পাকিস্তানে ভারতের হামলা উত্তেজনা বাড়াল
Published: 8th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। গতকাল বুধবার দিনের প্রথম প্রহরে এ হামলা চালানো হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তানও। কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ। ভারতের হামলার জবাব দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান। প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এতে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক। এ ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের হাত ছিল দাবি করে জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে অব্যাহত উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার পর পাকিস্তানের ছয় শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। নয়টি ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে জানায় ভারতের সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ বাঁধ লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এতে নারী–শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৫৭ জন আহত হন। এদিকে হামলার পর থেকে সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ১৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। গোলার আঘাতে ভারতীয় এক সেনাও নিহত হয়েছেন বলে দ্য হিন্দু জানিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ভারতের তিনটি রাফালসহ পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। যদিও নাম না প্রকাশ করার শর্তে ভারতের ঊর্ধ্বতন একটি সামরিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিজ ভূখণ্ডে তিনটি যুদ্ধবিমান ‘বিধ্বস্ত হওয়ার’ কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর এবং নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর কয়েকটি সেনাচৌকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান।
হামলার পরপরই এক বিবৃতিতে ভারতের সেনাবাহিনী বলেছে, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নয়টি সন্ত্রাসী শিবির ধ্বংস করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরিমিত হামলা চালানো হয়েছে। হামলার ধরন উসকানিমূলক নয় বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
তবে হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের হামলার পর গতকাল জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডাকেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শাহবাজ শরিফ বলেন, আগের রাতে ভারতের বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতকে বিমান হামলার পরিণতি ভোগ করতে হবে। তারা ভেবেছিল, আমরা পিছু হটব, কিন্তু তারা ভুলে গেছে এটি বীরদের জাতি।’
২৫ মিনিটে ৯ স্থাপনায় হামলাপেহেলগাম হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাও ছিল। এরই মধ্যে গতকাল দিবসের প্রথম প্রহরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত ছয়টি শহরে হামলা শুরু করে ভারত। যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পাশাপাশি হামলায় ড্রোনও ব্যবহার করা হয়। মধ্যরাতে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে এসব শহরের বাসিন্দাদের।
হামলার বিষয়ে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পেহেলগামের হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্ত পার থেকে আরও সম্ভাব্য হামলা ঠেকানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী কাঠামো ধ্বংস করাই ছিল এ হামলার উদ্দেশ্য। এ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর দুই নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাঁরা দাবি করেন, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে শুরু করে রাত দেড়টা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের ওপাশে ভারতীয় বাহিনী হামলা চালিয়ে মোট নয়টি সন্ত্রাসী শিবির ধ্বংস করেছে।
ব্রিফিংয়ে পাকিস্তান অংশে ধ্বংস করা স্থাপনার ছবিও দেখান কর্মকর্তারা। সোফিয়া ও ব্যোমিকা দাবি করেন, প্রথম লক্ষ্য ছিল ভাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহানাল্লাহ। সেখানে জইশ–ই–মুহাম্মদের জঙ্গিদের প্রশিক্ষণশিবির ছিল। বিলাল মসজিদে ছিল লস্কর–ই–তাইয়েবার প্রশিক্ষণকেন্দ্র। কোটলিতে যেখানে হামলা হয়েছে, তা লস্করের ঘাঁটি। ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে জানিয়ে তাঁরা আরও দাবি করেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ছয় কিলোমিটার ভেতরে শিয়ালকোটেও হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া মেহমুনা জোয়ায় হিজবুলের শিবিরে হামলা করা হয়। লাহোরের কাছে মুরিদকের মারকাজ তৈয়্যেবায়ও ভারতীয় বাহিনী হামলা চালায় বলে কর্মকর্তারা জানান।
তবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর দাবি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ভারত। জিও নিউজের প্রতিবেদনে আক্রান্ত ছয়টি এলাকার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্ব আহমেদপুরে সুবহানাল্লাহ মসজিদে, মুজাফফরাবাদে বিলাল মসজিদে, কোটলিতে আব্বাস মসজিদে ও মুরিদকে উম্মুল কোরা মসজিদে হামলা হয়েছে। শিয়ালকোট ও শাকারগড়েও হামলা হয়। এ ছাড়া হামলায় নীলম–ঝিলাম জলবিদ্যুৎ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গোলাবর্ষণের পর কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে ধোঁয়া। গতকাল ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলার প্রধান শহরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ব স কর লক ষ য ত হয় ছ মসজ দ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
আলু উৎপাদন বাড়তেই কপাল পুড়ল কৃষকের
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। যদিও গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছর খুচরায় আলুর দাম অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। আলুর দামের এমন দরপতনে উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন আলু ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। হিমাগারমালিকেরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
আলু নিয়ে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের এই দুরবস্থার প্রধান কারণ বাড়তি উৎপাদন। গতবার বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা এবার উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। এর ফলে এ বছর চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়। ফলে দাম পড়ে যায়। কৃষি অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবার দাম পড়ে গেছে। এবার দাম না পেয়ে বড় লোকসান হলে কৃষকেরা আগামী বছর আলুর উৎপাদন আবার কমিয়ে দেবেন। এটা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার বড় ব্যর্থতা। কৃষকদের বড় অঙ্কের লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য সহায়তা দিতে বলছেন কৃষি অর্থনীতিবিদেরা।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। তাই দাম পড়ে গেছে। আগের দুই বছর এমনটা হয়নি। তবে পৃথিবীর অনেক দেশে কৃষিপণ্যের দাম কমে গেলে সরকার একটি নির্দিষ্ট দামে পণ্য কিনে নেয়। এভাবে মূল্য সহায়তা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করা যায়। এ ছাড়া আলু সংরক্ষণ খরচের অর্ধেক বহন করতে পারে সরকার। সবচেয়ে বড় কথা আলু প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা ও রপ্তানি না বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই সঠিক চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কারণে এবার আলুতে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। বেসরকারি হিসাবে তা ১৭ টাকা। আর সেই আলু হিমাগার গেটে (পাইকারি) বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। অথচ হিমাগার ভাড়ার সঙ্গে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয় যুক্ত করে প্রতি কেজিতে আলুতে কৃষকের খরচ প্রায় ২৫ টাকা। এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি কেজি আলুতে কৃষকের ন্যূনতম লোকসান ১০ টাকার বেশি।
হিমাগারমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন। এর আগের বছর উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টন। অর্থাৎ গত বছর বাজারে দাম বেশি থাকায় এবার উৎপাদন অনেক বেড়েছে। গত নভেম্বরে খুচরায় আলুর দাম সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় উঠেছিল।
দেশে আলুর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলায়। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কাস্টডোম গ্রামের বাসিন্দা রাসেল রানা এবার সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আলু পেয়েছেন ৬৩০ মণ। লাভের আশায় ৩২০ মণ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। তাতে এখন বড় লোকসানে তিনি।
রাসেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে রাখার ভাড়া ৩৫০ টাকা। সেই সঙ্গে বস্তার দাম ৮৫ টাকা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ ১০০ টাকা যোগ হবে। সব মিলিয়ে এক বস্তা আলু হিমাগারে রাখার পর তার দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকার কিছু বেশি। কিন্তু এখন এক বস্তা আলু জাতভেদে হিমাগার থেকে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এখন যাঁরা আলু বিক্রি করছেন, তাঁদের প্রতি বস্তায় (৬০ কেজি) লোকসান হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
এবার হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) তথ্যমতে, এ বছর দেশের ৩৫৩টি হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টনের বেশি। যেখানে গত বছর সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টন। এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে মাত্র ১১ শতাংশ আলু বের হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে ৪১ শতাংশ আলু বের করেছিলেন কৃষকেরা। দাম না পেয়ে এবার হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না কৃষকেরা। তাই কোল্ডস্টোরেজের (হিমাগার) মালিকেরা হিমাগার গেটে আলুর সর্বনিম্ন দাম ২৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওএমএস কার্যক্রমে ৫৫ লাখ পরিবারে ১০ কেজি করে আলু প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। গত মাসে এসব দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সংগঠনটি। এ সময় সংগঠনটি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষক দাম না পেলে আমরাও ভাড়া পাব না। আট মাস আলু সংরক্ষণ করে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। হিমাগারশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না। আর মাত্র তিন মাস সময় আছে, সরকার উদ্যোগ না নিলে এ সময়ে ২০ লাখ টন আলু হিমাগার থেকে বের করা সম্ভব হবে না। আর দাম না পেয়ে চাষিরা বিমুখ হলে আমদানি করেও আলু পাওয়া যাবে না।’ কৃষকের পাশাপাশি আলু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এখন দিশাহারা বলে জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। তাই আলু সমস্যার সমাধানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেশন ব্যবস্থায় আলু যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রি করতে হলে আলাদা অর্থ বরাদ্দ লাগবে। টিসিবির বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আলু বিক্রি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসেনি।
সম্প্রতি কৃষি উপদেষ্টাও গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিতে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) মাধ্যমে আলু বিক্রির কথা ভাবছে সরকার।
ওএমএস কার্যক্রমে আলু বিক্রির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওএমএস কার্যক্রমে চাল সরবরাহ করে থাকি। এখন আলু বিক্রি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলু কম দামে বিক্রি করলে দাম আরও কমে যেতে পারে। আর সরকার তো ওএমএস থেকে আলু কিনতে বাধ্য করতে পারবে না। তাতে আবার সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি]