পিএফআই সিকিউরিটিজ পর্ষদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, দুদকে অভিযোগ
Published: 3rd, May 2025 GMT
বিনিয়োগকারীদের ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্রোকারেজ হাউজ (ট্রেক নম্বর- ৭৯) পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আবেদন করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালক ও কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবগুলো স্থায়ীভাবে অবরুদ্ধ করারসহ সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে যোগসাজোস করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও যাচাই করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
তদন্ত কামিটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মার্জিন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ ইক্যুইটিসহ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেতিবাচক ইক্যুইটি কেন বাড়ছে ও এর জন্য কারা দায়ী, নেতিবাচক ইক্যুইটির পরিমাণ, প্রভিশনস বা মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে রক্ষিত তহবিল, প্রভিশনসের ঘাটতি, মার্জিন অ্যাকাউন্টে অননুমোদিত লেনদেনসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) প্রতিষ্ঠানটির ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঘাটতি পায়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন পুনর্গঠিত বিএসইসি সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
২০২৪ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত পিএফআই সিকিউরিটিজের গ্রাহকের পাওনা হিসাবে ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঘাটতি আছে। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যামাউন্টের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সময় বৃদ্ধির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। ১৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়। তবে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন নবায়ন করেনি বিএসইসি। ফলে, ওই সময় থেকে পিএফআই সিকিউরিটিজের স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন সনদ নবায়ন স্থগিত হয়ে যায়। ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সব পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন অবরুদ্ধ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী পিএফআই সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি।
এদিকে, ২০২০ সালের পর থেকে মশিহর সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, বানকো সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ডন সিকিউরিটিজ, ইনডিকেট সিকিউরিটিজ, সাদ সিকিউরিটিজ ও শাহ মোহাম্মদ সগির থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে। এর পর ২০২২ সালে ২২ মার্চ বিএসইসির জারি করা নির্দেশনায়ে ডিএসই ও সিএসইর সব ব্রোকারেজ হাউজে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তসাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এর পর থেকে অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ টাকা সমন্বয় করে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে পিএফআই সিকিউরিটিজ অন্যতম।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
পিএফআই সিকিউরিটিজের বিষয়ে তদন্ত করে বিএসইসি। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিষয়গুলো সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিএসইসি বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেগুলো হলো—সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে এনফোর্সমেন্ট প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্য বিষয়টি কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ডিভিশনে পাঠানো হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত পিএফআই সিকিউরিটিজের পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিত করতে এবং বিদেশ গমনে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থ আত্মসাৎ (দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ভঙ্গ) বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিএসইসি পিএফআই সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিএসইসির আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দুদকে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাজী ফরিদউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ঢাকা/এনটি/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত দ র ব এসইস র তদন ত ক ব যবস থ অন য য় র জন য গ র হক সমন ব
এছাড়াও পড়ুন:
হোন্ডা ব্র্যান্ডের সব মডেলের মোটরসাইকেল আনবে এটলাস বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিএল) আবারও জাপানের বিশ্বখ্যাত হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আনবে। এখন থেকে এবিএল এককভাবে সরবরাহ সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) হোন্ডা কোম্পানির মোটরসাইকেল এনে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করবে।
এ ব্যাপারে এটলাস বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) মধ্যে গত বুধবার একটি চুক্তি হয়েছে। ঢাকায় বিএসইসির সম্মেলনকক্ষে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান এম এ কামাল বিল্লাহ; অর্থ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, বাণিজ্যিক, উৎপাদন ও প্রকৌশল পরিচালক; সচিব এবং এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিএইচএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সুসুমু মরিসাওয়া, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান, বিক্রয় ও বিপণন মহাব্যবস্থাপক হিরোনরি কিজিমা এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক আহমেদ নাফিস আল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম এ কামাল বিল্লাহ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এবিএল বিশ্ববিখ্যাত জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডার সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছিল। মাঝে স্বল্প বিরতির পরে আবারও হোন্ডাকে এবিএলের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি। এ জন্য আমরা আনন্দিত। এই চুক্তির ফলে দেশের সব সরকারি দপ্তর/সংস্থা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীন সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সরকারি তহবিলে পরিচালিত এনজিওগুলো এবিএলের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল নিতে পারবে। এর ফলে দেশীয় শিল্পের যেমন বিকাশ ঘটবে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।’
বিএইচএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সুসুমু মরিসাওয়া বলেন, হোন্ডা যুক্তিসংগত মূল্যে সর্বোচ্চ মানের পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সমাজে গতিশীলতার আনন্দ ও স্বাধীনতা ছড়িয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ চুক্তির ফলে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।
এবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমান বলেন, এ চুক্তির ফলে হোন্ডা ব্র্যান্ডের সব মডেলের মোটরসাইকেল ডিপিএম প্রক্রিয়ায় এককভাবে এটলাস বাংলাদেশ সরবরাহ করবে। সব সরকারি দপ্তর ও সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ হোন্ডা ব্রান্ডের মোটরসাইকেল সরবরাহ করা হবে। এতে এবিএল ও বিএইচএল উভয় প্রতিষ্ঠানই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবে।