কেরানীগঞ্জে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ময়লার ভাগাড়!
Published: 1st, July 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কালিন্দী ইউনিয়নে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর অফিসের পাশেই ময়লা-আবর্জনার বিশাল ভাগাড় তৈরি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
দুর্গন্ধে অফিসে টেকাই দায়। মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। পাশাপাশি ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আশেপাশের বাসিন্দারা।
কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে নষ্ট হওয়া শাকসবজি, হোটেলের পঁচা-বাসি খাবার, মুরগির নাড়িভুঁড়ি এবং বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ও গরুর ভুঁড়িসহ সব ধরনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এখানটায়। উৎকট গন্ধে আশপাশে থাকাই দায়।
স্থানীয়রা জানান, অবর্জনার স্তুপ থেকে ছড়ানো উৎকট গন্ধে শিক্ষার্থী, মুসল্লি, ব্যবসায়ীসহ সড়কে চলাচলকারী হাজারো মানুষকে নাক-মুখ চেপে ধরে এ রাস্তায় চলাচল করতে হয়। বৃষ্টিতে ভিজে এবং রোদে শুকিয়ে এসব বর্জ্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর ডাটাএন্ট্রি অপারেটর সাহিদা আক্তার বলেন, “ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের ফলে আমাদের অফিস করতে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। ময়লার দুর্গন্ধের কারণে অনেকে দোতলায় আসতে চায় না। মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। একটি অফিসের সামনে এমন ময়লার ভাগাড় মেনে নেওয়া যায় না। এখান থেকে দ্রুত ময়লা ভাগাড় অপসারণের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ কম্পিউটার অপারেটর নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, “ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে অফিস রুমে বসা খুবই কষ্টকর। দুর্গন্ধের ফলে বমি চলে আসে। এরকম অবস্থা বহু দিন থেকে চলছে। সমাধান হচ্ছে না। এ সমস্যার সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
ঢাকা পল্লী বিদুৎ সমিতি-৪ এর ইসি মো.
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর জেনারেল ম্যানেজার, খালেদুর রহমান বলেন, “খোলা স্থানে বর্জ্য ফেলায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। দূষণের পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ায় রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। ময়লার গন্ধে অফিসে বসে কাজ করা অসম্ভব হয় পড়েছে। এই গন্ধে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মধ্যে পড়ছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই যেন আমাদের অফিসের সামনে থেকে এই ময়লার ভাগাড় অপসারণ করে।”
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া বলেন, “বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
ঢাকা/শিপন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র অফ স আম দ র অফ স র ময়ল র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা