চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে সময়মতো চিকিৎসক না আসা, রোগনির্ণয়ে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, দালালদের দৌরাত্ম্য রোধসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। রোববার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে তাঁরা একটি স্মারকলিপি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সাকির আহম্মেদ। এতে জেলার আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম, সদস্যসচিব সাব্বির আহমেদ, মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাসসহ অন্য নেতা-কর্মীরা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বেশির ভাগ চিকিৎসক নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে আসেন না। আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই হাসপাতাল থেকে চলে যান। হাসপাতালে আসা রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার জন্য তাঁদের বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষার সময় নির্ধারিত না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। এ জন্য রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের নিয়মিত রাউন্ড না দেওয়া, দালালদের উৎপাত, শিশু ওয়ার্ডে দক্ষ নার্স না থাকা, প্রসূতি ওয়ার্ডে বকশিশ গ্রহণের অভিযোগ তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর দীর্ঘ সময় পার হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চিকিৎসা খাতে কোনো সংস্কার হয়নি। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের সবাইকে চাঁদাবাজ বলে হুমকি দেন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো.

মাসুদ পারভেজ বলেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসকদের সময়মতো উপস্থিতি ও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চেম্বারে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন বলেন, হাসপাতালের কোনো তথ্য চেয়ে না পেলে তাঁরা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা (বৈষম্যবিরোধী নেতারা) তা না করে দল বেঁধে এসে জোর করে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করায় তিনি প্রতিবাদ জানান। তখনকার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে বোঝা যাচ্ছে, কারা কেমন আচরণ করেছেন। এর বাইরে আপাতত তিনি কিছু বলতে চান না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ চ ক ৎসক পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কেন শুধু দেখা আর অপেক্ষায় রাশিয়া

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। সশস্ত্র সংঘাতের কারণে অশান্ত দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার মানুষ। কিন্তু এবার ঝুঁকি আরও বেশি। ইসরায়েল নিজেকে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে ফেলেছে। কোনো প্রক্সি বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে নয়, এবারের সংঘাত পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ইরানের সঙ্গে। 

স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ১৩ জুন শুরু হয়নি। ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দুই দেশ সরাসরি হামলা চালায়। তার আগে কয়েক দশক ধরে তারা মূলত গোয়েন্দা অভিযান, সাইবার আক্রমণ ও আঞ্চলিক প্রক্সিদের সমর্থনের মাধ্যমে ‘ছায়া যুদ্ধ’ পরিচালনা করেছিল। কিন্তু এখন ইসরায়েলের হামলায় সংঘাতটি প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। এটি ইউক্রেনীয় সংঘাতের মতো হবে না। কারণ, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই। তাই স্থল অভিযানের সম্ভাবনা কম। তবে মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র মিত্র হিসেবে পরিচিত ইরানের এ দুঃসময়ে রাশিয়া কেন চুপ আছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। খবর আরটির

পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মস্কো। তেলের দাম বৃদ্ধি রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত হওয়ায় বিশ্বের মনোযোগ ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান থেকে সরে যাবে বলেও তারা ‘নিশ্চিত’। এ ছাড়া তেহরান রাশিয়ার একটি কৌশলগত অংশীদারও এবং ইরানের এই যুদ্ধে থাকা মস্কোর জন্য লাভবান হবে।

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু হওয়ার পরপরই রাশিয়ার কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির এ পদক্ষেপকে ‘উদ্বেগজনক’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। রুশ গণমাধ্যমগুলোকে সেই সময় অতটা উদ্বিগ্ন মনে হয়নি। কেউ কেউ তেহরান-তেল আবিব সংঘাতে মস্কোর কী কী লাভ, সেটাও জানাতে শুরু করেছিলেন– বলছে বিবিসি।

সেই সময় রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোর দৃষ্টিতে যা যা ইতিবাচক মনে হয়েছিল, তার মধ্যে আছে– তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, যা রাশিয়ার কোষাগার স্ফীত করবে। 

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতারও প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব গৃহীত হলে রাশিয়া নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবে। তবুও রাশিয়া কতটা করতে পারবে বা করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। তাই আপাতত, রাশিয়ার সবচেয়ে ভালো পথ হতে পারে ইরানের পাশে থেকে কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ