আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে অর্থবছরের শেষ সময়ে বিপুল পরিমাণের ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে অভ্যন্তরীণ উৎসে ঋণ কমেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুধু শেষ দিনই ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকার আগের দেনা কমিয়েছে ৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর ব্যাংক খাতে নিট ঋণ বেড়েছে ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও যা ২৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা কম। যা গত চার অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

প্রতি বছরের বাজেটে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। রাজস্ব আদায় কমায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নিতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় কমে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় নেমেছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ৯৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায় হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর মানে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আয় কম হয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এরপরও গত অর্থবছরের শেষ সময়ে ব্যাংক ঋণ কমেছে মূলত প্রচুর বিদেশি ঋণের কারণে। জুনের শেষ সপ্তাহে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। যে কারণে অনেক ঋণ সমন্বয় হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড.

হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের শেষ দিকে আইএমএফসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ পেয়েছে সরকার। যে কারণে দেশীয় অনেক ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে শেষ সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনের শেষ দিন ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। এক দিন আগে অর্থাৎ ২৯ জুন পর্যন্ত স্থিতি ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হয়। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন সরকার সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনে। আর গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ঘোষণা দেন, ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হবে। সে হিসাবে সরকার লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম ঋণ নিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে সরকারের ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকে অনেক বেড়েছে। গত অর্থবছর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার। এ পরিমাণ ঋণ বেড়ে জুন শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের ৬৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকার দেনা কমিয়েছে সরকার। এতে করে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থিতি নেমেছে ৯২ হাজার ৫১ কোটি টাকা। ব্যাংকের বাইরে অভ্যন্তরীণ উৎসে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ ৫ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা কমেছে। ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের বাইরেও সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। সেখান থেকে গত অর্থবছর সরকার আরও ৪৮ হাজার ৩২২ কোটি টাকা নিয়েছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎসে সরকারের নিট ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র উৎস থ ক সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাইয়ের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি

নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ৬ দিনে দেশে বৈধ পথে ৪২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা)। আগের বছর একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। 

সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ জানা গেছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচারে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে।

আরো পড়ুন:

প্রভিশন সংরক্ষণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা 

ব্যাংক খাতে আগামী জানুয়ারিতে শুরু হবে রিস্ক বেইজড সুপাভিশন: গভর্নর

সদ্য সমাপ্ত ২০৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। এর মধ্যে, জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। 

এছাড়া জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং জুন মাসে ২৮২ কোটি ১২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিনিয়োগের সন্ধানে চীন যাচ্ছে বিডার প্রতিনিধি দল
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়েছে
  • ব্যয় সংকোচনে আরো কঠোর সরকার
  • ‘আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবে নয়, নিজস্ব উদ্যোগেই আর্থিক খাতে সংস্কার’
  • ট্রাম্পের শুল্ক: বড় ঝুঁকিতে ৮০১ রপ্তানি প্রতিষ্ঠান
  • আকুর দায় শোধের পর রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে
  • জুলাইয়ের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি
  • দুই অঙ্কের গড় মূল্যস্ফীতি
  • দুই অঙ্কে গড় মূল্যস্ফীতি