Prothomalo:
2025-08-08@06:43:55 GMT

৯০ দিনের ৩৬ দিনই রাস্তা আটকা

Published: 8th, August 2025 GMT

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ নামে একটি গ্রুপ রয়েছে। সেখানে প্রায় প্রতিদিন রাতে কোনো না কোনো সদস্য জানতে চান, পরের দিন নগরের কোথাও কোনো বিক্ষোভ বা সমাবেশ রয়েছে কি না। উদ্দেশ্য, সেই সড়ক এড়িয়ে যাওয়া।

ঢাকার যানজট নতুন নয়। নতুন হলো রাস্তা আটকে ঘন ঘন বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সমজাতীয় কর্মসূচি, যা ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রা অসহনীয় করে তুলেছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৯ মে থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৯০ দিনে রাজধানীর কোনো না কোনো রাস্তা আটকে বিক্ষোভ বা সমাবেশ হয়েছে অন্তত ৩৬ দিন। এসব দিনে ৫৪ বার সড়ক আটকানোর ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও টানা কয়েক দিন একই সড়ক আটকে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো দিন একসঙ্গে রাজধানীর কয়েক জায়গায় রাস্তা আটকানো হয়েছে।

গুগল ম্যাপে রাস্তায় যানজট কম দেখে বাসা থেকে বের হই। অথচ পথে নেমে দেখি হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে যানজট তৈরি করা হয়েছে। সব ভোগান্তি যেন শুধু সাধারণ মানুষের।বেসরকারি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মিলিতা মিম

বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ৫৪ বার সড়ক আটকানোর মধ্যে ২৬ বার ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল ১৩টি। চাকরিসংক্রান্ত দাবিতে রাস্তা আটকানো হয়েছে ৬ বার। বাকি ৯ বার অন্যান্য কারণে রাস্তা আটকানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে বিএনপি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজয় র‍্যালি আয়োজন করে। নয়াপল্টন থেকে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবন হয়ে এটি শেষ হয় রাজধানীর শাহবাগে। সেখানে উপস্থিত ছিল হাজার হাজার মানুষ।

বিএনপির র‍্যালির পাশাপাশি এদিন দুপুরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবিতে বুধবার বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিলেন।

সব মিলিয়ে পুরো শহরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত ছিল সেই যানজট। বিএনপি এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ ছিল না।

ঢাকার ডেমরা থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন মোহাম্মদপুরে নিজের কর্মস্থলে যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মিলিতা মিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুগল ম্যাপে রাস্তায় যানজট কম দেখে বাসা থেকে বের হই। অথচ পথে নেমে দেখি হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে যানজট তৈরি করা হয়েছে। সব ভোগান্তি যেন শুধু সাধারণ মানুষের।’

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৯ মে থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৯০ দিনে রাজধানীর কোনো না কোনো রাস্তা আটকে বিক্ষোভ বা সমাবেশ হয়েছে অন্তত ৩৬ দিন। এসব দিনে ৫৪ বার সড়ক আটকানোর ঘটনা ঘটেছে।বেশি আটকানো হয় শাহবাগের রাস্তা

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকায় বেশি আটকানো হয় শাহবাগ মোড়ের সড়ক। ৯০ দিনে অন্তত ২২ বার এই রাস্তা আটকানো হয়েছে। কাকরাইল, জাতীয় প্রেসক্লাব, সায়েন্স ল্যাবের মতো সড়ক আটকানো হয়েছে চার থেকে পাঁচবার করে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিষেধাজ্ঞাভুক্ত এলাকাও ছিল। চলতি বছর একাধিক দফা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে ডিএমপি। গত ১০ মে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির আগে শাহবাগও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল।

শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ) ও বারডেম হাসপাতাল রয়েছে। ঢাকার উত্তরাংশের মানুষকে শাহবাগ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। সেই সড়ক আটকে থাকলে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার অন্যান্য পথে যানজট বেড়ে যায়।

শাহবাগের রাস্তা বন্ধ থাকলে শহরের বড় অংশে যেমন যানজট ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। দুই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের পাশে দিনভর মাইক বাজিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি চিকিৎসাধীন রোগীদেরও দুর্ভোগের কারণ হয়।

নগরবাসীর জন্য এটা (রাস্তা বন্ধ) এখন একটি ফ্রাস্ট্রেশন (হতাশা) হয়ে দাঁড়িয়েছে।আজাদ প্রোডাক্টস গুলশানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান আজাদরাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনের সড়ক অবরোধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, ১৪ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক আটক ন শ হব গ ৯০ দ ন র সড়ক য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

মূল্য দিতে প্রস্তুত, তবু কৃষকস্বার্থে আপস নয়: নরেন্দ্র মোদি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানালেন, দেশের কৃষকদের স্বার্থে কোনো আপস করবেন না। সে জন্য তাঁকে অনেক মূল্য দিতে হতে পারে। তিনি প্রস্তুত।

রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার ‘অপরাধে’ ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার রাতে ওই ‘জরিমানা’ ধার্যের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প নিজেই। তার ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় সবচেয়ে বেশি—৫০ শতাংশ।

পরদিন আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে এক অনুষ্ঠানে মোদি ওই মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, ব্যক্তিগতভাবে আমাকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। সে জন্য প্রস্তুতও আছি। কিন্তু কিছুতেই দেশের কৃষক, গোপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনোরকম আপস করব না।’

বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনের জন্মশতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার মোদি ভাষণ দেন। সেখানেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ওই বার্তা দেন।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। আমেরিকা চায় ভারত কৃষিজাত পণ্য, দুধ ও দুগ্ধজাত পণের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক, যাতে মার্কিন পণ্য অবাধে ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু ভারত তাতে রাজি নয়। দুই দেশের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ট্রাম্প গতকাল বুধবার ভারতীয় রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক (জরিমানাসহ) ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তারই জবাব দিলেন মনে করা হচ্ছে।

কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে ভারতীয় কৃষকদের প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তা যাতে না হয়, সে জন্য সরকারের ওপর কৃষকসমাজের চাপ আছে। সেই চাপ উপেক্ষা করা রাজনৈতিকভাবে কঠিন। প্রধানমন্ত্রী মোদিও তা জানেন। সে জন্যই তিনি স্বামীনাথন শতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মঞ্চ বেছে নেন।

মার্কিন দুগ্ধজাত পণ্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় সমাজের আপত্তির একটা কারণ হলো ধর্মীয়। অনেকের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধজাত পণ্য ‘আমিষ’। সেখানকার খামারে নাকি গবাদিপশুগুলোকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মাংস খাওয়ানো হয়। ‘মাংসাশী’ প্রাণীর দুধ থেকে তৈরি পণ্য ভারতের বাজারে বিক্রি হতে দিতে সরকারের আপত্তি আছে।

এ ছাড়া জিনগতভাবে পরিবর্তিত বা জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) কৃষিপণ্যের আমদানিতেও ভারতের তীব্র আপত্তি। এ নিয়ে দুই দেশের আলোচনা এখনো পরিণতি লাভ করেনি। একইভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কৃষিজাত পণ্যের বাজার খুলে দিতে রাজি থাকলে ভারতের ওপর চাপানো শুল্কের পরিমাণ কমানো হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে পাঁচ দফা আলোচনা হলেও টানাপোড়েন এখনো অব্যাহত।

কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক। কৃষিক্ষেত্রে তিনিই আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁরই জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত না করার এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।

গতকাল বুধবার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা–শুল্ক চাপানোর কথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের সরকারি সূত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের সম্ভাবনার কথা জানা যায়। আজ বৃহস্পতিবার মোদি জানালেন কৃষিক্ষেত্র সম্পর্কে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা। বন্ধু ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির দূরত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি চীনের আরও কাছে ভারত আসছে কি না, আপাতত তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক জল্পনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ