মহানবী (সা.)-এর সুস্থতার চর্চা থেকে শিক্ষা
Published: 8th, August 2025 GMT
ইসলাম স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের প্রতি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করা হয়েছে, যা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দেয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)
এখানে তিনি ঈমান ও চরিত্রের পাশাপাশি শারীরিক শক্তি ও স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এই নিবন্ধে আমরা নবী (সা.
ইসলাম জীবনের প্রতি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যেখানে শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের শরীরকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন, যা একটি জটিল যন্ত্রের মতো। এটির অপব্যবহার বা অবহেলা করা উচিত নয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম এই আমানত রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তিনটি—নামাজ, রোজা এবং হজ্জ—পালনের জন্য শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিজেই একটি ব্যায়াম, যা শরীরের সমস্ত পেশি ও জয়েন্টকে সক্রিয় করে এবং মানসিক চাপ কমায়। রমজানের রোজা এবং হজ্জের কঠিন শারীরিক পরিশ্রমের জন্যও সুস্থ শরীর অপরিহার্য।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫নবীজি (সা.)-এর শারীরিক সুস্থতামহানবী (সা.) তাঁর অনুসারীদের কাজ করতে, উদ্যমী হতে এবং সকালে উঠে দিন শুরু করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছেন: ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৩২১)
নবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা স্বাভাবিকভাবেই শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন। তিনি অলসতা, অতিরিক্ত ওজন বা অপুষ্টির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন, কারণ এগুলো আমাদের নিজেদের অবহেলার ফল।
হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করো।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৩২১তিনি বলেছেন: ‘কোনো কাজ যদি আল্লাহর স্মরণ ছাড়া হয়, তা হয় বিনোদন বা অবহেলা, তবে চারটি কাজ ব্যতিক্রম: তিরন্দাজির অনুশীলন, ঘোড়া প্রশিক্ষণ, পরিবারের সঙ্গে খেলাধুলা এবং সাঁতার শেখা।’ (আত-তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির, হাদিস: ১০,৫৩৪)
এই হাদিসে তিনি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং ভ্রাতৃত্ব ও পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করে।
নিয়মিত ব্যায়ামের উপকারিতাআধুনিক যুগে টেলিভিশন, গেম কনসোল বা অন্যান্য বিনোদন শারীরিক অলসতা ও অসুস্থতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের মধ্যে টেলিভিশন দেখার সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থূলতা বৃদ্ধি পায়। (ক্রেসপো এট আল., ২০০১, আর্কাইভস অফ পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট মেডিসিন, ১৫৫, পৃ. ৩৬০-৩৬৫)
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।
ব্যায়ামের উপকারিতা অসংখ্য। এটি পেশির শক্তি বাড়ায়, নমনীয়তা উন্নত করে, সহনশীলতা বৃদ্ধি করে, হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং মানসিক চাপ কমায়। এয়ারোবিক ব্যায়াম হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, এবং ওজন প্রশিক্ষণ হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়, পিঠের ব্যথা ও আর্থ্রাইটিস কমায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, শরীরের বর্জ্য দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নড়াচড়া অপরিহার্য। তিনি ঘোড়ায় চড়া, তিরন্দাজি, কুস্তি এবং দৌড়কে পুরো শরীরের জন্য উপকারী খেলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ( যাদ-আল-মা‘আদ, ৪/২৫৫দারুল কুতুব, বৈরুত: ১৯৭৯)
আরও পড়ুনইসলামে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসাসেবার গুরুত্ব ০২ মে ২০২৫সুষম জীবনধারাইসলামে ব্যায়াম ও ফিটনেস জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এটি ধর্মীয় দায়িত্ব বা পারিবারিক সময়ের ক্ষতি করে হওয়া উচিত নয়। ইসলাম মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্যের উপর জোর দেয়। অতিরিক্ত বা উগ্র আচরণ ইসলামের শিক্ষার বিরুদ্ধে। ব্যায়ামের সময় লিঙ্গের অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা বা শরিয়াহ-বিরোধী পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইসলাম এমন কিছুকে উৎসাহিত করে যা মনকে সতেজ করে এবং শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে, যতক্ষণ তা পাপ, ক্ষতি বা ধর্মীয় দায়িত্বে বাধা সৃষ্টি না করে। নবী (সা.)-এর ঐতিহ্য স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও পারিবারিক একতাকে উৎসাহিত করে।
আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছি এবং তাঁকে হারিয়েছি। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, আমরা আবার দৌড়ালাম এবং তিনি জিতলেন।হযরত আয়েশা (রা.), সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫৭৮একটি হাদিসে বর্ণিত: নবী (সা.) আসলাম গোত্রের কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা তিরন্দাজির প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘ইসমাইলের সন্তানেরা, তির ছোঁড়ো, কারণ তোমাদের পিতা ছিলেন দক্ষ তিরন্দাজ। আমি অমুক দলের সঙ্গে আছি।’ একটি দল তখন তির ছোঁড়া বন্ধ করে। নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা তির ছুঁড়ছ না কেন?’ তারা বলল, ‘আপনি তাদের সঙ্গে থাকলে আমরা কীভাবে তির ছুঁড়ব?’ তিনি বললেন, ‘তির ছোঁড়ো, আমি তোমাদের সবার সঙ্গে আছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩৭৩)
আরেকটি হাদিসে হযরত আয়েশা (রা.) বলেন: ‘আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছি এবং তাঁকে হারিয়েছি। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, আমরা আবার দৌড়ালাম এবং তিনি জিতলেন। তখন তিনি বললেন, ‘এটি আগেরটির সঙ্গে সমান হলো।’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫৭৮)
সারকথামহানবী (সা.)-এর জীবন আমাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য একটি আদর্শ উদাহরণ। তিনি ব্যায়াম, সক্রিয় জীবনযাপন এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ইসলামের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি মন, শরীর ও আত্মার সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছে।
একজন সত্যিকারের মুমিন মানবদেহের বিস্ময়কে স্বীকার করে এবং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে পারি এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারি।
সূত্র: ডিসকভারিং ইসলাম আর্কাইভ
আরও পড়ুনসুন্দর জীবন গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা২১ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর ত রন দ জ ইসল ম র আম দ র আল ল হ ফ টন স বল ছ ন র জন য অবহ ল র সময উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসু নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিকেলে
শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকা কম্পলিট শাটডাউনের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে কি না সে সিদ্ধান্ত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নেবে নির্বাচন কমিশন। বিকেল ৫টায় নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে সভা ডেকেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম দুপুর দেড়টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
শাটডাউনের মধ্যে রাকসু নির্বাচন হতে পারে না
দুর্গাপূজার পরে রাকসু নির্বাচন চায় ছাত্রদল
তিনি বলেন, “বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সভা ডাকা হয়েছে। শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে যদি নির্বাচনের পরিবেশ না থাকে, তাহলে সে বিষয়ে কমিশনে আলোচনা হবে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরই ভোট গ্রহণ হবে কিনা সে সিদ্ধান্তই সভায় নেওয়া হবে।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্রিফ করার আগে সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, রাকসু ফর র্যাডিকাল চেঞ্জ, সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ ও ইউনাইটেড ফর রাইটস প্যানেলের প্রার্থীরা তাকে একটি স্মারকলিপি দেন। এতে তারা উল্লেখ করেন, পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না। তারা এ বিষয়টি বিবেচনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানান।
এর আগে, আজ দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মাকেটে প্যানেল চারটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান।
তিনি বলেন, “আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমরা সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা করছিলাম। পোষ্য কোটাকে সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেখানে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই পরষ্পরের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে, যা আমাদের কখনোই কাম্য নয়। রাকসু আমরা চাই, রাকসু দিতে হবেই। নির্বাচন কোনোভাবেই বন্ধ করা চলবে না। নির্বাচনের প্রাণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ না হলে সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবেই।”
তাসিন বলেন, “পোষ্য কোটা ইস্যুতে ক্যাম্পাস কমপ্লিট শাটডাউনের শিক্ষার্থীরা অলরেডি বাসায় যাওয়া শুরু করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছুটির পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত এই কমপ্লিট শাটডাউন আমাদের সব প্যানেলের, সব সতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে এবং দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া রাকসু নির্বাচনকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই শান্তিপূর্ণ, আনন্দমুখর পরিবেশে রাকসু নির্বাচন যা শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের নিয়েই সম্ভব যে পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় এখন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে কমপ্লিট শাটডাউনে রেখে কোনোভাবে রাকসু নির্বাচন হতে পারে না। এটা সুস্পষ্ট রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র।”
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, রাকসু নির্বাচন হতে হবে এবং কোনোভাবে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। তবে ক্যাম্পাস শাটডাউন, ক্লাস অফ রেখে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস বিমুখ রেখে কোনোভাবে রাকসু নির্বাচন হতে পারে না। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু রাকসু নির্বাচন হবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অতি দ্রুত পোষ্য কোটা ইস্যু মিমাংসা করে ক্যাম্পাসের স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
তাসিন বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রেখে রাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আমরা কোনোভাবে আমাদের প্রাণের রাকসু নির্বাচনকে একতরফা নির্বাচন হতে দিতে চাই না। ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল পরিবেশ, কমপ্লিট শাটডাউন, পূজার ছুটি সব কিছু বিবেচনা করে রাকসু নির্বাচন কমিশনারকে পরবর্তী পদক্ষেপ অতি দ্রুত নিতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেলগুলোর তাপসি রাবেয়া, সোহরাওয়ার্দী হল, জিয়া হল, বিজয় ২৪ হল ও সৈয়দ আমির আলি হলের প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
রাকসু নির্বাচনে মোট ১১টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে চারটি প্যানেল শাটডাউনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে স্মারকলিপি দিল।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ