ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি
Published: 2nd, July 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ বা সম্ভাব্য সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল—এ দুটি ‘টাইমফ্রেম’ বা সময়সীমা সামনে রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয় সরকার নয়, সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সিইসি নাসির উদ্দীন। তিনি গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। তবে ওই সাক্ষাতে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে এত দিন আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।
সাক্ষাতের পর শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত রবি ও সোমবার নিজ কার্যালয়ে আসেননি সিইসি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর গতকাল প্রথম অফিস করেন সিইসি। বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৃহস্পতিবারের সাক্ষাৎ ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ। কোনো ‘এজেন্ডা’ (আলোচ্যসূচি) নিয়ে বৈঠক হয়নি। তবে এই মুহূর্তে নির্বাচন আলোচনার কেন্দ্রে, সৌজন্য সাক্ষাতে ‘সাইড টক’ হিসেবে কিছু বিষয় আসে। প্রধান উপদেষ্টা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চান। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি (সিইসি) প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, ইসি ‘ফুল গিয়ারে’ (পুরো দমে) প্রস্তুতি নিচ্ছে। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেই ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের তারিখ এবং তফসিল যথাসময়ে জানাবে ইসি। এ জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। তিনি জানান, সাধারণত নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়।
এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বুঝতে পেরেছেন, একটি ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন (গণতান্ত্রিক উত্তরণ) এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত।
গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ দেবে।
তবে এরপর প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্য সফরে গেলে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১৩ জুন লন্ডনে ওই বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
ওই বিবৃতির পর নির্বাচন কমিশন বলেছিল, তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কিছু জানে না। সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে মনোভাব বোঝা যাবে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি।
সিইসি বলেন, ‘সম্ভাব্য সময়ের বিষয়ে আপনারা যেটুকু জানেন, আমিও ততটুকু জানি। তখন প্রথমে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছিলেন যে এপ্রিলের ফার্স্ট হাফে। তাররে তো বক্তব্য আপনারা শুনেছেন। আমি আজকে আবার দেখলাম.
আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, লন্ডনে ফেব্রুয়ারির কথা এসেছে, এর আগে এপ্রিলের কথা এসেছে। এ দুটো টাইমফ্রেমকে (সময়সীমা) সামনে রেখে ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়ার দাবি আছে কোনো কোনো দলের। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, এই মুহূর্তে ইসির প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নয়। প্রধান উপদেষ্টা দেশে–বিদেশে জাতীয় নির্বাচনের কথাই বলছেন। তবে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হয়, তাহলে এই প্রস্তুতি সেখানেও কাজে লাগবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল বক্তব্য দিতে পারে। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।
একটি গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে প্রধান উপদেষ্টা সিইসিকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বার্তা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ ধরনের কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। কেন এমন বার্তা দেওয়া হবে—প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাঁরা জোর করে এসে চেয়ারে বসে গেছেন, বিষয়টা তেমন নয়। ৫ আগস্টের পর যথাযথ, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বর্তমান কমিশনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই কমিশন আগস্ট বিপ্লবের পরের ফসল।
নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনের বিষয়টি ইসির ওপর নির্ভর করছে। এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমার কোনো মন্তব্য নাই। আপনার এই প্রশ্ন ওনার অফিসকে করতে পারেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র ন র প রস ত ত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।
সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।
এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগেএ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।