বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) মোংলা বন্দরে নিট মুনাফাও বেড়েছে সাড়ে ৪১ কোটি টাকার বেশি। বন্দরের নিট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরের আয় ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেশি। এতে বন্দরের রাজস্ব আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৮৩ ভাগ।

বৃহস্পতিবার মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন, প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো.

সিদ্দিকুর রহমান, প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহমেদ খান, পরিচালক (ট্রাফিক) মো. কামাল হোসেন, বোর্ড ও গণসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রচেষ্টায় স্বল্প সম্পদের সঠিক ব্যবহার এবং দ্রুত পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের সুবিধা থাকায় দিন দিন বন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বন্দরের আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মোংলা বন্দরের সংকট, সম্ভাবনা, সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি, জাহাজ আসছে ৮৩০টি; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ে কার্গো হ্যান্ডেলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ দশমিক ৮০ লাখ টন এবং হ্যান্ডেলিং হয়েছে ১০৪ দশমিক ১২ লাখ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৩২ লাখ টন বেশি। কনটেইনার হ্যান্ডেলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ, হ্যান্ডেলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ।

রাজস্ব আয়েও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে। গেল অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, অর্জিত হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরে জাহাজ–জট নেই। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। কনটেইনার রাখার জন্য ৭টি কনটেইনার ইয়ার্ড, টাগ বোট, পাইলট বোট, মুরিং বোট, পাইলট ডেসপাস বোট, সার্ভে বোট, ড্রেজার ইউনিট ইত্যাদিসহ বন্দরে ৩৮টি সহায়ক জলযান রয়েছে।

বর্তমানে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খাদ্যশস্য, সার, গাড়ি এলপি গ্যাস, স্লাগ, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ফ্রেশ ফুড, সাধারণ পণ্য, জিপসাম, মেশিনারি যন্ত্রপাতি, কাঠের লগ, কয়লা, পাথর, ক্লিনকার, পামতেল, ফ্লুড ওয়েল, ফ্লাই অ্যাশ, আয়রন, অয়েল সিড, স্টিল পাইপ, চিটাগুড় ইত্যাদি পণ্য আমদানি হয়ে থাকে।

রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস পণ্য, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকনা মাছ, ক্লে, কাঁকড়া, মেশিনারি, হিমায়িত খাদ্য।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কোন খাতে কত প্রণোদনা

নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।

কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা
  • বিনিয়োগের সন্ধানে চীন যাচ্ছে বিডার প্রতিনিধি দল
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়েছে
  • ব্যয় সংকোচনে আরো কঠোর সরকার
  • ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যাংক ঋণ সরকারের
  • চলতি অর্থবছরে ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি অব্যাহত থাকবে
  • সরকারি দপ্তরে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফর বন্ধ
  • ট্রাম্পের নতুন শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় ৩০ হাজার কোটি ডলারে উঠতে পারে
  • ট্রাম্পের শুল্ক: বড় ঝুঁকিতে ৮০১ রপ্তানি প্রতিষ্ঠান