পাকিস্তানে ভূপাতিত হেরোপ ড্রোন সম্পর্কে যা জানা গেল
Published: 9th, May 2025 GMT
চলমান যুদ্ধাবস্থার মধ্যে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার ভোরে পাকিস্তানে ছোড়া ভারতের অন্তত ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এসব ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের বেশ কয়েকটি ছবিও গণমাধ্যমে এসেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, ভারতের সামরিক বাহিনীর ছোড়া বিস্ফোরকবাহী এসব ড্রোন ইসরায়েলের উৎপাদিত, যেগুলো ‘হেরোপ ড্রোন’ নামে পরিচিত।
টিআরটি গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ইসরায়েল থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কেনে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং যুদ্ধ ও নজরদারি ড্রোন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সমরাস্ত্র চুক্তিতেই হেরোপ ড্রোনের বড় আকারের চালান পেয়েছে ভারত।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইএআই নির্মিত ‘হার্পি’ নামের একটি ড্রোনের উন্নত সংস্করণ ‘হেরোপ’। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যবর্তী প্রযুক্তি ‘লোইটারিং মিউনিশন সিস্টেম’ ব্যবহার করায় একই সঙ্গে এ ড্রোন নজরদারি ও হামলা চালাতে সক্ষম। নজরদারি ও আঘাত করায় এটি খুবই কার্যকরী বলেও জানা গেছে ড্রোনটি ব্যবহার করা দেশগুলোর দেওয়া তথ্যে।
হেরোপ ড্রোনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আকাশে দীর্ঘ সময় ঘুরে ঘুরে নিজ থেকেই শত্রুর অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। উন্নত ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর থাকায় রাডার স্টেশন, কমান্ড পোস্ট, ট্যাঙ্ক, ডিফেন্স সিস্টেম বা নজরদারি ঘাঁটি সহজেই শনাক্ত করা যায় এর মাধ্যমে। শনাক্তের পর প্রয়োজনে নিজ থেকেই ড্রোনটি শত্রু লক্ষ্যে গিয়ে আঘাত হানতে ও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
একটানা প্রায় ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে ঘুরে বেড়াতে পারে হেরোপ। লক্ষ্য খুঁজে নিয়ে যে কোনো দিক থেকে আঘাতও হানতে পারে। এটি আগে থেকে কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছাড়াই নিজস্ব সেন্সরের মাধ্যমে শত্রু চিহ্নিত করতে পারে। এমনকি জিপিএস ব্লক বা জ্যামিংয়ের সময়ও কাজ করতে পারে এ ড্রোন।
২০ থেকে ২৩ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হামলা চালাতে পারে হেরোপ। মূলত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করলেও এটিকে অপারেটরের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রাখা হয়েছে। কোনো হামলার জন্য কমান্ড নির্ধারণ করে পাঠানোর পর, আক্রমণ বাতিল করে মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে এনে পুনরায় অন্য হামলায় ব্যবহার করা যায় হেরোপ ড্রোন।
ড্রোনটিতে আধুনিক ইলেকট্রো-অপটিক্যাল, ইনফ্রারেড ও রাডার চিহ্নিতকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আছে রঙিন ক্যামেরাও। ফলে বিভিন্ন আবহাওয়াতেও এটি নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে। ভূমি কিংবা ভাসমান যে কোনো প্ল্যাটফর্মে ক্যানিস্টার থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য হওয়ায় দ্রুত মোতায়েন করা যায় হেরোপ ড্রোন। নিজেদের দাবি অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষেই ২৫টি হেরোপ ড্রোন পাকিস্তান ভূপাতিত করে থাকলে, সেটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশটির আকাশযুদ্ধের বড় সাফল্য হিসেবেই
দেখা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষ পণ স ত র ব যবহ র কর নজরদ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসব শেষ করার জন্য পুলিশ, র্যাব, এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন:
ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা
বুড়িগঙ্গায় চলছে প্রতিমা বিসর্জন
পুলিশ জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা এবং বিসর্জন স্থানসমূহে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। শুধু ঢাকাতেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য এবং অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৯৪টি টহল টিম সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।
বিশেষ নজরদারি
প্রতিমা বিসর্জনের মূল ঘাটগুলো, যেমন—পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাট এলাকায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ঘাটকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত
যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত, বোম ডিসপোজালও কে-নাইন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নৌ-নিরাপত্তা:
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তিদের নৌকায় উঠতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। বিসর্জনস্থলে প্রশিক্ষিত ডাইভার (ডুবুরি দল) প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
শোভাযাত্রার পথ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূজা কমিটির প্রতি নির্দেশনা:
পূজামণ্ডপগুলোতে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মণ্ডপে ব্যাগ, থলে বা পোঁটলা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর তৎপরতায় প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এমআর/এসবি