‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে আপনারা কালো ব্যাজ ধারণ করে শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এখন আপনারা অফিস চলতে দেবেন না বলে হুমকি দেন। ৫ আগস্টের আগে শেখ হাসিনার চোখে আঙুল দিয়ে, শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আপনারা কিন্তু কেউ পদত্যাগ করেন নাই।’

আজ সোমবার সকালে এনসিপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার পথসভা কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচি শুরুর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট এলাকার বিপ্লব উদ্যানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় এক সাংবাদিক সচিবালয়ে বিক্ষোভ নিয়ে তাঁর মন্তব্য জানতে চান। জবাবে হাসনাত বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার টিকে গেলে আপনারা ঠিকই পদলেহন করে চাকরি করতেন। সুতরাং ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে আপনারা যদি জনগণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এ সরকারকে হুমকি দেন ও সংস্কার কার্যক্রমে বাধা দেন, তবে মনে রাখবেন, জনগণই আপনাদের বিকল্প খুঁজে নেবে।’

হাসনাত প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে কোনো সচিব, কোনো আমলা বা কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কি পদত্যাগ করেছেন। একজনও কি পদত্যাগ করেছেন। রাস্তার মধ্যে নাগরিকদের যে এভাবে গুলি করে হত্যা করছিল, তখন কি একজন সচিব বা আমলার পদত্যাগের খবর এসেছিল? কিন্তু এই সরকারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তাঁরা সহযোগিতা না করে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।’

সরকারকে জিম্মি করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে লাখ লাখ হাসনাত আবদুল্লাহ আছেন। এই হাসনাত আবদুল্লাহ বেঁচে থাকতে এই সংস্কার কার্যক্রমে যদি বাধা আসে, সেটি কঠোর হাতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। আপনারা এটা ভাববেন না যে আপনাদের বিকল্প নাই। জনগণ বিকল্প খুঁজে নেবে। সুতরাং সরকারকে সহযোগিতা করুন। সংস্কার কার্যক্রমকে সহযোগিতা করুন। সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে যদি আপনাদের কোনো পর্যালোচনা থাকে, তবে সেটি আপনারা নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করুন। সরকারকে যদি জিম্মি করেন, সেটার পরিস্থিতি ভালো হবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদত য গ সরক র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন কর‌তে দে‌ব না: হেফাজ‌ত

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জা‌নি‌য়ে হেফাজতে বাংলা‌দে‌শের নেতারা ব‌লে‌ছেন, “এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি। আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপন কর‌তে দেব না।” 

সরকার সিদ্ধান্ত থে‌কে স‌রে না আস‌লে ক‌ঠোর কর্মসূচির হুম‌কি দেন নেতারা।

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবা‌দে শুক্রবার (১১ জুলাই) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর আ‌য়ো‌জিত বি‌ক্ষোভ সমাবেশে তারা এ হুঁশিয়া‌রি দেন।

আরো পড়ুন:

সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রি‌ভিউ দা‌বি

ইসলামী দলগু‌লোর ঐক‌্যবদ্ধ নির্বাচনে ইসলামপন্থিরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আস‌বে: রেজাউল করীম

সভায় সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি আল্লামা মাওলানা মামুনুল হক।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী ও স্বাধীনতার মৌলিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত ১৬ বছরে ঘটে যাওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের বিচার নিশ্চিত না করে এখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য দরজা খুলে দেওয়া মানে অপরাধীদের দায়মুক্তি ও জনগণের প্রতি অবিচার।”

“ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলি—আমরা আপনাদেরকে সহযোগিতা করেছি দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার বাস্তবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী পশ্চিমা আদর্শের হাতিয়ার। খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি। আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপন কর‌তে দিব না।”

তিনি বলেন, “আজ আমরা শুধু প্রাথমিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে না আসে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।”

‌তি‌নি ব‌লেন, “হেফাজতের দৃষ্টিতে জাতিসংঘ বা কোনো বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে হস্তক্ষেপ দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন সরকারের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন। দেশিয় ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জালালুদ্দীন, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মুফতী শরীফুল্লাহ, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা জোবায়ের রশীদ, মাওলানা এহতেশামুল হক সাকী প্রমুখ।

সমা‌বেশ থে‌কে চার‌টি দাবি জানা‌নো হয়। দা‌বিগু‌লো হ‌লো
১. ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে দিতে হবে।
৩. বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

নেতারা ব‌লেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। ঈমানি দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য থেকে হেফা‌জ‌তে ইসলাম এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবে, প্রয়োজনে আরো বৃহত্তর কর্মসূচি দে‌বে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তরুণ প্রজন্ম নির্বাচনী ভাগ-বাঁটোয়ারায় বিশ্বাস করে না: নাহিদ ইসলাম
  • তরুণ প্রজন্ম নির্বাচনী ভাগ বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না: নাহিদ ইসলাম
  • চাঁদাবাজদের কাছে দেশ ছেড়ে দেবে না জামায়াত: রফিকুল ইসলাম খান
  • পুলিশ এখনো চাঁদাবাজদের ভয় করে চলছে : নাহিদ
  • যারা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখান করবে: জামায়াত
  • চাঁদাবাজি-সহিংসতা বন্ধ না করলে বিএনপির পরিণতি আ.লীগের মতোই হবে
  • প্রধান বা বিশেষ অতিথি আর বইলেন না, এগুলো জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে: রিজওয়ানা হাসান
  • মুক্তির প্রাথমিক শর্ত বৈষম্যের অবসান
  • একটি দল ভাবছে, চাঁদাবাজির স্বাধীনতা পেয়েছে তারা 
  • জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন কর‌তে দে‌ব না: হেফাজ‌ত