পুলিশ এখনো চাঁদাবাজদের ভয় করে চলছে : নাহিদ
Published: 12th, July 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উদ্যাপনের লক্ষ্যে নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ আজ শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় বাগেরহাটে পৌঁছেছে। সেখানে সদর উপজেলায় রেলরোডে জনসমাবেশে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসন এখনো চাঁদাবাজদের ভয় করে চলছে।’’
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে করা গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস টেনে নাহিদ বলেন, ‘‘আমরা কথা বলি পুরনো বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে, বলি পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপক্ষে। যারা পুরনো বন্দোবস্ত, চাঁদাবাজির সংস্কৃতি, মাফিয়ার রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখছে, আপনাদের তার বিপক্ষে দাঁড়াতে হতে হবে।’’
নিজেদের রাজনৈতিক দল তৈরির প্রেক্ষাপটের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমরা চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদের বিপক্ষে আন্দোলন করেছিলাম। তবে বিগত এক বছরে সেই পরিবর্তন আসেনি। চাঁদাবাজরা এখনো রয়ে গেছে। তাদের প্রতিহত করতে আমরা আবারো রাজপথে নেমেছি।’’
আরো পড়ুন:
মাহবুবুর হত্যা: ৭ কারণ সামনে রেখে তদন্তে পুলিশ
বিল্লালের দোষ স্বীকার, আশঙ্কামুক্ত চাঁদপুরের সেই খতিব
সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসন মনে হচ্ছে, চাঁদাবাজদের ভয় পেয়ে তারা কাজ করে। দখলদারদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অ্যাকশন আমরা দেখি না। পুলিশ প্রশাসনকে জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। যদি তারা দলবাজ প্রশাসনের মতো আচরণ করেন, তাহলে তাদের পরিণতিও ফ্যাসিস্ট আমলের দলবাজ পুলিশ প্রশাসনের মতো হবে।’’
বক্তব্যে বাগেরহাটের রাস্তার নাজেহাল অবস্থা ও স্থানীয় শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার গাফিলতির বিষয়েও কথা বলেন নাহিদ। এছাড়া আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় শহীদ মিনারে চাঁদাবাজ মাফিয়ার বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তির ইশতেহারের সমাবেশে বাগেরহাটবাসীকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া সভায় আরো অংশ নেন দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সচিব তাসনিম জারাসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
এর আগে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী মোড় ও রামপাল উপজেলার ফয়লায় জনসভায় অংশ নেন এনসিপি নেতারা। এ সময় স্থানীয় জনগণের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন করতে দেব না: হেফাজত
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হেফাজতে বাংলাদেশের নেতারা বলেছেন, “এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি। আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপন করতে দেব না।”
সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন নেতারা।
ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদে শুক্রবার (১১ জুলাই) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এ হুঁশিয়ারি দেন।
আরো পড়ুন:
সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রিভিউ দাবি
ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে ইসলামপন্থিরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে: রেজাউল করীম
সভায় সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি আল্লামা মাওলানা মামুনুল হক।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী ও স্বাধীনতার মৌলিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত ১৬ বছরে ঘটে যাওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের বিচার নিশ্চিত না করে এখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য দরজা খুলে দেওয়া মানে অপরাধীদের দায়মুক্তি ও জনগণের প্রতি অবিচার।”
“ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলি—আমরা আপনাদেরকে সহযোগিতা করেছি দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার বাস্তবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী পশ্চিমা আদর্শের হাতিয়ার। খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি। আমরা এই মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপন করতে দিব না।”
তিনি বলেন, “আজ আমরা শুধু প্রাথমিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে না আসে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।”
তিনি বলেন, “হেফাজতের দৃষ্টিতে জাতিসংঘ বা কোনো বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে হস্তক্ষেপ দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন সরকারের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন। দেশিয় ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জালালুদ্দীন, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মুফতী শরীফুল্লাহ, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা জোবায়ের রশীদ, মাওলানা এহতেশামুল হক সাকী প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে চারটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো
১. ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে দিতে হবে।
৩. বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নেতারা বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। ঈমানি দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য থেকে হেফাজতে ইসলাম এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবে, প্রয়োজনে আরো বৃহত্তর কর্মসূচি দেবে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি