাকলেও ফসল উৎপাদন, বিক্রি বা আয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। আবার জমির দলিল না থাকায় কৃষিঋণ ও বিনা মূল্যের কৃষি উপকরণও পান না তাঁরা। সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষিতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে, বিপরীতে কমছে পুরুষের সংখ্যা।
আরও পড়ুনকৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সেবা ও শিল্পে কমেছে ০৯ মার্চ ২০২৫কৃষিজীবী নারী বাড়ছেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০২২) অনুসারে, প্রধান অর্থনৈতিক খাত হিসেবে কৃষিতে সবচেয়ে বেশি ৪৫ শতাংশ জনবল (১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীরা) নিয়োজিত। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী, ১৯ শতাংশ পুরুষ। সংখ্যার হিসাবে কৃষি খাতে অর্থাৎ কৃষি, বনায়ন ও মৎস্যকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ৩ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার জন। নারী শ্রমশক্তির মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ কৃষিজ, বনজ ও মৎস্যকর্মী হিসেবে নিয়োজিত। শহরের চেয়ে গ্রামে নারী ও পুরুষের কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকার হার ১০ শতাংশ বেশি।
২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে সময় নারীদের ৬০ শতাংশ ও পুরুষদের ৩২ শতাংশ কৃষিতে যুক্ত ছিলেন।
কৃষিকাজ বলতে এখন বোঝানো হয় শস্য উৎপাদন, গবাদিপশু পালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও বনায়ন বা বাড়ির আশপাশে গাছ লাগানো ইত্যাদি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ইসমত আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অকৃষি কাজে পুরুষের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষিকাজে মজুরি ও সামাজিক মর্যাদা কম—এমন মনোভাব থেকে বাড়ির পুরুষেরা শহরে পড়াশোনা ও চাকরির জন্য এবং বিদেশে শ্রমিক হিসেবে চলে যাচ্ছেন। ফলে গ্রামে কৃষির দেখভালের দায়িত্ব পড়ছে নারীর ওপর। নারীরাই কৃষি টিকিয়ে রাখছেন। বিশেষ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি।
শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুসারে, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কৃষির হার (সরকারি ও বেসরকারি সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায়) ১ শতাংশের কিছু বেশি, অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ৪৪ শতাংশ। আর নারীদের প্রায় ৯৭ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষিতে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে পুরুষের হার ৭৮ শতাংশ।
সস্তা শ্রম আর অধিকার বঞ্চনার মধ্যেও কৃষিতে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ রমশক ত
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২ সালের ডিগ্রি পাস পরীক্ষার সাময়িক সনদ–ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ শুরু
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২০২২ সালের ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষার সাময়িক সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট বিতরণ শুরু হয়েছে ৩ জুলাই, চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
নিচে উল্লিখিত আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট কলেজের প্রাধিকার পাওয়া প্রতিনিধির মাধ্যমে সাময়িক সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণ করতে হবে।
নির্ধারিত বিভাগ ও জেলার নাম—১. রাজশাহী আঞ্চলিক কেন্দ্র—রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভেড়ামারা সরকারি কলেজ এবং কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর কলেজ।
বিতরণের স্থান ও ঠিকানা: রাজশাহী আঞ্চলিক কেন্দ্র, বাড়ি নম্বর ৩৫৪, বালিয়া পুকুর বড় বটতলা, ঘোড়ামারা, রাজশাহী। ফোন: ০৭২১-৭৬২১৪১।
২. বগুড়া আঞ্চলিক কেন্দ্র—সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা।
বিতরণের স্থান ও ঠিকানা: বগুড়া আঞ্চলিক কেন্দ্র, মাটিঢালীমোড় বারপুর (ডায়াবেটিক) হাসপাতালসংলগ্ন, বগুড়া। ফোন: ০১৯১২-৪০৮৫৭০।
৩. সিলেট আঞ্চলিক কেন্দ্র—সিলেট জেলা, সুনামগঞ্জ জেলা, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, রাজানগর, জুরি ও কুলাউড়া উপজেলা।
বিতরণের স্থান ও ঠিকানা: সিলেট আঞ্চলিক কেন্দ্র, আহাদ ভিলা, পাঠানটোলা পয়েন্ট, সিলেট। ফোন: ০৮২১-৭২৯১০২।
৪. হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্র—হবিগঞ্জ জেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা; নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা।
বিতরণের স্থান ও ঠিকানা: হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্র, হোল্ডিং নম্বর ৩৩, ওয়ার্ড নম্বর ২, দাউদনগর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ। ফোন ০১৭১৬–৫৬৩০৩৭,০১৭৭৭–৭৮৯০৪৯।
৫. ঢাকা বিভাগ—ঢাকা মহানগর, ময়মনসিংহ বিভাগ, কুমিল্লা জেলা, চাঁদপুর জেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা।
বিতরণের স্থান ও ঠিকানা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, গাজীপুর। ফোন: ০২-৯৯৬৬৯১৫৬৭।
দরকারি তথ্য—১। প্রাধিকার পাওয়া প্রতিনিধিকে সংশ্লিষ্ট কলেজের পক্ষে সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট গুণে বুঝে নিতে হবে।
২। সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট কম/বেশি/ডাবল প্রিন্ট হলে, এক কলেজের সনদ–ট্রান্সক্রিপ্ট ভুলবশত অন্য কলেজে চলে গেলে, এ ছাড়া বিতরণ করা সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট–সম্পর্কিত যেকোনো ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হলে তা উল্লেখিত বিতরণের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর পত্র বা প্রতিনিধি মারফত অবগত করে সমাধান করতে হবে। উক্ত সময়ের পর কোনো ধরনের অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না। এ–সংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
* বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট