ফেনীতে সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা লোপাটের অভিযোগ
Published: 6th, May 2025 GMT
ফেনীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি শাখা থেকে এফডিআর ও বিভিন্ন হিসাবে সঞ্চিত অর্থসহ গ্রাহকদের টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরিয়ে নেওয়া টাকার পরিমাণ কয়েক কোটি হতে পারে বলে গ্রাহকেরা দাবি করলেও নিশ্চিত করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। জেলার দাগনভূঞা উপজেলার সাউথইস্ট ব্যাংক সিলোনিয়া বাজার শাখার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গ্রহকেরা টাকা সরানোর বিষয়টি জানতে পারলে ওই কর্মকর্তা গা ঢাকা দেন। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পশ্চিম ফতেহনগর এলাকার সালমান হাজী বাড়ির আবদুল হকের ছেলে। জিয়াউল হক সাউথইস্ট ব্যাংকের সিলোনিয়া বাজার শাখায় কর্মরত রয়েছেন।
গ্রাহক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাউথইস্ট ব্যাংক সিলোনিয়া বাজার শাখার বিভিন্ন গ্রাহকের হিবাস থেকে টাকা উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে আমানতের অর্থের বিষয়ে খোঁজ নিতে ব্যাংকে ভিড় করেন গ্রাহকেরা। গত কয়েক কর্মদিবসে গ্রাহকেরা এসে ব্যাংকের ওই শাখায় নিজেদের টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এরপর ঘটনার তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকের গ্রাহক দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ইমরান হোসেন বলেন, ‘গত ৩০ এপ্রিল আমার হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ সময় ব্যাংকে যোগাযোগ করলে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক ঘটনায় জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি। বিষয়টি জানতে পেরে গত ১ মে ওই ব্যাংক ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামানকে মুঠোফোনে বিস্তারিত জানিয়েছি।’
দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী এ কে আজাদ বলেন, ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্টে থেকে ৩২ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক কোনো একসময়ে তাঁর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এ টাকা সরিয়েছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।
ব্যাংকের আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে ৪ মে ওই শাখা ঘুরে গেছেন সাউথইস্ট ব্যাংকের অডিট বিভাগের কর্মকর্তারা। অডিট কর্মকর্তারা আসার পরে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউল হক গা ঢাকা দেন বলে জানান আমানতকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাও তথ্য জানাতে পারেননি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংক সিলোনিয়া বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স উথইস ট ব য র কর মকর ত কর মকর ত র ক কর মকর ত ন গ র হক গ র হক র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে
সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুদ্দিন মো. ছাদেক হোসেনকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই ছুটি গতকাল রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে, চলবে আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত।
জানা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কিছু অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৪ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের এমডি বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) আবিদুর রহিম চৌধুরী।
এর আগে দেশের সাতটি ব্যাংকের এমডিকে ছুটিতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে কোনো ব্যাংকের এমডিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে, আবার কোনো ব্যাংকের এমডিকে পরিচালনা পর্ষদ নিজে থেকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। মূলত অনিয়মের সঠিক তদন্ত করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।
জানা যায়, বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকে কেনাকাটা, সংস্কার ও প্রচারের নামে বড় অঙ্কের অর্থ তছরুপ হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নিয়োগ, তহবিল ব্যবহার ও ঋণের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের অনিয়ম হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে।
এসব অনিয়মে অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিন কর্মকর্তা হলেন ওয়ারেস উল মতিন, মোহাম্মদ তানভীর রহমান ও এ কে এম নাজমুল হায়দার। এর মধ্যে ওয়ারেস উল মতিন ব্যাংকটির সাতটি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। মোহাম্মদ তানভীর রহমান ছিলেন ব্যাংকটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বিভাগের প্রধান। এ কে এম নাজমুল হায়দার ছিলেন কোম্পানি সচিব।
নিরীক্ষায় জানা গেছে, উল্লিখিত কর্মকর্তারা সাউথইস্ট ব্যাংকে অনিয়মের চক্র গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা মূলত তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের হাতিয়ার ছিলেন।
ব্যাংকটিতে যখন এসব অনিয়ম হয়েছে, তখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন আলমগীর কবির। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে বড় অঙ্কের জরিমানার পরও তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীকালে চেয়ারম্যান পদ ছাড়লেও পরিচালক পদে বহাল তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বদল আসে। ২০ বছর পর আবারও ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ফেরেন এম এ কাশেম। তিনি ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আগে ২০০৪ সাল থেকে টানা ২০ বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর কবির।
এদিকে ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয় সাউথইস্ট ব্যাংক। তাঁরা হলেন সাবের হোসেন চৌধুরী, মোরশেদ আলম ও মামুনুর রশিদ কিরণ। গত বছরের ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে তাঁরা সবাই সংসদ সদস্য হন। এ ছাড়া আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালক প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদারের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রাখে সাউথইস্ট ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে ভয়াবহ এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখানোর সঙ্গে জড়িত সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণখেলাপির তথ্য লুকানোর পাশাপাশি প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ঋণে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে জানা গেছে।