ইসলাম স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের প্রতি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করা হয়েছে, যা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দেয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)

এখানে তিনি ঈমান ও চরিত্রের পাশাপাশি শারীরিক শক্তি ও স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এই নিবন্ধে আমরা নবী (সা.

)-এর জীবন থেকে ফিটনেস ও ব্যায়ামের শিক্ষা, এর উপকারিতা এবং ইসলামের সুষম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবো।

আল্লাহ আমাদের শরীরকে আমানত দিয়েছেন, যা একটি জটিল যন্ত্রের মতো। এটির অবহেলা করা উচিত নয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম এই আমানত রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।ইসলামে স্বাস্থ্য ও ফিটনেস

ইসলাম জীবনের প্রতি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যেখানে শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের শরীরকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন, যা একটি জটিল যন্ত্রের মতো। এটির অপব্যবহার বা অবহেলা করা উচিত নয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম এই আমানত রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তিনটি—নামাজ, রোজা এবং হজ্জ—পালনের জন্য শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিজেই একটি ব্যায়াম, যা শরীরের সমস্ত পেশি ও জয়েন্টকে সক্রিয় করে এবং মানসিক চাপ কমায়। রমজানের রোজা এবং হজ্জের কঠিন শারীরিক পরিশ্রমের জন্যও সুস্থ শরীর অপরিহার্য।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫নবীজি (সা.)-এর শারীরিক সুস্থতা

মহানবী (সা.) তাঁর অনুসারীদের কাজ করতে, উদ্যমী হতে এবং সকালে উঠে দিন শুরু করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছেন: ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৩২১)

নবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা স্বাভাবিকভাবেই শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন। তিনি অলসতা, অতিরিক্ত ওজন বা অপুষ্টির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন, কারণ এগুলো আমাদের নিজেদের অবহেলার ফল।

হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করো।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৩২১

তিনি বলেছেন: ‘কোনো কাজ যদি আল্লাহর স্মরণ ছাড়া হয়, তা হয় বিনোদন বা অবহেলা, তবে চারটি কাজ ব্যতিক্রম: তিরন্দাজির অনুশীলন, ঘোড়া প্রশিক্ষণ, পরিবারের সঙ্গে খেলাধুলা এবং সাঁতার শেখা।’ (আত-তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির, হাদিস: ১০,৫৩৪)

এই হাদিসে তিনি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং ভ্রাতৃত্ব ও পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করে।

নিয়মিত ব্যায়ামের উপকারিতা

আধুনিক যুগে টেলিভিশন, গেম কনসোল বা অন্যান্য বিনোদন শারীরিক অলসতা ও অসুস্থতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের মধ্যে টেলিভিশন দেখার সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থূলতা বৃদ্ধি পায়। (ক্রেসপো এট আল., ২০০১, আর্কাইভস অফ পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট মেডিসিন, ১৫৫, পৃ. ৩৬০-৩৬৫)

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।

ব্যায়ামের উপকারিতা অসংখ্য। এটি পেশির শক্তি বাড়ায়, নমনীয়তা উন্নত করে, সহনশীলতা বৃদ্ধি করে, হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং মানসিক চাপ কমায়। এয়ারোবিক ব্যায়াম হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, এবং ওজন প্রশিক্ষণ হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়, পিঠের ব্যথা ও আর্থ্রাইটিস কমায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।

ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, শরীরের বর্জ্য দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নড়াচড়া অপরিহার্য। তিনি ঘোড়ায় চড়া, তিরন্দাজি, কুস্তি এবং দৌড়কে পুরো শরীরের জন্য উপকারী খেলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ( যাদ-আল-মা‘আদ, ৪/২৫৫দারুল কুতুব, বৈরুত: ১৯৭৯)

আরও পড়ুনইসলামে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসাসেবার গুরুত্ব ০২ মে ২০২৫সুষম জীবনধারা

ইসলামে ব্যায়াম ও ফিটনেস জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এটি ধর্মীয় দায়িত্ব বা পারিবারিক সময়ের ক্ষতি করে হওয়া উচিত নয়। ইসলাম মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্যের উপর জোর দেয়। অতিরিক্ত বা উগ্র আচরণ ইসলামের শিক্ষার বিরুদ্ধে। ব্যায়ামের সময় লিঙ্গের অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা বা শরিয়াহ-বিরোধী পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইসলাম এমন কিছুকে উৎসাহিত করে যা মনকে সতেজ করে এবং শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে, যতক্ষণ তা পাপ, ক্ষতি বা ধর্মীয় দায়িত্বে বাধা সৃষ্টি না করে। নবী (সা.)-এর ঐতিহ্য স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও পারিবারিক একতাকে উৎসাহিত করে।

আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছি এবং তাঁকে হারিয়েছি। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, আমরা আবার দৌড়ালাম এবং তিনি জিতলেন।হযরত আয়েশা (রা.), সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫৭৮

একটি হাদিসে বর্ণিত: নবী (সা.) আসলাম গোত্রের কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা তিরন্দাজির প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘ইসমাইলের সন্তানেরা, তির ছোঁড়ো, কারণ তোমাদের পিতা ছিলেন দক্ষ তিরন্দাজ। আমি অমুক দলের সঙ্গে আছি।’ একটি দল তখন তির ছোঁড়া বন্ধ করে। নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা তির ছুঁড়ছ না কেন?’ তারা বলল, ‘আপনি তাদের সঙ্গে থাকলে আমরা কীভাবে তির ছুঁড়ব?’ তিনি বললেন, ‘তির ছোঁড়ো, আমি তোমাদের সবার সঙ্গে আছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩৭৩)

আরেকটি হাদিসে হযরত আয়েশা (রা.) বলেন: ‘আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছি এবং তাঁকে হারিয়েছি। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, আমরা আবার দৌড়ালাম এবং তিনি জিতলেন। তখন তিনি বললেন, ‘এটি আগেরটির সঙ্গে সমান হলো।’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫৭৮)

সারকথা

মহানবী (সা.)-এর জীবন আমাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য একটি আদর্শ উদাহরণ। তিনি ব্যায়াম, সক্রিয় জীবনযাপন এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ইসলামের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি মন, শরীর ও আত্মার সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছে।

একজন সত্যিকারের মুমিন মানবদেহের বিস্ময়কে স্বীকার করে এবং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে পারি এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে পারি।

সূত্র: ডিসকভারিং ইসলাম আর্কাইভ

আরও পড়ুনসুন্দর জীবন গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা২১ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর ত রন দ জ ইসল ম র আম দ র আল ল হ ফ টন স বল ছ ন র জন য অবহ ল র সময উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

এলাকার নামেই সিনেমা—আবেগে ভাসলেন পাইকগাছার মানুষ

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের দারুণ মল্লিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিনেমা ‘দেলুপি’র জমজমাট প্রিমিয়ার প্রদর্শনী। বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া এই আয়োজনে স্কুলমাঠ যেন পরিণত হয় এক উৎসবে।

বুধবার প্রিমিয়ার হলেও সিনেমা হলে ‘দেলুপি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। সারা দেশে মুক্তি পাবে ১৪ নভেম্বর। প্রিমিয়ার প্রদর্শনী ঘিরে স্থানীয় মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেল থেকেই মাঠে ভিড় করেন শত শত দর্শক। অনেকের হাতে সিনেমার পোস্টার, কেউ–বা পরিবার–বন্ধুদের সঙ্গে অপেক্ষায় পর্দা ওঠার। চারপাশে তখন উৎসবের আবহ, আনন্দের কোলাহল। সিনেমা শেষে দর্শকদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস। নিজেদের জীবনের গল্প বড় পর্দায় দেখে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

দেলুটি গ্রামের বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকার নামেই সিনেমা—এটা ভাবতেই গর্ব লাগে। গল্পটা এত বাস্তব, যেন আমাদের জীবনেরই কথা বলা হয়েছে।’ স্থানীয় ৫ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বদিয়ার রহমান বলেন, ‘ভাঙন ছিল আমাদের জীবনের অংশ। সেই কষ্টই এ সিনেমায় উঠে এসেছে। “দেলুপি” শুধু আমাদের গল্প নয়, অন্য উপকূলের অনেক মানুষের গল্পও বটে। আশা করি এই সিনেমা আমাদের দুর্দশার কথা আরও দূরে পৌঁছে দেবে।’

বুধবার প্রিমিয়ার হলেও সিনেমা হলে ‘দেলুপি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার

সম্পর্কিত নিবন্ধ