একটি গ্যালাক্সি আরেকটিকে লক্ষ্য করে তীব্র বিকিরণ ছুড়ছে। এর পরপরই সেটি পিছু হটলে আরেকটি গ্যালাক্সি সামনে এগিয়ে তীব্র বিকিরণ নির্গত করছে। বারবার তারা সেকেন্ডে ৫০০ কিলোমিটার গতিতে একে অপরকে লক্ষ্য করে বিকিরণ ছুড়ে দেয়। মহাবিশ্বের দুই গ্যালাক্সির এই রোমাঞ্চকর লড়াই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে দেখা গেছে, ভয়ংকর লড়াইয়ে একটি গ্যালাক্সির নতুন তারা তৈরির সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। মহাবিশ্বের দূরবর্তী গভীরে এ সংঘর্ষকে মজা করে ‘মধ্যযুগীয় লড়াই’য়ের সঙ্গে তুলনা করেন গবেষণাটির সহ-প্রধান ও ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট ডি’অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডি প্যারিসের গবেষক প্যাসকুইয়ার নোটারডেম। তিনি বলেন, আমরা এটিকে মহাজাগতিক লড়াই বলি। তবে এ লড়াইয়ে কিছু গ্যালাকটিক নাইটদের খুব অন্যায্য সুবিধা রয়েছে। যেমন কিছু গ্যালাক্সি তার প্রতিপক্ষকে বিকিরণের বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করার জন্য কোয়েজার ব্যবহার করে।
কোয়েজার হলো কিছু দূরবর্তী গ্যালাক্সির উজ্জ্বল কেন্দ্র। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল চালিত এ কেন্দ্রগুলো প্রচুর বিকিরণ নির্গত করে। কোয়াজার ও গ্যালাক্সির একত্রীকরণ এক সময় অনেক বেশি সাধারণ ছিল। মহাবিশ্বের প্রথম কয়েক বিলিয়ন বছরে এ প্রক্রিয়া আরও ঘন ঘন দেখা যেত। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মহাবিশ্বের আরও গভীরে দৃষ্টি দেন। এ মহাজাগতিক লড়াই থেকে আলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে ১ হাজার ১০০ কোটি বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। তাই আমরা এখন সেটাই দেখতে পাচ্ছি, যখন মহাবিশ্ব তার বর্তমান বয়সের মাত্র ১৮ শতাংশ ছিল।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের আইওফে ইনস্টিটিউটের গবেষক সের্গেই বালাশেভ ব্যাখ্যা করেন, এখানে আমরা প্রথমবারের মতো একটি সাধারণ গ্যালাক্সির গ্যাসের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ওপর সরাসরি কোয়েজারের বিকিরণের প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। নতুন পর্যবেক্ষণগুলো ইঙ্গিত দেয়, কোয়েজারের নির্গত বিকিরণ সাধারণ গ্যালাক্সির গ্যাস ও ধুলোর মেঘকে ব্যাহত করে। এটি ক্ষুদ্র ও ঘন অঞ্চলগুলোকে পেছনে ফেলে দেয়। ফলে গ্যালাক্সির তারা গঠন ব্যাহত হয়।
এতে কেবল আহত গ্যালাক্সিই রূপান্তরিত হচ্ছে না। বালাশেভ ব্যাখ্যা করেন, এ পরিবর্তন গ্যালাক্সির কেন্দ্রগুলোয় অবস্থিত সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলে বিপুল পরিমাণে গ্যাস নিয়ে আসবে বলে মনে করা হয়। মহাজাগতিক এ লড়াইয়ে জ্বালানির নতুন মজুত কোয়াসারকে শক্তি জোগানো ব্ল্যাকহোলের নাগালের মধ্যে আনা হয়। ব্ল্যাকহোল যখন কাছে আসে কোয়াসার তার আক্রমণ চালিয়ে যেতে পারে।
এই গবেষণাটি চিলির আতাকামা মরুভূমিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপে আটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে ও এক্স শুটার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। আটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারের হাই রেজুলেশন জ্যোতির্বিদদের দুটি একত্রিত ছায়াপথকে স্পষ্টভাবে আলাদা করতে সাহায্য করেছে। এগুলো এত কাছাকাছি যে তারা পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণগুলোয় একক বস্তুর মতো দেখায়। এক্স শুটারের সাহায্যে গবেষকরা সাধারণ গ্যালাক্সির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কোয়েজারের আলো বিশ্লেষণ করেছেন। সূত্র: সিএনএন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উইম্বলডনে ছেলেদের ট্রফিতে কেন আনারস
ট্রফিটি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। রূপায় মোড়ানো ১৮ ইঞ্চি উচ্চতার ট্রফি। উইম্বলডনের সবুজ গালিচায় ছেলেদের এককে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোনো পুরুষ প্রতিযোগী যখন এ ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরেন, তখন সেই সাফল্যের গর্বই অন্য রকম।
তবে উইম্বলডনে ছেলেদের এককে এই ট্রফিটি ভালোভাবে খেয়াল করলে একটি বিষয় চোখে পড়তে পারে। ট্রফিটির মাথায় যে ছোট্ট একটি আনারস! মানে দেখতে আনারসের মতোই লাগে। দুনিয়ায় এত কিছু থাকতে উইম্বলডনের ট্রফির মাথায় কেন আনারস বসানো, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠতেই পারে।
উত্তর দিয়েছে বিবিসি। আনারস খুব বেশি পাওয়া যায় না, এমন ভেবে ফলটিকে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ধরে ট্রফির মাথায় তার ভাস্কর্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, আনরস ফল হিসেবে তো অপ্রতুল হওয়ার কথা নয়? বিবিসি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নিয়ে গেছে অনেক বছর আগে।
আরও পড়ুনপ্রতিবেশীদের কটূক্তি সইতে না পেরে টেনিস খেলোয়াড় মেয়েকে গুলি করে মারলেন বাবা৩ ঘণ্টা আগেবছরে চারটি গ্র্যান্ড স্লাম টেনিসের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয় ১৮৭৭ সালে। উনিশ শতকে শেষার্ধে ব্রিটেনে আনারস বেশ অপ্রতুল, দামি এবং অভিজাত ফল ছিল। যদিও নাবিক ও অনুসন্ধানকারী ক্রিস্টোফার কলম্বাস ৪০০ বছর আগেই এই ফলটি ইউরোপে প্রথমবারের মতো ফিরিয়ে এনেছিলেন। বিংশ শতকের শুরুর দশকে পশ্চিম ইউরোপে রপ্তানির জন্য হাওয়াই আনারস প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। এ কারণে আনারস বেশ মর্যাদাপূর্ণ ফল ছিল তখন।
উইম্বলডনে গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হন কার্লোস আলকারাজ