বিদ্যালয়ে না গিয়ে বাবার সঙ্গে পেঁয়াজখেতে কাজ করছিল রাফিউল ইসলাম (১০)। বাবাও খুশি সহযোগী হিসেবে ছেলেকে কাছে পেয়ে। খবর পেয়ে মাঠে হাজির হন রাফিউলের শিক্ষক ইকবাল হোসেন। মাঠ থেকে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। এখন সে নিয়মিত ছাত্র।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন এভাবে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে ফেরান। পাশাপাশি দুর্বল শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনায় ভালো হয়, সেই চেষ্টা করেন।

সহকর্মী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন ইকবাল হোসেন। এরপর বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ ভালো হয়। প্রত্যেক শিক্ষকের প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার ‘হোম ভিজিট’ করার নিয়ম থাকলেও তিনি একাধিকবার ভিজিট করেন। বিদ্যালয়ের টিফিনের সময় ছাড়াও ছুটির পর পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকা ও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাড়ি যান তিনি। সহকর্মীদেরও বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন কোন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ও পড়ালেখায় দুর্বল, খোঁজখবর নিয়ে টিফিনের সময় ও বিদ্যালয় ছুটির পর তাদের বাড়ি যান ইকবাল হোসেন। বাড়িতে না থাকলে যেখানে শিক্ষার্থী থাকে, সেখানে যান। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অনেক ক্ষেত্রে শিশুশ্রমে ব্যবহার করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ফেরান। কাজটি তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে করে আসছেন।

প্রধান শিক্ষকের হোম ভিজিট ও দুর্বলদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার সুফল পেতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একসময়ের অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা এখন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসছে। পড়ালেখায়ও উন্নতি হয়েছে বলে অভিভাবক ও শিক্ষকেরা বলছেন।

কোনাবাড়িয়া গ্রামের অভিভাবক রেনুকা খাতুন বলেন, তাঁর ছেলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। জ্বরের কারণে একটানা দুই দিন স্কুলে যেতে পারেনি। পরদিন প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন কিছু খাবার নিয়ে বাড়িতে হাজির হন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকেরা এভাবে বাড়ি এসে খোঁজখবর নেওয়ায় তাঁরা খুশি।

প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, হোম ভিজিটের নির্দেশনা আছে। তিনি কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে না এলে বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেন। টিফিনের সময় ও বিদ্যালয় ছুটি শেষে অনুপস্থিত ও দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে কাজটি করেন। বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া ছাড়া বিদ্যালয়ে এনে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতি আলাদা যত্ন নেন। এসব করতে ভালো লাগে। তাঁর এ কাজে সহকর্মী, শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিভাবকেরা সহযোগিতা করেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টিফিনের সময় শিক্ষকদের তিন মাসে একবার হোম ভিজিটের নির্দেশনা আছে। কোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়মিত কাজটি করেন, যা প্রশংসনীয়। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। তাঁকে দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ফ ন র সময় দ র বল

এছাড়াও পড়ুন:

তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন

নাটক, সিনেমা কিংবা ওয়েব—সব প্ল্যাটফর্মেই তিনি সরব। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, এই অভিনেতা চাকরির ফাঁকে শুটিং করেন। একসঙ্গে দুই জায়গায় মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। এ কারণে দু–তিন মাস পরপরই সিদ্ধান্ত নেন, চাকরি ছাড়বেন। তাঁর এই চাকরি ছাড়ার কথা শুনলেই এখন সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন। এই অভিনেতার নাম মোস্তফা মন্ওয়ার। আজ তাঁর জন্মদিন।

এই অভিনেতা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, চাকরি ছাড়ার কথা তিন-চার মাস পরপর বলবেন—এটা সহকর্মীরা ধরেই নিয়েছেন। কারণ, শুটিংয়ে সময় দিতে হয়। অফিসেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।

মোস্তফা মন্ওয়ার বলেন, ‘দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে আমি অভিনয় ও চাকরি একসঙ্গে করছি। অনেকবার চেয়েছি চাকরি ছেড়ে শুধু শুটিং শুরু করি। কিন্তু কোনোভাবেই এটা হচ্ছে না। অর্থনৈতিক কারণে অভিনয়কেই শুধু পেশা হিসেবে নিতে পারছি না। চাকরিও ছাড়তে পারছি না। এর আগে চার-পাঁচবার চাকরি ছেড়েছি। কিন্তু আবার চাকরিতেই ফিরতে হয়েছে। ছুটির দিনে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। শুটিংয়ে যাই।’

মোস্তফা মন্ওয়ার। ছবি: ফেসবুক থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার্থীদের মানবিক শিক্ষায় উৎসাহিত করতে বন্দরের দুটি স্কুলে ‍ডিসি
  • তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন