নির্মাণের কয়েক বছর পরই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বারেরারচরের গুচ্ছগ্রামটি। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ২৮ বছর, অথচ একবারের জন্যও হয়নি ঘরগুলোর সংস্কার। জরাজীর্ণ এসব ঘরে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে হতদরিদ্র ১০টি পরিবার। চলমান কালবৈশাখী মৌসুমে আকাশে মেঘ দেখলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাসিন্দাদের মাঝে। ঝোড়ো হাওয়ায় ঘর ভেঙে প্রাণহানির শঙ্কা তাড়া করে। শীত মৌসুমেও হিমেল হাওয়া আর শিশির ঝরে পড়ার কষ্ট তাদের ঘরে।
 গুচ্ছগ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ছাউনিগুলো মরিচা পড়ে অনেক জায়গায় বড় বড় ছিদ্র হয়ে গেছে। কাঠের দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে, বেড়ার টিন খুলে গেছে। সিমেন্টের খুঁটিগুলো থেকে আস্তর খসে পড়েছে বহু আগেই। ১০ কামরার বিশাল একটি ঘর দাঁড়িয়ে রয়েছে নড়বড়ে খুঁটিতে ভঙ্গুর অবস্থায়, যা যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে চাল ও বেড়া। বৃষ্টির পানি পড়ে মেঝে ও বারান্দা থেকে মাটি সরে গিয়ে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দারা বলছেন, এসব ঘরে এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই থাকতে হয়। কারণ তাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
 গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা শিউলি আক্তার, গোলাম মোস্তফা, নূরজাহান বেগম ও মমতাজ বেগম জানান, প্রতি বছর ঝড়-বাদলের মৌসুমে আতঙ্কে দিন কাটে। ঘর ভেঙে কখন মাথায় পড়ে এই ভয়ে থাকেন তারা। ভাঙা চাল গড়িয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে ঘরের সব কিছু ভিজে যায়। শীত, বর্ষা সব মৌসুমই তাদের কষ্ট। তাদের ভাষ্য, পানি খাওয়ার নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছিল। নিজেদের খরচে মেরামত করে ব্যবহার করছেন। 
 গুচ্ছগ্রামের একমাত্র পুকুরটি ভরাট হয়ে নোংরা পানির আধারে পরিণত হয়েছে। ফলে মশা আর নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। এখানে নেই পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা।
 বসবাসকারীরা সবাই প্রায় হতদরিদ্র। অনেকে ভিক্ষা করেন, অনেকে দিনমজুর বা রিকশা-ভ্যান চালক। নিজেদের অর্থে ঘর মেরামতের মতো সামর্থ্য নেই। কেউ কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সামান্য মেরামত করলেও, তা টেকেনি বেশি দিন। সংস্কার না হওয়ায় ঘরগুলো এখন বসবাসের অযোগ্য।
 দেবিদ্বারের ইউএনও আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘বারেরারচর গুচ্ছগ্রামটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। অতিদ্রুত পরিদর্শনে যাব। ঘরগুলো সংস্কারের পাশাপাশি নিরাপদ পানির জন্য নতুন নলকূপ 
 স্থাপন এবং পুকুর খননের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘর ত র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’