বাংলাদেশকে বদ্বীপের মতোই রাখতে হবে : শারমীন এস মুরশিদ
Published: 3rd, May 2025 GMT
‘আমাদের দেশের মানুষ আর্সেনিকে মারা যায়। দূষিত পানি ও ভেজাল খাদ্য খেয়ে মারা যায়। আমরা একটা দূষণের মধ্যে বাস করছি। বাংলাদেশকে সুন্দর রাখতে হলে একে বদ্বীপের মতোই রাখতে হবে। সেটা করতে গেলে আমাদের নদীকে রক্ষা করতে হবে।’
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে অলাভজনক সংস্থা ওয়াটার্স কিপার্স আয়োজিত ‘পিএফএএস পলিউশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইন বাংলাদেশ’ নামের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
পিএফএস (পার-ও পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল) হলো মানুষ ও পরিবেশের জন্য বিষাক্ত একটি রাসায়নিক। মানুষের দেহে ও পরিবেশে এটার ভয়াবহতার কারণে এটাকে ‘ফরএভার পলিউশন’ বা চিরস্থায়ী দূষণও বলা হয়। বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও চামড়াশিল্প থেকে এ দূষণ নদী ও পরিবেশে ছড়াচ্ছে। পোশাকশিল্পে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরিতে পিএফএস ব্যবহার করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘পৃথিবীর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর সফলতা পরিবেশ ধ্বংসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যেমন আমরা ভূপৃষ্ঠের পানি রক্ষা করতে পারিনি। এখনো করছি না। শিল্পায়নের কারণে ভূপৃষ্ঠের পানি আমরা নষ্ট করে ফেলেছি।’
বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশ হিসেবে দেখতে চাইলে নদীগুলোকে রক্ষার বিকল্প নেই বলে জানান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
পোশাকশিল্পের খাতকে বাংলাদেশের ‘ব্লু আইড বয়’ মন্তব্য করে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘গার্মেন্টসকে সুনীতির মধ্যে আনতে গেলে মালিকেরা উৎপাদন খরচের কথা বলবেন। যারা শ্রমিকদের পাঁচ টাকা বাড়তি দেয় না, তারা আমাদের নদী রক্ষা করবে বলে মনে হয় না।’
নদী রক্ষা কমিশনে কাজ করার স্মৃতি স্মরণ করে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের সময়ে নদী রক্ষা নিয়ে কিছু মৌলিক গবেষণাভিত্তিক ভালো কাজ করেছিলাম। প্রতিটি জেলার নদীর কোনটার কী অবস্থা সেটি তুলে ধরেছিলাম। কারা দখলদার, কারা দূষণকারী, সেগুলো উল্লেখ করেছিলাম। সে বই এখন শেলফের মধ্যে পড়ে থাকে। কাজে লাগানো হয় না।’
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ দরিদ্র নয়; কিন্তু অব্যবস্থাপনার দেশ। এটি এমন একটি দেশ, যেখানে রাষ্ট্রীয় ভান্ডার শূন্য করে ফেললেও তাকে দুর্নীতি বলা যায় না। অথচ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, একটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে রাজনীতি ও গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নিতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারমুখী হওয়ার পরামর্শ দেন উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যদি তারা ভাবে, যেভাবে তারা চলে এসেছে, সেভাবে চলবে। প্লিজ, ডোন্ট মেক মিসটেক। ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গু, ১ হাজার ৫০০ ছেলেমেয়ে মারা গেছে। এটাকে মুছে দেওয়া যাবে না।’
উপদেষ্টা শারমীন পিএফএসের দূষণ নিয়ে সমন্বিত নীতি প্রণয়ন করার বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিকে একটি চিকিৎসা–সংক্রান্ত বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। দূষণের উৎস, বর্জ্যের উৎস কোথায়, সেটি অজানা কিছু নয়। সেসব জায়গায় সরকারের ম্যাকানিজম নিশ্চয়ই আছে। তবে সেটা যে কার্যকর না, তা বোধগম্য। আমাদের বড় আকারের পরিকল্পনা দরকার। কোথায় শিল্প হবে, কোথায় কৃষি হবে, কোথায় জনবসতি হবে সেটা ঠিক করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ‘ডেলিগেশন অব ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন টু বাংলাদেশ’-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লুম বলেন, পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নতির মধ্যে বাংলাদেশ ভারসাম্য রাখতে পারেনি। শিল্পের উন্নয়ন পিএফএসের দূষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি বৈশ্বিক একটি সমস্যা, যার জন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ দরকার।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়াটার্স কিপার্সের বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন ত আম দ র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশকে বদ্বীপের মতোই রাখতে হবে : শারমীন এস মুরশিদ
‘আমাদের দেশের মানুষ আর্সেনিকে মারা যায়। দূষিত পানি ও ভেজাল খাদ্য খেয়ে মারা যায়। আমরা একটা দূষণের মধ্যে বাস করছি। বাংলাদেশকে সুন্দর রাখতে হলে একে বদ্বীপের মতোই রাখতে হবে। সেটা করতে গেলে আমাদের নদীকে রক্ষা করতে হবে।’
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে অলাভজনক সংস্থা ওয়াটার্স কিপার্স আয়োজিত ‘পিএফএএস পলিউশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইন বাংলাদেশ’ নামের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
পিএফএস (পার-ও পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল) হলো মানুষ ও পরিবেশের জন্য বিষাক্ত একটি রাসায়নিক। মানুষের দেহে ও পরিবেশে এটার ভয়াবহতার কারণে এটাকে ‘ফরএভার পলিউশন’ বা চিরস্থায়ী দূষণও বলা হয়। বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও চামড়াশিল্প থেকে এ দূষণ নদী ও পরিবেশে ছড়াচ্ছে। পোশাকশিল্পে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরিতে পিএফএস ব্যবহার করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘পৃথিবীর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর সফলতা পরিবেশ ধ্বংসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যেমন আমরা ভূপৃষ্ঠের পানি রক্ষা করতে পারিনি। এখনো করছি না। শিল্পায়নের কারণে ভূপৃষ্ঠের পানি আমরা নষ্ট করে ফেলেছি।’
বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশ হিসেবে দেখতে চাইলে নদীগুলোকে রক্ষার বিকল্প নেই বলে জানান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
পোশাকশিল্পের খাতকে বাংলাদেশের ‘ব্লু আইড বয়’ মন্তব্য করে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘গার্মেন্টসকে সুনীতির মধ্যে আনতে গেলে মালিকেরা উৎপাদন খরচের কথা বলবেন। যারা শ্রমিকদের পাঁচ টাকা বাড়তি দেয় না, তারা আমাদের নদী রক্ষা করবে বলে মনে হয় না।’
নদী রক্ষা কমিশনে কাজ করার স্মৃতি স্মরণ করে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের সময়ে নদী রক্ষা নিয়ে কিছু মৌলিক গবেষণাভিত্তিক ভালো কাজ করেছিলাম। প্রতিটি জেলার নদীর কোনটার কী অবস্থা সেটি তুলে ধরেছিলাম। কারা দখলদার, কারা দূষণকারী, সেগুলো উল্লেখ করেছিলাম। সে বই এখন শেলফের মধ্যে পড়ে থাকে। কাজে লাগানো হয় না।’
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ দরিদ্র নয়; কিন্তু অব্যবস্থাপনার দেশ। এটি এমন একটি দেশ, যেখানে রাষ্ট্রীয় ভান্ডার শূন্য করে ফেললেও তাকে দুর্নীতি বলা যায় না। অথচ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, একটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে রাজনীতি ও গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নিতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারমুখী হওয়ার পরামর্শ দেন উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যদি তারা ভাবে, যেভাবে তারা চলে এসেছে, সেভাবে চলবে। প্লিজ, ডোন্ট মেক মিসটেক। ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গু, ১ হাজার ৫০০ ছেলেমেয়ে মারা গেছে। এটাকে মুছে দেওয়া যাবে না।’
উপদেষ্টা শারমীন পিএফএসের দূষণ নিয়ে সমন্বিত নীতি প্রণয়ন করার বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিকে একটি চিকিৎসা–সংক্রান্ত বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। দূষণের উৎস, বর্জ্যের উৎস কোথায়, সেটি অজানা কিছু নয়। সেসব জায়গায় সরকারের ম্যাকানিজম নিশ্চয়ই আছে। তবে সেটা যে কার্যকর না, তা বোধগম্য। আমাদের বড় আকারের পরিকল্পনা দরকার। কোথায় শিল্প হবে, কোথায় কৃষি হবে, কোথায় জনবসতি হবে সেটা ঠিক করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ‘ডেলিগেশন অব ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন টু বাংলাদেশ’-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লুম বলেন, পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নতির মধ্যে বাংলাদেশ ভারসাম্য রাখতে পারেনি। শিল্পের উন্নয়ন পিএফএসের দূষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি বৈশ্বিক একটি সমস্যা, যার জন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ দরকার।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়াটার্স কিপার্সের বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।