ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিচেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষার্থীও আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের থানায় হস্তান্তর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আটক তিনজন হলেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ওবায়েদ হাসান এবং ‘প্রক্সির চুক্তিকারী’ পনির উদ্দিন খান। তাঁদের মধ্যে সালমানের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরের চরপাড়া, ওবায়েদের বাড়ি ত্রিশাল এবং পনির উদ্দিনের বাড়ি মুক্তাগাছা এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, চক্রটি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সির (ভর্তি–ইচ্ছুকের পরীক্ষা দেন আরেকজন) মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এইচ এম কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ জন আগেই ভর্তি হয়েছেন। বাকি একজন প্রার্থী (ওবায়েদ হাসান) ভর্তির শেষ দিন গতকাল দুপুরের পর উপস্থিত হন। এ সময় ভর্তির কাজে নিয়োজিত শিক্ষকেরা নিয়মমাফিক যাচাই-বাছাই শুরু করেন। তখন দেখা যায়, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর ও লেখার স্টাইল মিলছে না। এ নিয়ে যাচাই–বাছাই শুরু করলে সামনে আসে চক্রটি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভর্তির সময় স্বাক্ষরে অসংগতি ও প্রবেশপত্রের সঙ্গে চেহারার অমিল দেখে ওবায়েদকে প্রশ্ন করা হলে অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে শুরু করেন। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং মেধা তালিকায় ৭৬তম অবস্থানে উত্তীর্ণ হোন। তাঁকে যাচাই করতে বিষয়ভিত্তিক সাধারণ প্রশ্ন করা হলেও উত্তর দিতে পারছিলেন না। তখন ওবায়েদের সঙ্গে আসা পনির উদ্দিনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পনির নিজেকে ওবায়েদের ভাই পরিচয় দিয়ে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। পরে ওবায়েদের মুঠোফোন নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ পনিরের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি জানা যায়। সেখানে কীভাবে স্বাক্ষর করা হবে এবং ভর্তির লেনদেনের বিষয়ে আলাপ করছিলেন তাঁরা। ভর্তি সম্পন্ন হলে পনিরকে এক লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। একপর্যায়ে পনিরের মুঠোফোনে সালমান ফারদিনের কল আসে। পরে তাঁকেও ডাকা হয়। সালমানের মুঠোফোনটি জব্দ করলে সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওবায়েদ জানান, তিনি নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেননি। এক লাখ টাকার বিনিময়ে চক্রটির এক সদস্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। পনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এভাবে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন ওবায়েদের বাবা।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান বলেন, এ চক্রের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়েই আরেকজন ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গেছেন। তাঁর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ওই তিনজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভর্তি জালিয়াতি চক্রের তৎপরতা সামনে আসায় ঘটনাটি তদন্তে পাঁচ-ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিটি প্রকাশ করা হবে।

ওই তিনজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আহাম্মদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। মামলা শেষে আজ শুক্রবার তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় ভর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

নান্দাইলের ইউএনও’র দুর্নীতি তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সদ্য সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তারের বিরুদ্ধে ওঠা ৩ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল নতুন বাজার এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন তারা। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে ৫ কোল পরিবারকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন

বিএলআরআই নিয়োগবিধিতে বৈষম্যের অভিযোগে গবিতে মানববন্ধন

উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাসহুদ পারভেজসহ অন্যান্য ইউপি সদস্যরা গত ২৮ মার্চ ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে সারমিনা সাত্তারের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করেন। 

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীনও সারমিনা সাত্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। যা নিয়ে তখন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে সারমিনা সাত্তার যোগ দেন। এরপর থেকে সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ইজারা, পাথর কেলেঙ্কারি, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ, নামজারিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়, ভুয়া প্রকল্প থেকে টাকা উত্তোলনসহ নানা দুর্নীতি করেছেন।

বক্তব্যে ইউপি সদস্য মাসহুদ পারভেজ বলেন, ‘‘সারমিনা সাত্তার শুধু অনিয়ম-দুর্নীতিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, ইউপি সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণসহ মিথ্যা মামলার হুমকিও দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি।’’  

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন খারুয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুস কদ্দুস মুন্সি, বাচ্চু মিয়া, শেরপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহজাহান প্রমুখ। 

এ বিষয়ে জানতে সারমিনা সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/মিলন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নরসিংদীতে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার আরও ৩
  • ময়মনসিংহে সহকর্মীকে হত্যার দায়ে পুলিশ দম্পতির ফাঁসির আদেশ
  • ময়মনসিংহে সাবেক পুলিশ ও তার স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড
  • জাতীয় নির্বাচন: ৯১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা গণসংহতি আন্দোলনের
  • ফতুল্লায় কথিত বিএনপি নেতার হামলায় সাংবাদিকসহ আহত ৩
  • যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর পুলিশে সোপর্দ
  • নান্দাইলের ইউএনও’র দুর্নীতি তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন
  • ময়মনসিংহ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ
  • ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রুমা গ্রেপ্তার
  • ময়মনসিংহে দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ