ইসলামীসহ ১৯ ব্যাংক এখন বড় মূলধন ঘাটতিতে
Published: 7th, May 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। যেসব ব্যাংক বেশি অর্থ লোপাটের শিকার হয়, সেগুলো এখন বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এর মধ্যে একসময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তির ইসলামী ব্যাংকে প্রথমবারের মতো মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বিবেচিত চট্টগ্রামের এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা শরিয়াহ ও প্রচলিত ধারার সব ব্যাংকই এখন বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। সেই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকও বড় ধরনের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আগে থেকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক সমস্যার মধ্যে ছিল। এখন রাষ্ট্রমালিকানাধীন, শরিয়াহভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। তবে বেসরকারি ও বিদেশি কিছু ব্যাংক শক্ত অবস্থানে আছে।
একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আগের সরকারের সময় অনিয়মের মাধ্যমে যেসব ঋণ বের করে নেওয়া হয়, সেগুলো এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। এর বিপরীতে চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে মূলধন হারিয়ে ফেলছে এসব ব্যাংক, যা দেশের পুরো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির জেরেই ব্যাংকগুলোতে এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে। নতুন সরকার এসে ব্যাংক খাতের অনিয়ম থামিয়েছে। কিন্তু কারও বিচার হয়েছে, এমনটা জানা যায়নি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো পুনর্গঠনে জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এসব দ্রুত করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) নেমে এসেছে মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা আন্তর্জাতিক কাঠামো ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী থাকা উচিত ন্যূনতম ১০ শতাংশ। সিআরএআর হচ্ছে, একটি ব্যাংকের মূলধন ও তার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত, যেখানে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী সম্পদের হিসাব নির্ধারণ করা হয়।
তিন মাস আগেও দেশের ব্যাংক খাতে সিআরএআরের হার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের জুনে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ছিল। গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ছিল ঋণাত্মক ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই হার ইসলামি ব্যাংকগুলোয় ঋণাত্মক ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোয় ঋণাত্মক ৪১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ছিল। এর বিপরীতে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৪২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ছিল।
২০২৪ সালের শেষে ছয়টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকসহ মোট ১৯টি ব্যাংক সম্মিলিতভাবে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়ে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর প্রভাবেই মূলধন ঘাটতি বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন করে মূলধন ঘাটতিতে পড়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক।
২০২৪ সালের শেষে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা যায় জনতা ব্যাংকে। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ৬৭ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা বা ৭২ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। ব্যাংকটির সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপিদের মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, এননটেক্স, ক্রিসেন্ট, থার্মেক্স ও গ্লোব জনকণ্ঠ গ্রুপ। তাদের ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। রাষ্ট্র খাতের অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে মূলধন ঘাটতি ছিল এ রকম: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ১৮ হাজার ১৮৮ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৫ হাজার ১৯২ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৪ হাজার ৬৮৬ কোটি, বেসিক ব্যাংক ৩ হাজার ১৫৬ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ২ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ছিল এ রকম: ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫ হাজার ৬৮৯ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৩ হাজার ৯৯১ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১১ হাজার ৭০৮ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক ৯ হাজার ২৯ কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংক ৭ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া, পদ্মা ব্যাংকে ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকা এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে ২৫৪ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল ২০২৪ সালের শেষে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র শ ষ ল ইসল ম ব সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
মেধাক্রম ৩২ হাজার: পোষ্য কোটায় ভর্তি হলেন ববি উপাচার্যের মেয়ে
পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলমমের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪০ এবং ফলাফলে মেধাক্রম ছিল ৩২ হাজার। তবে ওই অনুষদে কোটা ব্যাতিত মেধাতালিকার সর্বশেষ ৫০৩৫ মেধাক্রম পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
আরো পড়ুন:
বিভিন্ন দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের ফের মহাসড়ক অবরোধ
নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটেক ভবন ববি শিক্ষার্থীদের দখলে
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া তিনজন শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়ে যার প্রাপ্ত নম্বর ৪০, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের ছেলে (৩৯.৫০ নম্বর) ও ইলেকট্রিশিয়ান আরিফ হোসেন সুমনের ছেলে (৫৩.৫০ নম্বর)। চলতি বছর পোষ্য কোটাসহ বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হয়েছেন মোট ২১ জন শিক্ষার্থী।
চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য কোটায় ভর্তি হন ১৮ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে প্রতিবন্ধী কোটায় তিনজন, হরিজন ও দলিত কোটায় একজন। ‘বি’ ইউনিটে মুক্তিযোদ্ধা (সন্তান) চারজন, প্রতিবন্ধী দুইজন, হরিজন ও দলিত একজন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একজন। ‘সি’ ইউনিটে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দুইজন, বিকেএসপি একজন, মুক্তিযোদ্ধা একজন, হরিজন ও দলিত একজন, প্রতিবন্ধী একজন।
গত বছর কোটা নিরসনে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রুপ নেয়। পরে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। কিন্তু তারপরেও কোটা পদ্ধতি বহাল রেখে উপাচার্য নিজ মেয়েকে কোটায় ভর্তি করানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা জানান, পোষ্য কোটা হলো সবচেয়ে বড় অযোক্তিক কোটা। একজন উপাচার্যের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হতে না পেরে কোটার সুযোগ নিয়ে ভর্তি হয়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই এই অযোক্তিক কোটা বাতিল করা হোক এবং যোগ্যদের সুযোগ দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে ভর্তি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, “গুচ্ছের নিয়ম অনুযায়ী ৩০ নম্বর পাস মার্ক অতিক্রম করলেই কোটা ব্যবহার করা যায়। উপাচার্যের মেয়ে শর্ত পূরণ করেই কোটার সুবিধা পেয়েছেন। এখানে নিয়মের বাহিরে কোনো বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়নি।”
ঢাকা/আরিফ/মেহেদী