দুই সপ্তাহ আগে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক স্থানে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত।

বিবিসি লিখেছে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে বলছে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে এই সামরিক অভিযান ২২ এপ্রিলের হামলার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতির অংশ।

তবে পাকিস্তান তাদের সঙ্গে ওই জঙ্গি হামলার সম্পৃক্ততা প্রত্যাখ্যান করে অপারেশন সিঁদুরকে ‘উস্কানিমূলক হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

আরো পড়ুন:

ভারতের হামলা: ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা

ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও ১টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত হামলা’ বলে তুলে ধরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, এই ‘জঘন্য আগ্রাসন শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারবে না।”

ভারত কোথায় হামলা চালিয়েছে?
নয়াদিল্লি জানিয়েছে, বুধবার (৭ মে) গভীর রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

ভারতের দাবি, যেসব স্থানে ও স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে সেগুলো ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’। এসব স্থান থেকে ভারতে হামলার পরিকল্পনা করা হতো এবং সেই অনুযায়ী হামলা পরিচালনা করা হতো।

ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়নি এবং এই হামলা ‘সংযত, সুনির্দিষ্ট ও উত্তেজনাবিহীন’ ছিল।

পাকিস্তান বলছে, পাঁচটি স্থানে হামলা হয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে মুজাফফরাবাদ, কোটলি (পাক-অধিকৃত কাশ্মীর), ভাওয়ালপুর (পাকিস্তানের পাঞ্জাব)। অন্য দুটি স্থানের নাম জানায়নি তারা। 

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের দাবি, এই হামলা বেসামরিক এলাকায় হয়েছে। ভারত যে দাবি করছে, সেটি ভুয়া।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ও আইএসপিআরের মহাপরিচালক আহমেদ শরিফ বিবিসিকে বলেছেন, হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে।

ভারত কেন হামলা চালাল?
এই হামলার পেছনে কারণ ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, যেখানে ২৬ জন (২৫ ভারতীয় ও একজন নেপালি) নিহত হন। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান, হামলাকারীরা হিন্দু পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এই হামলা ছিল গত দুই দশকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, তারা অপরাধীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাড়া করবে’ এবং এমন ‘শাস্তি দেবে যা কল্পনারও বাইরে”।

যদিও ভারত এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেনি। ভারতের পুলিশের দাবি, হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি। দিল্লি অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান জঙ্গিদের সমর্থন করছে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে।

এই দুই সপ্তাহে দুই দেশ কূটনৈতিক বহিষ্কার, ভিসা স্থগিত ও সীমান্ত বন্ধসহ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।

কাশ্মীর কেন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু?
কাশ্মীর অঞ্চলকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই সম্পূর্ণ তাদের বলে দাবি করে, তবে উভয়েরই আংশিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশভাগের সময় থেকেই এ নিয়ে দুই দেশ দুটি যুদ্ধ করেছে।

সম্প্রতি জঙ্গি হামলাগুলো অঞ্চলটিকে বারবার দ্বন্দ্বের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে।

২০১৯ সালে ভারত আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল করে কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন তুলে দেয়। তার পর কিছু সময় বিক্ষোভ ও উত্তেজনা থাকলেও অঞ্চলটিতে সন্ত্রাসবাদ কমে আসে এবং পর্যটন বাড়ে।

২০১৬ সালে উরি হামলায় ১৯ ভারতীয় সৈন্য নিহত হলে ভারত ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালায়।

২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হলে ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালায়, যা ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের প্রথম সামরিক অভিযান।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের অত্যাধুনিক সমরসজ্জা সংঘাতের শঙ্কা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০১৯ সালে মুখোমুখি সংঘাতের পর পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) সীমিত সংঘাত হয়েছে। তবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতি যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। নয়াদিল্লির দাবি, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। এর পর থেকে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। উত্তেজনা বাড়ছে।

সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কোনো পক্ষই দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববে না। তবে সীমিত সংঘাত অতর্কিতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার সঙ্গে জড়িতদের ‘কল্পনাতীত’ শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মোদি এরই মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীকে ‘অভিযান পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যেন তারা পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে পারে।

পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে বলে তাঁদের হাতে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে। দেশটি নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এলাকায় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। গত শনিবারের পর গতকাল সোমবারও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরসহ দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ভারত হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে শক্ত জবাব দেওয়া হবে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়ে কথিত জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করে। পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। দুই দিন ধরে টান টান উত্তেজনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

কাশ্মীরে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনার বর্ষপূর্তিতে ‘অপারেশন সুইফট রিটর্ট’–এর স্মরণে আয়োজিত বিমান প্রদর্শনী দেখছে মানুষ। করাচিতে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত–পাকিস্তান সংঘাত যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র–চীনেরও লড়াই
  • পাক-ভারত হামলা নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষকরা
  • দুদকের অভিযান: দালাল আর টাকা ছাড়া কাজ হয় না পাবনা বিআরটিএতে
  • কোহলিকে ঘষেমেজে নিখুঁত করেছিলেন যিনি
  • ভারত-পাকিস্তানের অত্যাধুনিক সমরসজ্জা সংঘাতের শঙ্কা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে