উদ্‌যাপনের দৃশ্যটা সবার চেনা। গত বছরেও লেখা হয়েছে এই গল্প। সময় বদলেছে, বদলে গেছে আরও অনেক কিছুই। কিন্তু বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন থেকে গেছে একই—ফরচুন বরিশাল। শিরোপা উঁচিয়ে ধরা অধিনায়কের নামটাও অভিন্ন—তামিম ইকবাল।

তবে তামিমের চোখ আজ ছলছল। জয়ের আনন্দের দিনে তাঁকে ছুঁয়ে গেছে বিদায়ের বেদনাও। ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় ভেসে এল তামিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণা।

জাকের আলী, জাকির হাসান, তানজিম হাসান কিংবা ইয়াসির আলী জানালেন তাঁকে ঘিরে নিজেদের স্মৃতি। কারও কণ্ঠে তামিমের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করতে না পারার আক্ষেপ, কেউ বললেন তামিমকে কাছ থেকে দেখতে পাওয়ার অনুভূতি।

বড় পর্দায় ওই দৃশ্য, তামিমের বড় কোনো ইনিংসের গল্প যখন বলা হচ্ছে; তিনি তখন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার পাশে দাঁড়িয়ে শুনছেন সেসব। তাঁর চোখেমুখে বিদায়ের বেদনা, চোখ দুটোতে হয়তো পুরোনো অনেক স্মৃতির নতুন দৃশ্যায়ন। প্রিয় বন্ধু মুশফিকুর রহিম ও দীর্ঘদিনের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহও মঞ্চে ওঠেন এরপর।

মাহমুদউল্লাহ তামিমকে ব্যাখ্যা করেন এক শব্দে—ক্যারিশম্যাটিক। মুশফিক জানান, তাঁর চোখে তামিমই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। এসব গল্পের পেছনের কারণটা এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া তামিমকে বিপিএল ফাইনালের পরই আনুষ্ঠানিক ‘বিদায়’ বলেছে বিসিবি।

অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে নিজের দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মঞ্চে আসেন তামিমও। ১৭ বছরের বর্ণিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে আরও একবার বলেন নিজের শুরুর গল্প। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতা বাংলাদেশের উদ্‌যাপন দেখে ছোট্ট বয়সেই ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, সেটাই জানান, ‘বাংলাদেশ যখন শিরোপা জিতল। পুরো বাংলাদেশের উপভোগটা ছিল অসাধারণ। ওই দিনই ঠিক করলাম, আমি ক্রিকেটার হব।’

তামিমের ক্রিকেটার হওয়ার গল্পের পেছনে বাবা ইকবাল খানের কথা শোনা গেছে অনেকবারই। বাবার কথা তামিম স্মরণ করেন আরও একবার, ‘আমার বাবার ইচ্ছে ছিল, একদিন আমি দেশের হয়ে খেলব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি আমাদের সঙ্গে নেই।’

তামিমের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারজুড়ে জড়িয়ে ছিলেন চাচা আকরাম খান। তাঁদের নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে অনেকবার। এসব সহ্য করায় আকরামের প্রতি আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জানান তামিম। ছেলে আরহাম ইকবাল কীভাবে তাঁর সমর্থক হয়ে গেছে, তা–ও শোনান তামিম।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না ফেরার সিদ্ধান্ত যে চট্টগ্রামে নেওয়া, সেটাও জানান তামিম। এরপর সমর্থকদের জন্য শেষ বার্তা হিসেবে তিনি বলেন, ‘তামিমিয়ান, সাকিবিয়ান, মাশরাফিয়ান বলে কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশের সমর্থক। এটা (নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ভক্ত হওয়া) বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করেছে। দয়া করে এটা থামান। আমরা যে কারও সমর্থক হতে পারি, কিন্তু সবাই বাংলাদেশি। এটাই আমার শেষ বার্তা।’

তামিমের সঙ্গে মঞ্চে আসা স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকীও কথা বলেন। তামিম এখন পরিবারকে অনেক সময় দিতে পারবেন, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

তামিমের সময়জুড়ে এখন হয়তো অনেক কিছুই থাকবে। কিন্তু ২০০৭ বিশ্বকাপে জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারা ছক্কা, লর্ডস টেস্টে সেঞ্চুরি কিংবা ভাঙা আঙুল নিয়ে বাংলাদেশের জন্য এক হাতে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়া থেকে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অমলিন স্মৃতিতে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মধ্যরাতে সাংবাদিককে অবরুদ্ধ, পরে পুলিশে হস্তান্তর

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে মধ্যরাতে জামাল হোসেন (৪৫) নামের এক সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এরপর তাঁকে পুলিশের হস্তান্তর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের টাউনহল মোড়–সংলগ্ন ফ্ল্যাট রোডে এ ঘটনা ঘটে। একদল তরুণ তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

জামাল হোসেন দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি ও নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। একটি কুরিয়ার সার্ভিসের স্থানীয় পরিবেশক হিসেবেও রয়েছেন তিনি।

জামাল হোসেনের ব্যবসায়িক অংশীদার মো. জিহাদ প্রথম আলোকে বলেন, রাতে তিনি জামাল হোসেনের সঙ্গে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় কয়েকজন তরুণ জামাল হোসেনের কাছে এসে তাঁর পরিচয় জানতে চান। একপর্যায়ে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে আয়োজিত একটি মানববন্ধনের ছবি দেখিয়ে সেখানে জামাল হোসেনের থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন।

মো. জিহাদ আরও বলেন, জামাল হোসেন ওই তরুণদের পরিচয় জানতে চাইলে ইয়াছিন আরাফাত নামের তাঁদের একজন নিজেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির লোক দাবি করেন। এরপর জামাল হোসেনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কারণে আমাদের নেতাদের ফাঁসি হয়েছে।’ জামাল হোসেন তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যে আরও কিছু তরুণ সেখানে জড়ো হয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জামাল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে জানতে চেয়ে আজ বুধবার দুপুরে ইয়াছিন আরাফাত নামের ওই তরুণকে ফোন করা হয়। তখন তিনি বলেন, ‘ভাই এটা সেন্ট্রাল বিষয়। আমি থানায় আছি। এখানে সবাই আছেন।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।

জানতে চাইলে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ইসহাক খোন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংবাদিক জামাল হোসেনকে কারা অবরুদ্ধ করেছেন কিংবা পুলিশে দিয়েছেন, তা তিনি জানেন না। যাঁদের নাম শুনছেন, তাঁদের তিনি চেনেন না। এ ছাড়া সাংগঠনিকভাবে জামায়াতের এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় সুনির্দিষ্টভাবে কোনো মামলা নেই। গতকাল মধ্যরাতে লোকজন তাঁকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ছাড়া তখন তাঁকে পুলিশ উদ্ধার না করলে অপ্রীতিকর ঘটনারও আশঙ্কা ছিল। ওসি আরও বলেন, যাঁরা তাঁকে আটক করেছেন, তাঁরা আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। বিষয়টি নিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিখোঁজের দুই দিন পর সেপটিক ট্যাংক থেকে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার
  • ঈদের ছুটিতে ক্রিকেটাঙ্গন
  • রংপুর মেডিকেলে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস’ চেয়ে শিক্ষার্থীদের বিবৃতি
  • ধানমন্ডিতে র‌্যাব পরিচয় দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬
  • র‌্যাব পরিচয়ে বাসায় ডাকাতি ও পুলিশের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার ৬
  • ধানমন্ডিতে র‍্যাব পরিচয়ে ভবনে ঢুকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, পুলিশের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ৬
  • অর্ধযুগ পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করবেন খালেদা জিয়া  
  • গ্যলারিতে আইপিএল দেখার অভিজ্ঞতা: অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়
  • শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে এসি ল্যান্ডের পোস্ট, তোপের মুখে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার
  • মধ্যরাতে সাংবাদিককে অবরুদ্ধ, পরে পুলিশে হস্তান্তর