প্রযুক্তির প্রলোভন, সহজলভ্যতার অভাবে তরুণদের মাঝে মুদ্রিত বইয়ের প্রতি আগ্রহ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অথচ বই একমাত্র মাধ্যম, যেখানে মানুষ খুঁজে পায় জ্ঞান, মুক্তি ও মানবিকতার পথ। এই বিশ্বাস থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল বইপ্রেমী শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছেন ‘গ্রন্থাশ্রম’ নামে ব্যতিক্রমী বই বিপণি।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশী-বিদেশী কোনো বইয়ের দোকান ছিল না। দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে ঢাকার নীলক্ষেতে কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বই কিনতে হতো শিক্ষার্থীদের। এতে তাদের সময় ও অর্থে অপচয়সহ চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো।

এ ভোগান্তি নিরসনে এবং শিক্ষার্থীদের বই পড়া ও কেনা সহজলভ্য করতে ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার বারান্দায় ২০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘গ্রন্থাশ্রম’।

আরো পড়ুন:

জাবি উপ-উপাচার্যের ফেসবুক আইডি হ‍্যাক

জুলাই হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে জাবি ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’

যার নেপথ্যে ছিলেন, বাংলা বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.

মাহফুজ আহমেদ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ সজিব এবং বাংলা বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন।

পরে এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন বাংলা বিভাগের সিফাত আন-নূর শিহাব, রামিসা, অনামিকা আহমদ, দর্শন বিভাগের সাগরময় বিশ্বাস এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাহমুদুল ইসলাম রাঙ্গা নামে শিক্ষার্থীরা।

প্রথমদিকে ক্যাফেটেরিয়ার বারান্দায় গ্রন্থাশ্রমের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বেশকিছু বই ধুলোবালি ও বৃষ্টির কারণে নষ্ট হতে শুরু করে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বইপ্রেমীদের বাড়তে থাকা আগ্রহের কারণে একটি নির্দিষ্ট কক্ষের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন উদ্যোক্তারা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও অনুমতি পাননি তারা। বর্তমান প্রশাসনের সহায়তায় ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার একটি পরিত্যক্ত কক্ষ সংস্কার করে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে ‘গ্রন্থাশ্রম’। বর্তমানে ২ লাখ টাকা সমমূল্যের বই রয়েছে গ্রন্থাশ্রমে।

গ্রন্থাশ্রমের পরিচালক মাহফুজ আহমেদ বলেন, “শুরুর দিকে আমাদের বই বিক্রির চিন্তা ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম বেশকিছু বই নিয়ে আমরা বসবো, সেখান মানুষজন  আসবে, বই পড়বে, বই নিয়ে আলোচনা করবে ইত্যাদি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আমরা বুঝতে পারলাম সংকট, প্রতিকূলতা ছাপিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে আর্থিক চাকা সচল রাখার কোনো বিকল্প নেই।”

তিনি বলেন, “গ্রন্থাশ্রমের বইগুলো যেমন আমাদের পকেটের টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে, তেমনি এখানে বই পড়তে এসে সুন্দর মলাট দেখে অনেকে বই কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছিলেন। তখন থেকে আমরা বই বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।”

বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিদিন চালু থাকে এই বই বিপণি। এখানে রয়েছে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি ও সমকালীন চিন্তাধারার বিশ্লেষণমূলক বইয়ের সমৃদ্ধ সংগ্রহ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে হুমায়ূন আহমেদ ও শহিদুল জহিরের রচনাও রয়েছে এখানে। বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রচিত বইগুলো স্থান পেয়েছে ‘জাহাঙ্গীরনগর কর্নার’ নামক একটি বিশেষ শেলফে।

মাহফুজ আহমেদ বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন তাদের চাহিদা অনুসারে সহজেই সুলভমূল্যে ভালো বইয়ের নাগাল পায় এবং পড়ার অভ্যাসে ফিরে আসে। আমরা একই বইয়ের বিভিন্ন মানের ও দামের কালেকশন রেখেছি যাতে চাহিদা ও বাজেট অনুসারে প্রিয় বইটি কিনতে এসে কাউকে ফিরে যেতে না হয়।” 

শুধু বই বিক্রি নয়, বই নিয়ে আলোচনা, পাঠচক্র এবং সাহিত্যচর্চার একটি চর্চাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে গ্রন্থাশ্রম। গ্রন্থাশ্রমের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোন বই কোন তাকে রয়েছে, তার রিয়েলটাইম তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বই অর্ডার করার সুযোগ রতেছে এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ফ্রি ডেলিভারি সুবিধা রয়েছে। যে বইটি তাদের আউটলেটে নেই, সেই বইটিও অর্ডার করার সুযোগ রয়েছে। ৩-৫ কর্মদিবসের মধ্যে কোনো ডেলিভারি চার্জ ছাড়াই সেই বইটি জাবি শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

গ্রন্থাশ্রম কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বই বিক্রির লভ্যাংশ থেকে গ্রন্থাশ্রমে কর্মরত শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসের ব্যয় নির্বাহের জন্য সম্মানী প্রদান করা হয়। আয় কম-বেশি যাই হোক একটি পরিবারের মত তারা একে অপরের পাশে থাকেন বলে জানান গ্রন্থাশ্রমের কার্যনির্বাহী পরিচালক সিফাত আন-নূর শিহাব।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে মাহফুজ বলেন, “ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার যাদের হাতে পড়বে, তারা যেন অন্তঃসারশূন্য হয়ে বেড়ে না ওঠে। সেজন্য পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সাহিত্যের বিশাল জগতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে আমরা গ্রন্থাশ্রমকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।”

তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাশ্রমের আউটলেট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। মানুষ যেন কফি খেতে এসে যেকোনো বই পড়তে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে চাই।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বই ব ক র বই ন য় বইয় র আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্রসহ সুন্দরবনের দুই ‘জলদস্যু’ আটক

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।

এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।

আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম-পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।

আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।

দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।

এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নতুন কমিটি ঘোষণা
  • ১৪ বছরে বিক্রয় ডটকম
  • জাবিতে বঙ্গবন্ধু হলের নাম পুনর্বহালের দাবি সাংস্কৃতিক জোটের
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি
  • ধাওয়া করে সুন্দরবনের ‘জলদস্যু’ ধরল জনতা, বন্দুক ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার
  • শ্যামনগরে ২ বনদস্যু আটক, বন্দুক জব্দ
  • অস্ত্রসহ সুন্দরবনের দুই ‘জলদস্যু’ আটক
  • অস্ত্রসহ সুন্দরবনের দুই জলদস্যু আটক