গাজা ও ইরানে ইসরায়েলের আগ্রাসী ভূমিকা ও তা নিয়ে ভারতের নীরবতার তীব্র সমালোচনায় কলম ধরলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সর্বভারতীয় এক ইংরেজি দৈনিকে আজ শনিবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে ভারত সরকারের নীরবতার সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, ‘শুধু কণ্ঠরোধই নয়, দীর্ঘকাল যাবৎ লালিত যাবতীয় মূল্যবোধও ভারত বিসর্জন দিয়েছে।’

‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত সোনিয়ার ওই নিবন্ধের শিরোনাম, ‘দেরিতে হলেও ভারত এখনো সরব হতে পারে’। স্বলিখিত ওই নিবন্ধে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করে সোনিয়া লিখেছেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে দুই জাতি সমাধান সূত্রে উপনীত হতে ভারতের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারের নীতি থেকে সরকার পিছিয়ে এসেছে। মোদি সরকার সেই নীতি পরিত্যাগ করেছে, যা ইসরায়েলের পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনের দাবি এতকাল ধরে জানিয়ে এসেছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা থেকেও সোনিয়া পিছিয়ে আসেননি। পশ্চিম এশিয়ায় ট্রাম্পের ‘ধ্বংসাত্মক ভূমিকার’ কড়া নিন্দা করে তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তহীন যুদ্ধংদেহী মনোভাবের সমালোচনা করেছেন যিনি সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তিনিও পূর্বসূরিদের মতো ধ্বংসাত্মক পথ অনুসরণ করছেন।’

গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার প্রতিবাদ কংগ্রেস শুরু থেকেই জানিয়ে আসছে। সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী, কেরালার ওয়েনাডের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সবাই ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব ও ভারতের নীরবতার সমালোচনা করেছেন। অসুস্থতা কাটিয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে সোনিয়াও নিবন্ধ লিখে সেই সমালোচনা করলেন।

প্রথমে গাজা এবং পরে ইরানে বিনা প্ররোচনায় ইসরায়েলি আক্রমণ দেখেও ভারতের চুপ করে থাকাকে সোনিয়া ‘নৈতিক ও কূটনৈতিক ঐতিহ্য থেকে বিরক্তিকর বিচ্যুতি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভারত শুধু নিজের কণ্ঠরোধ করেনি, প্রতিবাদী চরিত্র বিসর্জন দেয়নি, মূল্যবোধও বিসর্জন দিয়েছে।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সোনিয়া ছাড়েননি। তিনি লেখেন, তাঁর নেতৃত্বে ইসরায়েল উগ্রপন্থী আচরণে উসকানি দিয়েছে। তাঁর অতীত এটাই বোঝায়, সংলাপের রাস্তায় না হেঁটে তিনি সংঘাতকেই আঁকড়ে ধরবেন।

একইভাবে ট্রাম্পের সমালোচনা করে সোনিয়া লিখেছেন, আগ্রাসী হওয়ার জন্য তিনি নিজের গোয়েন্দাপ্রধানের মূল্যায়নও অস্বীকার করেছেন, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। সোনিয়া লেখেন, আজকের পৃথিবী এমন নেতৃত্ব দাবি করে, যা বাস্তববাদী এবং কূটনৈতিক আচরণে বিশ্বাসী, যা শক্তির উপাসক ও মিথ্যাচারী নয়।

ভারত–ইরান সম্পর্কের ইতিহাস তুলে ধরে সোনিয়া বলেছেন, ‘ইরান আমাদের বহুকালের বন্ধু। দুই দেশের মধ্যে গভীর সভ্যতাগত সম্পর্ক রয়েছে।’

১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আনা নিন্দাসূচক প্রস্তাব উত্থাপনে ইরান বাধা দিয়েছিল। ইসলামি প্রজাতন্ত্র কায়েমের পর ইরান–ভারত সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। সহযোগিতা আরও বেড়েছে, আগের আমলে যা ছিল পাকিস্তানঘেঁষা। কী রকম, সেই প্রমাণ ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পাওয়া গিয়েছিল।

ইসরায়েলের আগ্রসী ভূমিকা ও গাজার মানবিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে সোনিয়া লিখেছেন, ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কোথাও পুরো পরিবার, গোটা এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলো ধুলায় মিশেছে। পুরো গাজা দাঁড়িয়ে আছে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।

নির্বাক মোদি সরকারের নীতি বিসর্জনের সমালোচনার পর সোনিয়া নিবন্ধ শেষ করেছেন এই বলে, ‘ভারতকে স্বচ্ছভাবে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে। দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে ও সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে সব রকমের কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এখনো খুব বেশি দেরি হয়নি। এখনো সময় আছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র কর ছ ন ন বন ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন

এশিয়া কাপ-২০২৫ এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গেছে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থাতেও। খেলোয়াড়দের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় এবার শাস্তির মুখে পড়েছেন দুই দেশের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সূর্যকুমার যাদব ও হারিস রউফের ওপর জরিমানা ও ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ আরোপ করেছে। আর ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা।

আইসিসির এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিরা সেপ্টেম্বর ১৪, ২১ ও ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত করেন।

প্রথমবার, সেপ্টেম্বর ১৪:
প্রথম ম্যাচেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ম্যাচে ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তানের হারিস রউফ ও সাহিবজাদা ফারহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের দায়ে। যেখানে বলা আছে, এমন আচরণ যা খেলাটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে।

ফলাফল হিসেবে সূর্যকুমারকে জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং দেওয়া হয় দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। ফারহান পান আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট। রউফের শাস্তিও একই; ৩০ শতাংশ জরিমানা ও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট।

দ্বিতীয়বার, সেপ্টেম্বর ২১:
এক সপ্তাহ পরের ম্যাচে আবার বিতর্ক। ভারতীয় পেসার অর্শদীপ সিং অভিযুক্ত হন আইসিসির ২.৬ অনুচ্ছেদে, “অপমানজনক ভঙ্গি প্রদর্শনের” অভিযোগে। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানিতে প্রমাণ না মেলায় তিনি মুক্তি পান। কোনো শাস্তি হয়নি তার।

ফাইনালের উত্তেজনা, সেপ্টেম্বর ২৮:
এশিয়া কাপের ফাইনালও ছাড় পায়নি শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোঁয়া থেকে। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ স্বীকার করেন যে তিনি খেলাটির মর্যাদাবিরোধী আচরণ করেছেন। ফলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয় ও দেওয়া হয় এক ডিমেরিট পয়েন্ট। যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, তাই আলাদা শুনানির প্রয়োজন হয়নি।

অন্যদিকে, হারিস রউফ আবারও জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের ঘটনায়। ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি আবার জরিমানা পান ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং আরও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ফেলে। ফলে নভেম্বর ৪ ও ৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুইটি ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন তিনি।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, লেভেল–১ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা এবং দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়। কোনো খেলোয়াড় যদি ২৪ মাসের মধ্যে চার বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তবে তা রূপান্তরিত হয় সাসপেনশন পয়েন্টে। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী।

এশিয়া কাপে শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:

সূর্যকুমার যাদব (ভারত): ম্যাচ ফি’র ৩০% জরিমানা, ২ ডিমেরিট পয়েন্ট।

সাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান): আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

হারিস রউফ (পাকিস্তান): দুই আলাদা অপরাধে দু’বার জরিমানা, মোট ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।

জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

অর্শদীপ সিং (ভারত): অভিযোগ থেকে মুক্ত, কোনো শাস্তি নয়।

এশিয়া কাপের মাঠে যেমন ব্যাট-বল লড়াই জমেছিল, মাঠের বাইরে ঠিক তেমনই শৃঙ্খলাভঙ্গের নাটকও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য রক্ষায় এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে আইসিসি- “খেলা উত্তেজনার হতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম নয়।”

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা, একজন গ্রেপ্তার
  • চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সমস্যা
  • এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন
  • তালেবান এই ‘সুযোগ’ কেন হাতছাড়া করল
  • নিফাক শব্দের অর্থ কী এবং মুনাফিকের লক্ষণগুলো কী
  • বৈষম্যের খাঁচা আদৌ কি আমরা ভাঙতে চাই