জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, লিখিত নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে উপাচার্য এ তথ্য জানান।

উপাচার্য বলেন, “আজকের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হবে। সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। আগামী রোববার তারা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন। কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। যা তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।” 

পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড.

হাবিবুর রহমান হলের বিষয়ে জানতে চাইলে জবি উপাচার্য বলেন, “স্টিল বেজড দুইটি হলও তাদের দ্বারা বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তারা সেটাও গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”

ক্যাম্পাস শাটডাউন রাখার ঘোষণা

এদিকে শিক্ষার্থীরা লিখিত নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, “যতদিন পর্যন্ত সেনাবাহিনী লিখিতভাবে কাজ বুঝে না নিবে ততদিন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।” 

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়। 

২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।

পরের বছর ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মোট ২০০ একর জমির মধ্যে ১৮৮ দশমিক ৬০ একর জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝে পায়। কিন্তু এখনো অবশিষ্ট ১১ দশমিক ৪০ একর জমি বুঝে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ৫ নভেম্বর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এরপর ১১ নভেম্বর ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবিতে সচিবালয় ‘ঘোরাও করেন’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সেদিন শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তারা সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের তিন দিন সময় চাইলে সচিবালয়ের সামনের অবস্থান থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পরদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরে সায় দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এবারে অনশন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/লিমন/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার