মানিকগঞ্জে অনিয়ম আর অসংগতি নিয়ে গড়ে ওঠা রিসোর্ট ‘ডেরা’
Published: 22nd, September 2025 GMT
স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে ফেলে কৃষিজমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে রিসোর্ট। অথচ জমির মালিকদের অনেককে এখনো দাম পরিশোধ করা হয়নি। জনবহুল এলাকায় গড়ে তোলা রিসোর্টটির ফায়ার সার্ভিসের হালনাগাদ লাইসেন্স (অনুমোদন) নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও মেয়াদোত্তীর্ণ। অনুমোদনের সময় দেওয়া অনেক শর্তও মানা হচ্ছে না।
মানিকগঞ্জে অবস্থিত ‘ডেরা রিসোর্ট ও স্পা’ নামের বিলাসবহুল রিসোর্ট সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথাগুলো বলা হয়েছে। সম্প্রতি তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেয়। পরে তা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। জেলার ঘিওর উপজেলার পুরানগ্রাম এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া লাইসেন্সটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শেখ রাশেদউজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে রিসোর্টটির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ৫ জুলাই উদ্বোধন করা হয় এই বিনোদন ও অবকাশযানকেন্দ্রটি। তবে এখনো জমির মালিকদের অনেকেই জমির মূল্য পাননি। বিনোদনকেন্দ্রটিতে মাদক সেবন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করে জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে গত ৩ মার্চ ‘চাপে ফেলে জমি ক্রয়, কৃষকেরা পাননি টাকা’ শিরোনামে প্রথম আলোতে সংবাদ ছাপা হয়। পরে অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাজমুল হাসান খানকে প্রধান করা হয়।
এশিউর গ্রুপের মালিকাধীন এই রিসোর্টে অবকাশযাপনের জন্য বিভিন্ন কটেজ, সুইমিং, স্পা, রেস্তোরাঁ, খেলার মাঠ ইত্যাদি রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা আয়োজনে ভেন্যু হিসেবেও ডেরা রিসোর্ট ব্যবহৃ হয়। এর মালিক তিনজন বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাঁরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
শেখ সাদী এশিউর গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। তবে তিনি আগে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের আত্মীয় পরিচয় দিতেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শেখ সাদীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি। রিসোর্টের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ওমর ফারুক বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সের আবেদন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হবে। জমির মালিকদের কে কত টাকা পাবেন, তা তিনি জানেন না। মালিকেরা তাঁকে জানাননি।
জমির মূল্য পাননি মালিকেরা
গত ২৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে দিনব্যাপী জমির মালিক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। তদন্তের শুরুতে জমির মালিকেরা ও এলাকাবাসী ডেরা রিসোর্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। তাঁরা ডেরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ রিসোর্টটির কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। পরে কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লার কাছে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০-১১ সালের দিকে চাপে ফেলে শুরুতে গরুর খামার স্থাপনের নামে কৃষকদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়। পরে কৃষকদের চাপে ফেলে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখলে নেওয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। একপর্যায়ে মাটি ফেলে তিন ফসলি জমি ভরাট করে চারদিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়ে রিসোর্টের নির্মাণকাজ করে কর্তৃপক্ষ।
এই কৃষকদের অনেকেই এখনো জমির মূল্য পাননি। বেশ কয়েকজন জমির মালিক বলেছেন, উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। স্থানীয় ইসমাইল হোসেন ও তাঁর তিন ভাইয়ের ১৩ শতক, আবদুর রাজ্জাকের ৪৫ শতক, ফজলুল দেওয়ানের প্রায় ৪ শতক জমির মূল্য এখনো পাননি। এ ছাড়া স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজনের জমি রিসোর্ট দখল করে রেখেছেন, যার মূল্য তাঁরা এখনো পাননি।
রিসোর্টের উত্তর-পূর্ব পাশে একটি সেতু রয়েছে। সেতুর নিচে মাটি ফেলে তা ভরাট করায় পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। এতে আশপাশের বিপুল কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিবেশের ছাড়পত্র নেই
২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর রিসোর্টের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০টি শর্ত আরোপ করে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ২৫ জুন সেই ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়। মেয়াদ ছিল গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে। তখন দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ছাড়পত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নবায়নের কোনো আবেদন দাখিল করা হয়নি। পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্ত অনুযায়ী এসটিপি (পয়ঃশোধন কেন্দ্র) নির্মাণ করা হয়নি। এ ছাড়া অনুমোদিত নকশার তুলনায় কক্ষসংখ্যা বেশি।
এ বিষয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ডেরা কর্তৃপক্ষকে লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়। ২৩ মার্চ ডেরা কর্তৃপক্ষ নোটিশের যে জবাব দিয়েছে, তা সন্তোষজনক নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ছাড়পত্র নবায়ন ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং শর্তভঙ্গের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের এনফোর্সমেন্ট শাখায় গত ২৮ জুলাই নথি পাঠানো হয়েছে।
নবায়ন নেই ফায়ার লাইসেন্স
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রিসোর্টটির ফায়ার লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল। লাইসেন্সে ৪০ হাজার বর্গফুটের অনুমোদন থাকলেও প্রতিষ্ঠানের আয়তন বেশি, যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অগ্নিপ্রতিরোধ, অগ্নিনির্বাপণ ও জননিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালকের অনুমোদন গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভিন্ন সময় ডেরা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে।
অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন–২০০৩ অনুযায়ী রিসোর্টের ফায়ার লাইসেন্সটি দুই বছর ধরে নবায়ন করা হয়নি। ফায়ার লাইসেন্স নবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন না করে রিসোর্টটি সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার চিঠি তিনি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিসোর্টটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিন ফসলি কৃষিজমি নষ্ট করে রিসোর্ট স্থাপন করা হয়েছে। কৃষিজমি বিনষ্টের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের প্রশান্তি বিঘ্ন না করে এটি অন্য কোনো পর্যটন এলাকায় নির্মাণ করা সমীচীন ছিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ছ ড়পত র ব যবস থ শ সন র র জন য র অন ক অন ম দ গ রহণ বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার শুধু অভিজাত ভিআইপি এলাকাই কেন ‘নীরব’
কাগজে-কলমে রাজধানীর সচিবালয় ও এর আশপাশের এলাকা হচ্ছে ‘নীরব এলাকা’। অর্থাৎ ওই এলাকায় হর্ন বাজানো নিষেধ। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে সচিবালয় ও এর আশপাশের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, চালকেরা ইচ্ছেমতো হর্ন বাজাচ্ছেন। ট্রাফিক সিগন্যালে কিংবা মোড়ে হর্নের আওয়াজে কান ঝালাপালা।
সচিবালয় এলাকার মতো ঢাকার আরও বেশ কয়েকটি এলাকাকে সরকারিভাবে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা আছে। এলাকাগুলো হলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশ (বিমানবন্দরের উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা), আগারগাঁও, সংসদ ভবন এলাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ রাজধানীর অভিজাত আরও চারটি এলাকা—গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
নগরবাসী অনেকের প্রশ্ন, কেন শুধু অভিজাত কিংবা ভিআইপি এলাকাকেই নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে? অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের কি শব্দদূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হচ্ছে না?পরিবেশবিদ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, নীরব এলাকা ঘোষণার আগে নির্দিষ্ট কোনো এলাকার শব্দদূষণ নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করা হয় না। ঘোষণার পরেও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েই দায় সারছে। এদিকে নগরবাসী অনেকের প্রশ্ন, কেন শুধু অভিজাত কিংবা ভিআইপি এলাকাকেই নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে? অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের কি শব্দদূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হচ্ছে না?
আরও পড়ুনরাজধানীর চার অভিজাত এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫‘নীরব এলাকা’ কীনীরব এলাকা হলো এমন একটি নির্দিষ্ট এলাকা, যেখানে শব্দদূষণ রোধে হর্ন বাজানো ও উচ্চ শব্দ সৃষ্টি নিষিদ্ধ। সাধারণত হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত বা বিমানবন্দরসংলগ্ন এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব স্থানে যানবাহনের চালকদের হর্ন বাজানো নিষেধ থাকে। শব্দমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার বেশি হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের আদর্শ মান দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের ৪০ ডেসিবেল। এ সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলা ৪০ ডেসিবেল। ওই বিধিমালার ধারা ৮(২) অনুযায়ী, নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথম অপরাধের জন্য কমপক্ষে এক মাস কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। পরে অপরাধের জন্য কমপক্ষে ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের আদর্শ মান দিনে ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের ৪০ ডেসিবেল। এ সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
সচিবালয় এলাকায় বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ, যানবাহনের চাপে শব্দদূষণ কমানো যায়নি। বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ ছিল শব্দদূষণের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায়। যা নবায়ন হচ্ছে। আর নতুন বিধিমালায় ট্রাফিক পুলিশকে সরাসরি আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হবেপরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদসিগন্যালে থামার আগে–পরে হর্ন বেশিগত বুধবার বিকেলে সচিবালয়ের বাইরে ও চারপাশের সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত বাহনের চালকেরা অহেতুক হর্ন বাজাচ্ছেন। বিশেষ করে মোটরসাইকেলচালক ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকেরা যেন প্রতিযোগিতা করে হর্ন দেন। বেশি হর্ন বাজাতে দেখা যায় ট্রাফিক সিগন্যালে থামার আগে এবং সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ার পরপর।
নীরব এলাকা ঘোষণাহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশ (বিমানবন্দরের উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা)
আগারগাঁও
সংসদ ভবন এলাকা
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
নীরব ঘোষিত এলাকায় হর্ন বাজালেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ওই এলাকায় ঘুরে অহেতুক হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
সচিবালয়সংলগ্ন জিপিও মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী এক ট্রাফিক সদস্য বলেন, ‘আমরা তো যানবাহন আর যানজট নিয়ন্ত্রণ করেই কূল পাই না।’
বিকেলে সচিবালয়ের বাইরে ও চারপাশের সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত বাহনের চালকেরা অহেতুক হর্ন বাজাচ্ছেন। বিশেষ করে মোটরসাইকেলচালক ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকেরা যেন প্রতিযোগিতা করে হর্ন দেন। বেশি হর্ন বাজাতে দেখা যায় ট্রাফিক সিগন্যালে থামার আগে এবং সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ার পরপর।ঘোষণার পরেও মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণস্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) সরকারিঘোষিত নীরব এলাকাগুলোতে ঘোষণার আগে ও পরে শব্দদূষণের তারতম্য যাচাই করতে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটি স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মিটারের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে শব্দমাত্রা পরিমাপ করে।
আমরা তো যানবাহন আর যানজট নিয়ন্ত্রণ করেই কূল পাই না।ট্রাফিক সদস্যক্যাপসের ১০ সদস্যের একটি গবেষক দল ২০২২ সালের মার্চে ঢাকা শহরের চারটি নীরব ঘোষিত এলাকায় শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে এবং সব এলাকাতেই মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ শনাক্ত করে। এর মধ্যে সচিবালয় এলাকায় গড় শব্দমাত্রা সর্বোচ্চ ১০০ দশমিক ১৭ ডেসিবেল পাওয়া যায়, যা জাতীয় আদর্শ মানের প্রায় দ্বিগুণ। এর পরেই ছিল জাতীয় সংসদ এলাকা, যেখানে শব্দমাত্রা ছিল ৯৯ দশমিক ৩৫ ডেসিবেল।
সচিবালয়ে গড় শব্দমাত্রা ১০০ দশমিক ১৭ ডেসিবেল
জাতীয় সংসদ এলাকায় শব্দমাত্রা ৯৯ দশমিক ৩৫ ডেসিবেল
আগারগাঁও এলাকায় সর্বনিম্ন গড় শব্দমাত্রা ছিল ৭৮ দশমিক ১১ ডেসিবেল
অন্যদিকে আগারগাঁও এলাকায় সর্বনিম্ন গড় শব্দমাত্রা ছিল ৭৮ দশমিক ১১ ডেসিবেল, যা আদর্শ মানের চেয়ে বেশি। জরিপে সচিবালয়ে সর্বোচ্চ ১২৭ ডেসিবেল এবং আগারগাঁওয়ে সর্বনিম্ন ৫৩ দশমিক ৪০ ডেসিবেল রেকর্ড হয়। সার্বিকভাবে সব এলাকার গড় শব্দমাত্রা ছিল ৯৭ দশমিক ৬৩ ডেসিবেল, যা নীরব এলাকা ঘোষণার কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
শুধু অভিজাত বা উন্নত এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা নীতিগত বৈষম্য এবং সমতার পরিপন্থী। অতিরিক্ত শব্দে ঢাকার অন্যান্য এলাকায়ও শ্রবণক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সেখানে কোনো উদ্যোগ নেই।বিআইপি সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান ঘোষণা সীমাবদ্ধ কাগজে-কলমেক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার মনে করেন, ঢাকার মতো অতিরিক্ত শব্দদূষণের শহরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কিছু এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারত। কিন্তু বাস্তবে যেসব এলাকা নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে, সেগুলোতে ঘোষণার আগে কোনো সমন্বয় সভা হয়নি। কোনো বেজলাইন ডেটা সংগ্রহ করা হয়নি এবং নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পর্যালোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শুধু অভিজাত বা উন্নত এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা নীতিগত বৈষম্য এবং সমতার পরিপন্থী। অতিরিক্ত শব্দে ঢাকার অন্যান্য এলাকায়ও শ্রবণক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সেখানে কোনো উদ্যোগ নেই।
নীরব ঘোষিত এলাকাগুলোতেও হর্ন বাজানো বন্ধ করা ও শব্দদূষণ কমানো যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সচিবালয় এলাকায় বাস্তবায়ন কঠিন। কারণ, যানবাহনের চাপে শব্দদূষণ কমানো যায়নি। বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ ছিল শব্দদূষণের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায়। যা নবায়ন হচ্ছে। আর নতুন বিধিমালায় ট্রাফিক পুলিশকে সরাসরি আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।