গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে নিহত ব্যক্তির বড় ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নগরের বাসন থানায় মামলাটি করেন।

এদিকে ওই হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে যাদের দেখা গেছে, তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এ সম্পর্কে বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম–পরিচয় দিতে পারছি না।’

গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁকে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ সূত্র জানা যায়, আসাদুজ্জামান তুহিন থাকতেন গাজীপুর মহাগরীর চৌরাস্তা এলাকায়। পূর্বশত্রুতার জেরে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি দৌড়ে ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে দোকানের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি মারা গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই স্থানীয় একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়, যাতে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দেখা যায়। ওই ঘটনায় পুলিশ রাতেই মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। তাদের গ্রেপ্তার করলেই ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

নিহত সাংবাদিকের বড় ভাই সেলিম হোসেন বলেন, আজ দুপুরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। পরে তাঁর লাশ হস্তান্তর করা হয়। পাশেই চান্দনা ঈদগাহ মাঠে জুমার নামাজের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সভা হয়েছে। আজ সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করে সাংবাদিক ইউনিয়ন। কর্মরত সাংবাদিকেরা হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইকারীদের মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করতে হবে। আসামিরা চিহ্নিত হয়েছে, তাদের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এরপরও গ্রেপ্তার করতে না পারা প্রশাসনের ব্যর্থতা।

গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সাংবাদিক ফজলুল হক মোড়ল, ফারদিন ফেরদৌস, মাসুদ রানা, মাজহারুল ইসলাম, মাহমুদা শিকদার, আমিনুল ইসলাম, শরীফ আহমেদ, শাহ শামসুল হক, আজিজুল হক, রেজাউল করিম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস দ জ জ ম ন ত হ ন গ র প ত র কর হত য র

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লার সেই বিএনপিকর্মী ইব্রাহিম মারা গেছেন

ফতুল্লার বিএনপি কর্মী ইব্রাহিম (৫২) মারা গেছেন। সে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীনবস্থায় মারা যান।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে হাজিগঞ্জ জামে মসজিদে নিহতের নামাজের জানাজা শেষে পাঠানটুলি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত ইব্রাহিম ফতুল্লা থানার ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড হাজীগঞ্জের আব্দুল জলিলের পুত্র। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক।

জানা যায়,২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে বিএনপির ডাকা মহা সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদলের ব্যানারে সে অংশগ্রহণ করে।

সমাবেশের শেষের দিকে মুল মঞ্চের পেছনের দিকে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা,কর্মীও সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশ বিএনপি নেতা- কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

ইব্রাহিম পুলিশের হামলায় মারাত্নক আহত হয়ে রাস্তায় পরে থাকে। সে সময় সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ঘটনার চারদিন পর তার সহোযোগিরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে খুঁজে পায়। দীর্ঘদিন সহোযোগিরা নিজেদের অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর আল বারাকা নামের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়। 

পরবর্তীতে ইব্রাহিমকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন হলে বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ  বাবুল তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই রোববার রাতে তিনি মারা যান।

ফতুল্লা ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ পারভেজ মিয়া জানান,নিহত ইব্রাহিম ২০২৩ সালে ২৮ অক্টোবর  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ঘোষিত পল্টন পার্টি অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপি ও  ইউনিয়ন যুবদলের সাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন । 

সমাবেশ চলাকালে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন টিপু  ও নিহত ইব্রাহিম এবং তিনি সহ আরো নেতা-কর্মীরা পল্টন পার্টি অফিস সংলগ্ন  চায়না টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।  হঠাৎ পুলিশ তাদের উপর চড়াও হয়। এতে করে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে  পরে।

অতর্কিত হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার  পর  প্রায় চার দিন পর  পত্রিকার নিউজে দেখতে পায় ইব্রাহিম নামে একজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সেই সংবাদের পর  তার পরিবারের লোকজন  এবং ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রওশন আলী ঢাকা মেডিকেলে খোঁজ নেওয়ার পরে তারা নিশ্চিত হন যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকা চিকিৎসারতি হচ্ছে তাদের নিখোঁজ  ইব্রাহিম।

ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসা শেষ করে তাকে বাসায় আনা হয়। বাসায় আনার পরে উনি আবার অসুস্থ হয়ে পরে। ফলে ৮ নং ওয়ার্ডের সকল নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় পুনরায় তাকে মদনপুর আল বারাকা হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা  শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পরেন। 

এমতাবস্থায় নাসিক ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক রিপন তাকে দেখতে আসলে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ পায়। প্রকাশিত সংবাদের পর বিএনপি নেতা শিল্পপতি  প্রাইম বাবুল ভাই তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নেন। 

বাবুল ভাই নিজে এসে তার দাত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমান ১১ টা ৪০ মিনিটের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ