গল্পটা শুরু করা যাক মাদাগাস্কারের ছোট্ট এক শহরের কথা দিয়ে। দ্বীপদেশটির সেই শহরের নাম আমবোহিমানারিনা। সেখানে সুপেয় পানি পান করতে পারেন মাত্র ১৪ শতাংশ বাসিন্দা। সেখানকার বাসিন্দাদের কথা ভেবেই স্কটল্যান্ডের তিন ভাই মিলে নৌকায় প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ির দুঃসাহসিক এক অভিযান শেষ করতে চলেছেন। একই উদ্দেশ্য নিয়ে এর আগে মাত্র ৩৫ দিনেই আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা।

তিন স্কটিশ ভাই হলেন এওয়ান, জেমি ও ল্যাচলান। সবার নামের শেষে আছে বংশগত পদবি ম্যাকলিন। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি একটি নৌকায় করে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ির এক দুঃসাহসিক অভিযান শুরু করেন তাঁরা। উদ্দেশ্য আমবোহিমানারিনার ৪০ হাজার বাসিন্দার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে অন্তত ১০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ। পাশাপাশি নৌকায় করে প্রথমবারের মতো প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার বিশ্ব রেকর্ড গড়া।

এওয়ান, জেমি ও ল্যাচলানের গল্পের শুরুটা আরও পাঁচ বছর আগে, ২০২০ সালে। ওই বছর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বিশ্বজুড়ে সুপেয় পানির সংকটে থাকা মানুষের জন্য কিছু করবেন। আর সে ভাবনা থেকে মাত্র ৩৫ দিনে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড।

এরপর আরও বড় কিছু করার চিন্তায় গত ১৩ এপ্রিল নৌকায় করে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ির যাত্রা শুরু করেন এই তিন সহোদর। তাঁদের যাত্রা শুরু হয় পেরুর রাজধানী লিমার উপকূল থেকে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের লক্ষ্য ছিল ২ আগস্টের মধ্যে গন্তব্য অস্ট্রেলিয়ার সিডনি উপকূলে পৌঁছানো। কিন্তু ঝড়, উত্তাল সাগরে দুর্ঘটনা ও নানা কারণে তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এখন সিডনি উপকূলের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছেন তাঁরা।

তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ৩৩ বছর বয়সী এওয়ান ম্যাকলিন সিএনএনকে বলেন, ‘মানুষের জন্য যেন কিছু করতে পারি, সেটাই আমাদের এই অভিযানের লক্ষ্য। নানাজনের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা আসছে। অনেকে পাশে আছেন বলে জানাচ্ছেন। এসবই আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।’

তবে এই অভিযান শুরুর আগে দুই বছরের নিবিড় এক প্রশিক্ষণ পর্ব পার করতে হয়েছে এওয়ান, জেমি ও ল্যাচলানকে। করতে হয়েছে অনেক খাটাখাটনি। শারীরিকভাবে নিজেদের প্রস্তুত করার পাশাপাশি দীর্ঘ মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে তাঁদের। রান্নাসহ শিখতে হয়েছে আরও কত কিছু!

জেমি ম্যাকলিনের (৩১) কথায়, ‘যাত্রা শুরুর আগেই বহু রাত নির্ঘুম কেটেছে। তবে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে ভয়টা কাজ করেছিল, তা হলো যদি মাঝ সাগরে কেউ একজন নৌকা থেকে পড়ে যাই, তখন কী হবে!’

জেমির সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ ঝড় উঠলে উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর।

ঝোড়ো বাতাসে নৌকা থেকে পড়ে যান তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ২৭ বছরের ল্যাচলান। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে এওয়ান ও জেমি জানান, ২০ ফুট উঁচু ঢেউ ল্যাচলানকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তাঁরা। তবে নৌকার বিশেষ নকশার কারণে সেই যাত্রায় ছোট ভাইকে শেষ পর্যন্ত টেনে তুলতে পেরেছিলেন।

বিপদের কথা ভেবে নিজেদের মতো করে নৌকাটি বানিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। নৌকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ফর্মুলা ওয়ান প্রযুক্তি। কার্বন ফাইবারের তৈরি নৌকাটির ওজন মাত্র ২৮০ কেজি। আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার সময় তাঁদের ব্যবহৃত নৌকাটির ওজন ছিল প্রায় এক হাজার কেজি।

নৌকাটির নাম দিয়েছেন তাঁরা এমিলি রোজ। পৃথিবীর আলো দেখতে না পারা তাঁদের বোনের স্মরণে নৌকার এমন নাম দিয়েছেন তিন বড় ভাই।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এলাকার নামেই সিনেমা—আবেগে ভাসলেন পাইকগাছার মানুষ

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের দারুণ মল্লিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিনেমা ‘দেলুপি’র জমজমাট প্রিমিয়ার প্রদর্শনী। বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া এই আয়োজনে স্কুলমাঠ যেন পরিণত হয় এক উৎসবে।

বুধবার প্রিমিয়ার হলেও সিনেমা হলে ‘দেলুপি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। সারা দেশে মুক্তি পাবে ১৪ নভেম্বর। প্রিমিয়ার প্রদর্শনী ঘিরে স্থানীয় মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেল থেকেই মাঠে ভিড় করেন শত শত দর্শক। অনেকের হাতে সিনেমার পোস্টার, কেউ–বা পরিবার–বন্ধুদের সঙ্গে অপেক্ষায় পর্দা ওঠার। চারপাশে তখন উৎসবের আবহ, আনন্দের কোলাহল। সিনেমা শেষে দর্শকদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস। নিজেদের জীবনের গল্প বড় পর্দায় দেখে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

দেলুটি গ্রামের বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকার নামেই সিনেমা—এটা ভাবতেই গর্ব লাগে। গল্পটা এত বাস্তব, যেন আমাদের জীবনেরই কথা বলা হয়েছে।’ স্থানীয় ৫ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বদিয়ার রহমান বলেন, ‘ভাঙন ছিল আমাদের জীবনের অংশ। সেই কষ্টই এ সিনেমায় উঠে এসেছে। “দেলুপি” শুধু আমাদের গল্প নয়, অন্য উপকূলের অনেক মানুষের গল্পও বটে। আশা করি এই সিনেমা আমাদের দুর্দশার কথা আরও দূরে পৌঁছে দেবে।’

বুধবার প্রিমিয়ার হলেও সিনেমা হলে ‘দেলুপি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার

সম্পর্কিত নিবন্ধ