পাকিস্তানে ভারতের হামলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে
Published: 7th, May 2025 GMT
দুই সপ্তাহ আগে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক স্থানে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত।
বিবিসি লিখেছে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে বলছে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে এই সামরিক অভিযান ২২ এপ্রিলের হামলার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতির অংশ।
তবে পাকিস্তান তাদের সঙ্গে ওই জঙ্গি হামলার সম্পৃক্ততা প্রত্যাখ্যান করে অপারেশন সিঁদুরকে ‘উস্কানিমূলক হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আরো পড়ুন:
ভারতের হামলা: ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা
ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও ১টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের
ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত হামলা’ বলে তুলে ধরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, এই ‘জঘন্য আগ্রাসন শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারবে না।”
ভারত কোথায় হামলা চালিয়েছে?
নয়াদিল্লি জানিয়েছে, বুধবার (৭ মে) গভীর রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
ভারতের দাবি, যেসব স্থানে ও স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে সেগুলো ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’। এসব স্থান থেকে ভারতে হামলার পরিকল্পনা করা হতো এবং সেই অনুযায়ী হামলা পরিচালনা করা হতো।
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়নি এবং এই হামলা ‘সংযত, সুনির্দিষ্ট ও উত্তেজনাবিহীন’ ছিল।
পাকিস্তান বলছে, পাঁচটি স্থানে হামলা হয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে মুজাফফরাবাদ, কোটলি (পাক-অধিকৃত কাশ্মীর), ভাওয়ালপুর (পাকিস্তানের পাঞ্জাব)। অন্য দুটি স্থানের নাম জানায়নি তারা।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের দাবি, এই হামলা বেসামরিক এলাকায় হয়েছে। ভারত যে দাবি করছে, সেটি ভুয়া।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ও আইএসপিআরের মহাপরিচালক আহমেদ শরিফ বিবিসিকে বলেছেন, হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে।
ভারত কেন হামলা চালাল?
এই হামলার পেছনে কারণ ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, যেখানে ২৬ জন (২৫ ভারতীয় ও একজন নেপালি) নিহত হন। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান, হামলাকারীরা হিন্দু পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এই হামলা ছিল গত দুই দশকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, তারা অপরাধীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাড়া করবে’ এবং এমন ‘শাস্তি দেবে যা কল্পনারও বাইরে”।
যদিও ভারত এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেনি। ভারতের পুলিশের দাবি, হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি। দিল্লি অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান জঙ্গিদের সমর্থন করছে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে।
এই দুই সপ্তাহে দুই দেশ কূটনৈতিক বহিষ্কার, ভিসা স্থগিত ও সীমান্ত বন্ধসহ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।
কাশ্মীর কেন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু?
কাশ্মীর অঞ্চলকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই সম্পূর্ণ তাদের বলে দাবি করে, তবে উভয়েরই আংশিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশভাগের সময় থেকেই এ নিয়ে দুই দেশ দুটি যুদ্ধ করেছে।
সম্প্রতি জঙ্গি হামলাগুলো অঞ্চলটিকে বারবার দ্বন্দ্বের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে।
২০১৯ সালে ভারত আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল করে কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন তুলে দেয়। তার পর কিছু সময় বিক্ষোভ ও উত্তেজনা থাকলেও অঞ্চলটিতে সন্ত্রাসবাদ কমে আসে এবং পর্যটন বাড়ে।
২০১৬ সালে উরি হামলায় ১৯ ভারতীয় সৈন্য নিহত হলে ভারত ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালায়।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হলে ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালায়, যা ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের প্রথম সামরিক অভিযান।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার আগে ভারতে গেল ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এবার ১২ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এ অনুমতির মেয়াদ রয়েছে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগে গত সোমবার পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বছর ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ ২১টি প্রতিষ্ঠান কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। ইলিশ রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এ দুটি স্থলবন্দর দিয়ে শেষ মুহূর্তে আর ইলিশ রপ্তানি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানিএনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি প্রথম শুরু হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২০২০–২১ অর্থবছরে। ওই সময় ১৭ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।
এ বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। তবে সিংহভাগই রপ্তানি করতে পারেনি।
জানতে চাইলে প্যাসিফিক সি ফুডসের পরিচালক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।’
আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানি মূল্য কম। ফলে ভারতের বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে দেশটি ইলিশ আমদানি করে ভারত। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পরিমাণে কম দামে ইলিশ আমদানি করে মিয়ানমার থেকে।
যেমন ২৪–২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল–মার্চ) দেশটি মিয়ানমার থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি ইলিশ আমদানি করেছে। গড়ে ভারতের আমদানি মূল্য ছিল ৬ ডলার ২৩ সেন্ট। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৫ লাখ ৪২ হাজার কেজি ইলিশ। গড় আমদানি মূল্য ছিল ১০ ডলার ৯৩ সেন্ট।
এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যেই ইলিশ গেলবাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার সাড়ে ১২ ডলার বা ১ হাজার ৫৩২ টাকা দরে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর মানে হলো, এর চেয়ে কমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। তবে চাইলেই বেশি দামে রপ্তানি করা যাবে।
এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯–২০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইলিশ রপ্তানির নজির খুব কম।
এ বছর রপ্তানি হওয়া ৪৫টি চালানের মধ্যে ৪৪টি চালানের ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য অর্থাৎ সাড়ে ১২ ডলারে। শুধু একটি চালান ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানি হয়েছে। এই চালান রপ্তানি করেছে ভোলার চরফ্যাশনের রাফিদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ৪২০ কেজি ইলিশ কেজিপ্রতি ১৩ ডলার ৬০ সেন্টে রপ্তানি করেছে।
স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।আবদুল মান্নান, পরিচালক, প্যাসিফিক সি ফুডসপ্রতিবারই অনুমতির চেয়ে কম রপ্তানিবাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং এনবিআরের রপ্তানির হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিবারই যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে রপ্তানি হয় খুব কম। যেমন গত বছর ২৪ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার কেজি ইলিশ। অর্থাৎ অনুমতির ২৩ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এবারও এখন পর্যন্ত অনুমতির ১১ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।