৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যাংক ঋণ সরকারের
Published: 10th, July 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে অর্থবছরের শেষ সময়ে বিপুল পরিমাণের ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে অভ্যন্তরীণ উৎসে ঋণ কমেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুধু শেষ দিনই ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকার আগের দেনা কমিয়েছে ৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর ব্যাংক খাতে নিট ঋণ বেড়েছে ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও যা ২৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা কম। যা গত চার অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
প্রতি বছরের বাজেটে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। রাজস্ব আদায় কমায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নিতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় কমে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় নেমেছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ৯৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায় হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর মানে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আয় কম হয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এরপরও গত অর্থবছরের শেষ সময়ে ব্যাংক ঋণ কমেছে মূলত প্রচুর বিদেশি ঋণের কারণে। জুনের শেষ সপ্তাহে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। যে কারণে অনেক ঋণ সমন্বয় হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড.
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনের শেষ দিন ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। এক দিন আগে অর্থাৎ ২৯ জুন পর্যন্ত স্থিতি ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হয়। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন সরকার সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনে। আর গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ঘোষণা দেন, ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হবে। সে হিসাবে সরকার লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম ঋণ নিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে সরকারের ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকে অনেক বেড়েছে। গত অর্থবছর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার। এ পরিমাণ ঋণ বেড়ে জুন শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের ৬৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকার দেনা কমিয়েছে সরকার। এতে করে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থিতি নেমেছে ৯২ হাজার ৫১ কোটি টাকা। ব্যাংকের বাইরে অভ্যন্তরীণ উৎসে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ ৫ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা কমেছে। ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের বাইরেও সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। সেখান থেকে গত অর্থবছর সরকার আরও ৪৮ হাজার ৩২২ কোটি টাকা নিয়েছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎসে সরকারের নিট ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র উৎস থ ক সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। আজ সোমবার ঢাকা কাস্টমস হাউস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে এনবিআর। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থবছর শেষে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিসাব সমন্বয় করতে এক-দুই সপ্তাহ লেগে যায়। নতুন অর্থবছরে সবাই নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করছে। ফলে রাজস্ব আদায় আরেকটু বাড়বে।
কাস্টমসের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে উল্লেখ করে আব্দুর রহমান খান বলেন, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সচল আছে। কর্মকর্তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে তারা যেন আইন অনুযায়ী নিষ্ঠার সঙ্গে দ্রুত সব কাজ সম্পন্ন করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও মংলাসহ অন্য কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশন অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এসব স্থানে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। ব্যবসায়ীরা যাতে কোনোভাবে কোনো ধরনের বিড়ম্বনার শিকার না হন। সেই দিকে খেয়াল রাখার জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেককে দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। ব্যক্তিগত অথবা গোষ্ঠিগত স্বার্থ যদি রাষ্ট্র স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তা এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ চেয়ারম্যানসহ এনবিআরের কেউই অপরিহার্য নয়। বরং কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনসহ রাজস্ব আহরণের দপ্তরগুলো অপরিহার্য। এসব দপ্তরে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখতে হবে। কারা কাজ করবে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এগুলোর কার্যক্রম কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয়।