বৈসাবি শব্দটি কীভাবে এল, এই নাম নিয়ে কেন বিতর্ক
Published: 12th, April 2025 GMT
পাহাড়ের বর্ষবিদায় ও বরণ উপলক্ষে ১৯৮৭ সালে রাঙামাটি কলেজে একটি দেয়ালিকা প্রকাশিত হয়। পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উৎসবের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয় দেয়ালিকাটির। ওই নামটি পরে পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠনের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মূলত ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সঙ্গে প্রায় মিল থাকা ম্রোদের চাংক্রান, খেয়াংদের সাংলান, খুমিদের চাংক্রাই ও চাকদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসবের সংক্ষেপিত করে ‘বৈসাবি’ নামের শব্দটি নেওয়া হয়। গত শতকের নব্বই দশক থেকে বিভিন্ন নামের একই উৎসব অভিন্ন নামে ‘বৈসাবি’ হিসেবে উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গঠন করা হয় বৈসাবি উদ্যাপন কমিটি।
তবে বিগত বেশ কিছু বছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, বৈসাবি নামে পাহাড়ে কোনো উৎসব নেই। অন্যরা বলছেন, পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রয়োজনেই বৈসাবি শব্দটি এসেছে।
রাঙামাটি কলেজে ১৯৮৭ সালে বৈসাবি নামের দেয়ালপত্রিকা নিজ হাতে লিখেছেন কলেজের তৎকালীন ছাত্র প্রবীণ খীসা। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। তিনি বলেছেন, সামরিক শাসনের সেই সময়ে কোনো সংগঠনের নামে উৎসব, শোভাযাত্রা করা সম্ভব ছিল না। এ জন্য পাহাড়ের সব জাতিগোষ্ঠীকে একই সাংস্কৃতিক সংহতির গাঁথুনিতে নিয়ে আসার জন্য ‘বৈসাবি’ নামে প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছিল। ওই প্ল্যাটফর্ম ১৯৮৮ সালে পার্বত্য অঞ্চলে প্রথম বৈসাবি শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। হেমল দেওয়ানের সম্পাদনায় ‘বৈসাবি’ নামে ম্যাগাজিনও প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের বৈসাবি উদ্যাপন পরিষদে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা অধিকাংশই এখন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে রয়েছেন। কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। তবে তাঁদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বলেছেন, সামরিক শাসনের সেই সময়ে সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সৃজনশীল প্রতিবাদ হিসেবে বৈসাবি নাম দিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়েছিল। এ জন্য বেশ কয়েকজনকে কারাভোগ করতও হয়েছে।
বৈসাবির শুরুর দিন সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে নদীতে ফুল ভাসান তঞ্চগ্যা নারীরা। আজ সকালে বান্দরবানের শঙ্খ নদের পাড়ে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ার শেরপুরে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন ৩ বন্ধু, দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের
বগুড়ার শেরপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন গাড়িদহ ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের মেহেদী হাসান (২০) এবং শেরপুর পৌর শহরের গোঁসাইপাড়া মহল্লার সাহাবুল হাসান (২০)। আহত হয়েছেন একই এলাকার উৎসব চক্রবর্তী (২০)।
প্রত্যক্ষদর্শী দুজন জানান, তিন বন্ধু একটি মোটরসাইকেলে করে রামেশ্বরপুর গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে মোটরসাইকেলের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িটি রাস্তার পাশে একটি দোকানের শাটারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় মেহেদী হাসান ও সাহাবুল হাসান গুরুতর জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আহত অপরজন উৎসব চক্রবর্তী স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনজনই বন্ধু ছিলেন। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন সাহাবুল হাসান।
আহত উৎসব চক্রবর্তী বলেন, গতকাল রাতে মেহেদী হাসানকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনজনই এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বগুড়া সদর থানার ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (তদন্ত) লাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১০টা থেকে সোয়া ১০টার মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাহাবুল হাসান ও মেহেদী হাসান মারা যান।
শেরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।