সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ নামে একটি গ্রুপ রয়েছে। সেখানে প্রায় প্রতিদিন রাতে কোনো না কোনো সদস্য জানতে চান, পরের দিন নগরের কোথাও কোনো বিক্ষোভ বা সমাবেশ রয়েছে কি না। উদ্দেশ্য, সেই সড়ক এড়িয়ে যাওয়া।
ঢাকার যানজট নতুন নয়। নতুন হলো রাস্তা আটকে ঘন ঘন বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সমজাতীয় কর্মসূচি, যা ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রা অসহনীয় করে তুলেছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৯ মে থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৯০ দিনে রাজধানীর কোনো না কোনো রাস্তা আটকে বিক্ষোভ বা সমাবেশ হয়েছে অন্তত ৩৬ দিন। এসব দিনে ৫৪ বার সড়ক আটকানোর ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও টানা কয়েক দিন একই সড়ক আটকে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো দিন একসঙ্গে রাজধানীর কয়েক জায়গায় রাস্তা আটকানো হয়েছে।
গুগল ম্যাপে রাস্তায় যানজট কম দেখে বাসা থেকে বের হই। অথচ পথে নেমে দেখি হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে যানজট তৈরি করা হয়েছে। সব ভোগান্তি যেন শুধু সাধারণ মানুষের।বেসরকারি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মিলিতা মিমবিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ৫৪ বার সড়ক আটকানোর মধ্যে ২৬ বার ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল ১৩টি। চাকরিসংক্রান্ত দাবিতে রাস্তা আটকানো হয়েছে ৬ বার। বাকি ৯ বার অন্যান্য কারণে রাস্তা আটকানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে বিএনপি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজয় র্যালি আয়োজন করে। নয়াপল্টন থেকে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবন হয়ে এটি শেষ হয় রাজধানীর শাহবাগে। সেখানে উপস্থিত ছিল হাজার হাজার মানুষ।
বিএনপির র্যালির পাশাপাশি এদিন দুপুরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবিতে বুধবার বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে পুরো শহরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত ছিল সেই যানজট। বিএনপি এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ ছিল না।
ঢাকার ডেমরা থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন মোহাম্মদপুরে নিজের কর্মস্থলে যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মিলিতা মিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুগল ম্যাপে রাস্তায় যানজট কম দেখে বাসা থেকে বের হই। অথচ পথে নেমে দেখি হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে যানজট তৈরি করা হয়েছে। সব ভোগান্তি যেন শুধু সাধারণ মানুষের।’
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৯ মে থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ৯০ দিনে রাজধানীর কোনো না কোনো রাস্তা আটকে বিক্ষোভ বা সমাবেশ হয়েছে অন্তত ৩৬ দিন। এসব দিনে ৫৪ বার সড়ক আটকানোর ঘটনা ঘটেছে।বেশি আটকানো হয় শাহবাগের রাস্তাবিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকায় বেশি আটকানো হয় শাহবাগ মোড়ের সড়ক। ৯০ দিনে অন্তত ২২ বার এই রাস্তা আটকানো হয়েছে। কাকরাইল, জাতীয় প্রেসক্লাব, সায়েন্স ল্যাবের মতো সড়ক আটকানো হয়েছে চার থেকে পাঁচবার করে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিষেধাজ্ঞাভুক্ত এলাকাও ছিল। চলতি বছর একাধিক দফা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে ডিএমপি। গত ১০ মে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির আগে শাহবাগও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল।
শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ) ও বারডেম হাসপাতাল রয়েছে। ঢাকার উত্তরাংশের মানুষকে শাহবাগ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। সেই সড়ক আটকে থাকলে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার অন্যান্য পথে যানজট বেড়ে যায়।
শাহবাগের রাস্তা বন্ধ থাকলে শহরের বড় অংশে যেমন যানজট ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। দুই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের পাশে দিনভর মাইক বাজিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি চিকিৎসাধীন রোগীদেরও দুর্ভোগের কারণ হয়।
নগরবাসীর জন্য এটা (রাস্তা বন্ধ) এখন একটি ফ্রাস্ট্রেশন (হতাশা) হয়ে দাঁড়িয়েছে।আজাদ প্রোডাক্টস গুলশানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান আজাদরাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনের সড়ক অবরোধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, ১৪ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক আটক ন শ হব গ ৯০ দ ন র সড়ক য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লার সেই বিএনপিকর্মী ইব্রাহিম মারা গেছেন
ফতুল্লার বিএনপি কর্মী ইব্রাহিম (৫২) মারা গেছেন। সে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীনবস্থায় মারা যান।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে হাজিগঞ্জ জামে মসজিদে নিহতের নামাজের জানাজা শেষে পাঠানটুলি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত ইব্রাহিম ফতুল্লা থানার ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড হাজীগঞ্জের আব্দুল জলিলের পুত্র। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক।
জানা যায়,২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে বিএনপির ডাকা মহা সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদলের ব্যানারে সে অংশগ্রহণ করে।
সমাবেশের শেষের দিকে মুল মঞ্চের পেছনের দিকে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা,কর্মীও সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশ বিএনপি নেতা- কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ইব্রাহিম পুলিশের হামলায় মারাত্নক আহত হয়ে রাস্তায় পরে থাকে। সে সময় সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ঘটনার চারদিন পর তার সহোযোগিরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে খুঁজে পায়। দীর্ঘদিন সহোযোগিরা নিজেদের অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর আল বারাকা নামের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়।
পরবর্তীতে ইব্রাহিমকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন হলে বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই রোববার রাতে তিনি মারা যান।
ফতুল্লা ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ পারভেজ মিয়া জানান,নিহত ইব্রাহিম ২০২৩ সালে ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ঘোষিত পল্টন পার্টি অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপি ও ইউনিয়ন যুবদলের সাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন ।
সমাবেশ চলাকালে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন টিপু ও নিহত ইব্রাহিম এবং তিনি সহ আরো নেতা-কর্মীরা পল্টন পার্টি অফিস সংলগ্ন চায়না টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ তাদের উপর চড়াও হয়। এতে করে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে।
অতর্কিত হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় চার দিন পর পত্রিকার নিউজে দেখতে পায় ইব্রাহিম নামে একজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সেই সংবাদের পর তার পরিবারের লোকজন এবং ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রওশন আলী ঢাকা মেডিকেলে খোঁজ নেওয়ার পরে তারা নিশ্চিত হন যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকা চিকিৎসারতি হচ্ছে তাদের নিখোঁজ ইব্রাহিম।
ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসা শেষ করে তাকে বাসায় আনা হয়। বাসায় আনার পরে উনি আবার অসুস্থ হয়ে পরে। ফলে ৮ নং ওয়ার্ডের সকল নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় পুনরায় তাকে মদনপুর আল বারাকা হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পরেন।
এমতাবস্থায় নাসিক ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক রিপন তাকে দেখতে আসলে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ পায়। প্রকাশিত সংবাদের পর বিএনপি নেতা শিল্পপতি প্রাইম বাবুল ভাই তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নেন।
বাবুল ভাই নিজে এসে তার দাত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমান ১১ টা ৪০ মিনিটের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন।