পাহাড়ের বর্ষবিদায় ও বরণ উপলক্ষে ১৯৮৭ সালে রাঙামাটি কলেজে একটি দেয়ালিকা প্রকাশিত হয়। পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উৎসবের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয় দেয়ালিকাটির। ওই নামটি পরে পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠনের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মূলত ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সঙ্গে প্রায় মিল থাকা ম্রোদের চাংক্রান, খেয়াংদের সাংলান, খুমিদের চাংক্রাই ও চাকদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসবের সংক্ষেপিত করে ‘বৈসাবি’ নামের শব্দটি নেওয়া হয়। গত শতকের নব্বই দশক থেকে বিভিন্ন নামের একই উৎসব অভিন্ন নামে ‘বৈসাবি’ হিসেবে উদ্‌যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গঠন করা হয় বৈসাবি উদ্‌যাপন কমিটি।

তবে বিগত বেশ কিছু বছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, বৈসাবি নামে পাহাড়ে কোনো উৎসব নেই। অন্যরা বলছেন, পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রয়োজনেই বৈসাবি শব্দটি এসেছে।

রাঙামাটি কলেজে ১৯৮৭ সালে বৈসাবি নামের দেয়ালপত্রিকা নিজ হাতে লিখেছেন কলেজের তৎকালীন ছাত্র প্রবীণ খীসা। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। তিনি বলেছেন, সামরিক শাসনের সেই সময়ে কোনো সংগঠনের নামে উৎসব, শোভাযাত্রা করা সম্ভব ছিল না। এ জন্য পাহাড়ের সব জাতিগোষ্ঠীকে একই সাংস্কৃতিক সংহতির গাঁথুনিতে নিয়ে আসার জন্য ‘বৈসাবি’ নামে প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছিল। ওই প্ল্যাটফর্ম ১৯৮৮ সালে পার্বত্য অঞ্চলে প্রথম বৈসাবি শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। হেমল দেওয়ানের সম্পাদনায় ‘বৈসাবি’ নামে ম্যাগাজিনও প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের বৈসাবি উদ্‌যাপন পরিষদে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা অধিকাংশই এখন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে রয়েছেন। কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। তবে তাঁদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বলেছেন, সামরিক শাসনের সেই সময়ে সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সৃজনশীল প্রতিবাদ হিসেবে বৈসাবি নাম দিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়েছিল। এ জন্য বেশ কয়েকজনকে কারাভোগ করতও হয়েছে।

বৈসাবির শুরুর দিন সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে নদীতে ফুল ভাসান তঞ্চগ্যা নারীরা। আজ সকালে বান্দরবানের শঙ্খ নদের পাড়ে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার হাত ধরে বোনের উৎসবে ‘স্বপ্ন বুনতে’ এসেছিল অহনা

চোখেমুখে উচ্ছ্বাস আর প্রাণবন্ত ছোটাছুটি। কৃতী শিক্ষার্থীদের উৎসবে ছোট্ট অহনার পদচারণ চোখে পড়ছিল বারবার। কখনো নিজের মতো, কখনো বাবার হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে। মাঝেমধ্যে তার ছবি তুলে দিচ্ছিলেন বাবা মো. আনোয়ার হোসেন। বাবার হাত ধরে অহনা এসেছিল কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে।

‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, একসাথে’ স্লোগানে শনিবার খুলনা জিলা স্কুলে বসেছিল ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব-২০২৫’। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী উৎসবে অংশ নেন অহনার বড় বোন সানজিদা আফরোজ অর্পা। চলতি বছর খুলনার মজিদ মেমোরিয়ালস সিটি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। উৎসবে বাবার হাত ধরে আসে তাঁর ছোট বোন সাইমা আফরোজ অহনা।

অহনা এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে খুলনার ফাতেমা হাইস্কুলে। তার বাবা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ও সকালে ঘুমাচ্ছিল। বড় মেয়েটা এখানে আসবে। এখানে এত বড় আয়োজন, বড় বড় মানুষ আসেন। ভালো ফল করলে যে তার জন্য উৎসব হয়, এটা ওকে দেখাতে নিয়ে এসেছি। ছোট হলেও সে বেশ আনন্দ পাচ্ছে। ওর স্বপ্নটা বড় হচ্ছে। নিশ্চয়ই এখান থেকে সামনের দিনে ভালো কিছু করার আগ্রহটা বাড়বে। নিজেকে গড়তে ও স্বপ্ন বুনতে সাহসী হতে শিখবে।’

অহনার বোন সানজিদা আফরোজ বলেন, ‘এবার রেজাল্ট নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলাম। এর মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়ে খুব উচ্ছ্বসিত হই। তবে সামনে ভর্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন চিন্তিত। তাই প্রস্তুতিটাও সেভাবেই নিচ্ছি। এর মধ্যে এ আয়োজন সবার জন্য একটা ব্রেক। পড়াশোনার ব্যস্ততায় বন্ধুদের সবার সঙ্গে দেখা বা কথা হচ্ছিল না। একটা ভালো গেট টুগেদারের সুযোগ পেয়েছি। বেশ ভালো লাগছে। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ এমন আয়োজনের জন্য।’

কৃতী শিক্ষার্থীদের এ উৎসবে পুরো পরিবার নিয়ে এসেছিলেন অনেকেই। খুলনা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনভর মেতে ছিল খুলনা জিলা স্কুল প্রাঙ্গণ।

সকাল সাড়ে আটটায় মেয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান রেবেকা খাতুন। তাঁদের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার মদনপুর গ্রামে। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য যশোরে থেকে কোচিং করছেন ফারিয়া আক্তার। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে সহপাঠীদের সঙ্গে ছবি তুলছিলেন ফারিয়া। তাঁর মা রেবেকা খাতুন বলেন, ‘ভোর সাড়ে পাঁচটায় যশোর থেকে বাসে উঠেছি। এইচএসসিতে ভালো ফল করেছে, এখন ওর পছন্দের বিষয় নিয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে কষ্ট সার্থক হবে।’

উৎসব নিয়ে রেবেকা খাতুন বলেন, ‘ওকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে এখানে নিয়ে এসেছি। এইচএসসির আগে থেকেই তো পড়াশোনার চাপে আছে। মাঝখানে একটু আনন্দের সুযোগ পেল। আর এখানে অনেক গুণী মানুষ এসেছেন, কথা বললেন। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা পাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব
  • সিনেমা মুক্তির আগেই অন্তরঙ্গ দৃশ্য ফাঁস
  • গান-গল্প-আড্ডায় কৃতী শিক্ষার্থীদের সাফল্য উদ্‌যাপন
  • আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল উৎসব এবার রাজশাহীতে
  • ওয়েস্টিনে ‘টেস্ট অব অ্যারাবিয়া’ উৎসব শুরু
  • শেরপুরে হাজং জনগোষ্ঠীর ‘নয়া খাওয়া’ নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন
  • বাবার হাত ধরে বোনের উৎসবে ‘স্বপ্ন বুনতে’ এসেছিল অহনা
  • খুলনায় প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব